তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস

আহম্মদ হুসাইন : হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করেছিলেন, হে বারে ইলাহী! আমাকে একজন নেক সন্তান হাদিয়া করুন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ইবরাহীম খলীল আলাইহিস সালাম উনাকে একজন ধৈর্যশীল সন্তান অর্থাৎ হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া করার সুসংবাদ প্রদান করেন।

অতঃপর হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ৮৬ বছর বয়স মুবারকে হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি জমীনে তাশরীফ মুবারক আনলেন। যখন তিনি হাঁটাহাঁটির বয়সে উপনীত হলেন, সেইসময় যিলহজ্জ শরীফ উনার ৭, ৮, ৯ তারিখ রাতে হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি স্বপ্ন মুবারকে দেখলেন যে, তিনি উনার প্রিয় বস্তু কুরবানী করছেন। স্বপ্ন দেখার পর তিনদিনই তিনি ১০০ টি করে পশু কুরবানী করেন। এরপর তিনি আবার স্বপ্ন মুবারকে দেখলেন যে, তিনি উনার সন্তান হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কুরবানী করছেন। এই বিষয়টি তিনি হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে মিনায় নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘হে আমার প্রিয় সন্তান! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে কুরবানী করছি। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?’ হযরত ইসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি জবাব দেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তা বাস্তবায়িত করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ সুবহানাল্লাহ!

যখন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারকে ছুরি চালালেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত জাহির হল! যতই ছুরি চালানো হোক হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটল না। সুবহানাল্লাহ! হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ছুরির ধার পরীক্ষা করার জন্য ছুরিটি একটি পাথরে আঘাত করলেন। সাথে সাথে পাথরটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলো। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে ছুরি! তুমি পাথরকে দ্বিখণ্ডিত করে দিলে অথচ হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারক কাটতে পারছো না? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ছুরির যবান খুলে দেন। ছুরি বললো, ‘হে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি আমাকে একবার কাটার জন্য আদেশ মুবারক করছেন আর আমার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সত্তরবার কাটতে নিষেধ মুবারক করছেন। সুবহানাল্লাহ!

এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বেহেশত থেকে একটি দুম্বা এনে হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট দেয়ার নির্দেশ মুবারক দিলেন। এই দুম্বাটি ছিল হযরত হাবীল আলাইহিস সালাম তিনি যে দুম্বাটি কুরবানী করেছিলেন সেই দুম্বা; যা চল্লিশটি বসন্তকাল বেহেশতে কাটিয়েছে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি দুম্বা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন দেখলেন, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তখনও হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার গলা মুবারকে ছুরি চালাচ্ছেন। এটা দেখে তিনি আশ্চর্যান্বিত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার বড়ত্ব, মহত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বলে উঠলেন, ‘আল্লাহ আকবার, আল্লাহু আকবার।’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার আদেশ মুবারক সমস্ত কিছুর উপরে। এজন্যই একজন পিতার পক্ষে সম্ভব হয়েছে উনার প্রাণের চেয়ে প্রিয় সন্তানকে কুরবানী করে ফেলা। সুবহানআল্লাহ!

তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম,হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সরিয়ে ছুরির নিচে দুম্বাটি দিয়ে দিলেন। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম বিষয়টি বুঝতে পেরে মহান আল্লাহ পাক উনার একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে বললেন, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার’।অর্থাৎ, মহান আল্লাহ্‌ পাক তিনিই আমাদের খলিক্ব, মালিক, রব। উনার আদেশ মুবারক সমস্ত কিছুর উপরে। এজন্যই আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে আমার সন্তানকে কুরবানী করে ফেলা। সুবহানআল্লাহ!

হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও যখন বুঝতে পারলেন যে, তিনি যবেহ না হয়ে উনার পরিবর্তে একটি দুম্বা যবেহ হচ্ছে, তখন তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করে বললেন, ‘আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ পাক উনার আদেশ মুবারক সমস্ত কিছুর উপরে। উনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। এজন্যই আমার পিতার পক্ষে সম্ভব হয়েছে আমাকে কুরবানী করা এবং আমার পক্ষেও সম্ভব হয়েছে কুরবানী হয়ে যাওয়া। সুবহানআল্লাহ!

সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এটাই তাকবীরে তাশরীক।’ সুবহানাল্লাহ!