ঢাবির হল খুলছে আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

ঢাবির হল খুলছে আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল। মঙ্গলবার (০৫ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে থেকে নিজ নিজ হলে উঠতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হলে শুধু স্নাতক শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের আবাসিক শিক্ষার্থীরা উঠতে পারছেন।

শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন করেছিল হল প্রশাসন। ১৮ মাস পর হলে উঠতে পেরে উচ্ছাস দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় একে অপরের খোঁজ খবর নিচ্ছে। এসময় শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে হল গেটে প্রাধ্যক্ষ ও হলের হাউজটিউদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তারা শিক্ষার্থীদের ফুল, মিস্টি ও চকলেট দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ বলেন, ‘সকাল সকাল হলে উঠতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে। হলের স্যাররাও অনেক আন্তরিক। দীর্ঘদিন পর হলে আসলাম। কতটা আনন্দ লাগছে বুঝাতে পারবো না।’ স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী শোভন হোসেন বলেন, ‘অসাধারণ অনুভুতি। আমরা দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এখানে এসে মনে হচ্ছে আমরা পুনরায় জীবিত হলাম। আমাদের জীবনের যে কলরব ছিলো তা আবার ফিরে পেয়েছি।’

এদিকে, শিক্ষার্থীদের বরণ করতে পেরে বেশ আনন্দিত হলের প্রাধ্যক্ষ ও হলের আবাসিক শিক্ষকরা। বিষয়টি নিয়ে, স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই হল খুলে দেওয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে পেরে আমরা বেশ আনন্দিত। আমাদের বিশ্বাস শিক্ষার্থীদের কলরবে হল আবার সরব হয়ে উঠবে ক্যাম্পাস।

এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাবি প্রশাসন জানায়, পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু স্নাতক শেষ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের যে সকল আবাসিক শিক্ষার্থী অন্ততঃ ‘কোভিড-১৯’-এর প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে, তারা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে টিকা গ্রহণের কার্ড/সনদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে আগামী ৫ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে থেকে নিজ নিজ হলে উঠতে পারবেন।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিজয় একাত্তর হল ও সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল পরিদর্শন করবেন।

এদিকে, দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাস খোলে দেওয়ায় ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতি আবার সরব হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আগমনে ক্যাম্পাস ইতোমধ্যে মুখরিত হয়েছে। আমরা আশাবাদি, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল উন্মুক্ত করে দিবে।’ দুই একদিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সশরীরে ক্লাস শুরুর বিষয়টি ঘোষণা দিবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যেহেতু করোনা এখনও রয়েছে তাই আমরা স্বাভাবিক রাজনীতির মধ্যে দিয়ে যাবো। ক্যাম্পাস স্বাভাবিকভাবে মুখরিত হবে, প্রাণের উচ্ছ্বাস থাকবে। তবে, আমরা সকল ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের আহ্বান করবো স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রাখতে।’

এরইমধ্যে অনুমতি ব্যতীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি আবাসিক হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তবে হল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত যারা হলে প্রবেশ এবং অবস্থান করছে, তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এই মর্মে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে জবাব চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঢাবি প্রশাসন আবাসিক হল ব্যবহারে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো-

কক্ষের বাইরে গেলে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক সঠিক নিয়মে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে এক মিটার (তিন ফুট) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হব। কোনো কক্ষের মেঝেতে শোয়া যাবে না, এক বিছানায় একাধিক ব্যক্তি শোয়া যাবে না। কেবলমাত্র আবাসিক ও দ্বৈতাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবে। কোনো বহিরাগত বা বাইরে থেকে আসা কাউকে কক্ষে অবস্থান করতে দেওয়া যাবে না।

শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কক্ষ এবং কক্ষের প্রয়োজনীয় আশপাশ সবসময় নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে হল প্রশাসন সহযোগিতা প্রদান করবে।

হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, রিডিংরুম, অডিটোরিয়াম, টিভিরুম, অতিথিকক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ ও উপাসনালয়ে ভিড় করা যাবে না। এসব স্থানে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুসরণ এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ডাইনিংয়ে পালাক্রমে খাবার খেতে হবে।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অতিথিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। বেড়াতে ও ঘুরতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সভা-সমাবেশ, রেস্তোরাঁ, পার্টি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।