ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ঢিল ছোড়া পার্টির আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল ফটকের পাশে চা বিক্রি করেন আয়নাল হোসেন বাবু। তিনি বলেন, নানা কৌশলে প্রায় প্রতি রাতেই গাড়ি থামিয়ে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা লুটপাটের ঘটনা ঘটাচ্ছে। পুলিশ টহলে থাকলেও তাদের কাছে অসহায়। মোবাইল ফোন, গহনা নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেয়। ওইসব ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের আটক করতে পুলিশও নানা কৌশল অবলম্বন করে।
আরিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা নানান কৌশলে গাড়ি থামায়। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মানুষের কাছ থেকে মোবাইল ফোন মূল্যবান জিনিসপত্রসহ ও নগদ টাকা লুট করে নেয়। অনেক সময় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। কিন্তু মান-সম্মানের ভয়ে ভিকটিম কখনো অভিযোগ করেন না। কিন্তু তাদের ধরতে পারছেন না পুলিশ। এর ফলে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের ঢিল ছোড়া বন্ধ হচ্ছে না।
এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মাস্টারবাড়ি ও রাজেন্দ্রপুর এলাকা গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানার আওতাধীন। সন্ধ্যা হলেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওই অংশটুকু হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর এবং ভয়ানক। প্রতি রাতেই ওৎপেতে থাকে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা। মহাসড়কটির ওই অংশের দুই পাশেই গজারি বন এবং সড়ক ঘেঁষেই ঝোপঝাড় জঙ্গলে ঘেরা। সন্ধার পরে ওই জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে ডাকাত এবং ছিনতাইকারীরা। অন্ধকার নেমে এলেই বিভিন্ন গাড়ির নিচে লোহার পাইপ অথবা রড দিয়ে ঢিল ছোড়ে।
এ সময় গাড়ির চালক গাড়ি থেকে কিছু খুলে পড়ে গেছে এমন মনে করে গাড়ি থামালে পড়ে চরম বিপদে। গাড়িটি থামানোর সঙ্গে সঙ্গেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা। পরে চালক এবং যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণের গহনা ও নগদ টাকাসহ মূল্যবান সব লুটপাট করে নিয়ে পালিয়ে যায় জঙ্গলে। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মাস্টারবাড়ি ও রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে।
এছাড়াও ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা মহাসড়কে ফেলে রাখে গাড়ির হাইড্রোলিক জগ। কোন চালক ওই হাইড্রোলিক জগ নেওয়ার লোভ করলেই একই কায়দায় তাদেরও ঘিরে ফেলে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা। অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামাতে সংকেত দেয়। তাদের সংকেত দেখে গাড়ি থামালে এমন বিপদে পড়ে গাড়ির চালক এবং যাত্রীরা। অনেক যানবাহনের চালকদের এমন ঘটনা জানা রয়েছে। তাই মহাসড়কের ওই অংশে সন্ধ্যার পর ওইসব চালক গাড়ি থামায় না। যারা বিষয়টি না জানেন তারাই পড়ছেন এমন বিপদে। পুলিশ মহাসড়কটিতে টহল দেন দায়সারা। মহাসড়কের এক পাশে পুলিশ থাকলেও অন্য পাশ দিয়ে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা সব লুটপাট করে নিয়ে যায়। পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলা রয়েছে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর। ডাকাতি ও ছিনতাই ছাড়াও ওই মহাসড়কে অনেক অবৈধ কর্মকা- হচ্ছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সালনা থেকে মাস্টার বাড়ি এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের দুইপাশ অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে চোরাই তেলের দোকান। এসব দোকানে বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা গাড়ি মালিকদের না জানিয়ে চুরি করে গাড়ি থেকে তেল বিক্রি করে। আর ওইসব তেল দোকান ব্যবসায়ীরা দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানা পুলিশ বিষয়গুলো জানালেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ওইসব দোকানে রাতভর চলে নেশার আড্ডাও। সন্ধ্যার পর মহাসড়কটির ওই অংশে ইজিবাইক, রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজি খুব কমই চলাচল করে। যেসব যানবাহনের চালকরা এসব ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা না জানেন তারাই চলাচল করে সন্ধ্যার পর। তবে মহাসড়কের দুইপাশে ঝোপঝাড় জঙ্গল কেটে দিলে কিছুটা হলেও উপকৃত হতো সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও প্রায়ই শোনা যায়, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের আশপাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে পড়ে থাকে মানুষের মরদেহ। এসব খুন হয় ঢিল ছোড়া পার্টি ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের হাতেই। ছিনতাই হয়ে যায় অটোরিকশা-ইজিবাইকও। পুলিশের সদস্যরা মহাসড়কের এই অংশটিতে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ গাড়ি থামিয়ে দোকানে বসে চা খায় অন্যদিকে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা মানুষের সব লুট করে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি- অপরাধ) জাকির হাসান বলেন, চোরাই তেলের দোকান আগেও উচ্ছেদ করা হয়েছিল। মহাসড়কের দুই পাশে জঙ্গল পরিষ্কারের ব্যবস্থা এবং ঢিল ছোড়া পার্টির বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।