জোর করে ভাই হত্যার স্বীকারোক্তি : আইও নয়ন কুমারকে তলব

জোর করে ভাই হত্যার স্বীকারোক্তি : আইও নয়ন কুমারকে তলব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ছোট ভাইকে হত্যার মামলায় ১২ বছর বয়সী কিশোরের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়ের ঘটনায় মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) নয়ন কুমারকে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

তাকে শিশু মো. সৌরব মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির উদ্যোগ সংক্রান্ত লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত।

একইসঙ্গে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনসুর আলীকে সশরীরে মামলার নথি নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। তাদেরকে আগামী ৩ আগস্ট আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ওইদিন মামলার শুনানির
দিন ধার্য করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ড. মো. বশির উল্লাহ। অন্যদিকে, ভার্চুয়াল আদালতে শিশুর মা-বাবা ও শিশুটি যুক্ত ছিলেন।

রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আগামী ৩ আগস্ট তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন কুমারকে (বর্তমান পুলিশ পরিদর্শক, সিআইডি, নাটোর) সশরীরে হাজির হয়ে শিশু মো. সৌরব মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির উদ্যোগ সংক্রান্ত লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান এবং বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনসুর আলীকে (পিবিআই, বগুড়া) সশরীরে মামলার নথি নিয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘পুলিশের ভুলে ১২ বছরের শিশুর ঘাড়ে ছোট ভাই হত্যার দায়’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে কয়েকদিন আগে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদ সংযুক্ত করে হাইকোর্টে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির।

গত ২১ জুন শুনানি হয়। ওইদিন শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘একজন বাবা তার এক সন্তানকে হারালেন, ওই সন্তান হত্যার অভিযোগে বড় ছেলে, যার বয়স ১২ বছর সে হয় আসামি। উল্টো বাড়িঘরও ছাড়তে হয়েছে সন্তানের বাবা-মাকে। এটি একটি অমানবিক ঘটনা।’

শুনানিতে আইনজীবী শিশির বলেন, ‘১২ বছরের একটি শিশুকে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে নেয়া হলো। শিশু আদালতের সামনে আসলো অথচ আইন থাকার পরও কোনো পদক্ষেপ নেই। এ কারণে বিষয়টি দেখভালের জন্য আমরা আপনাদের কাছে এসেছি। যাতে ঘটনার সঠিক তদন্ত হয়ে সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন হয়।’

ওইদিন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ আজ (২৯ জুন) পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আবারো শুনানি ও আদেশ দেয়া হয়।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে ছোট ভাইকে হত্যার দায় নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে কিশোর বড় ভাইকে। ওই বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়ার কাটাখালি গ্রামের একটি পাটক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় মহিদুল ইসলামের ছেলে সোহাগের মরদেহ।

এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় বড় ভাইকে। জোর করে হত্যার স্বীকারোক্তিও নেয়া হয়। এ মামলায় এখন বাড়িছাড়া পুরো পরিবার।

এদিকে, সন্তান হত্যা এবং আরেক সন্তানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে কোথাও সহায়তা না পেয়ে দিশাহারা পরিবারটি।