জৈনপুরি পীরের ভাইয়ের ‘আইএস সন্ত্রাসী’ আদলের ছবি নিয়ে তোলপাড়!

বহুল আলোচিত সমালোচিত জৈনপুরী পরী এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী ওরফে হেলিকপ্টার হুজুরের ছোট ভাই নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীকে নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপাক তোলপাড়। ইসলামিক স্টেট (আইএস) সন্ত্রাসীদের আদলে অস্ত্রসহ তোলা তার একটি ছবি প্রকাশের পর সর্বত্র এখন তাকে নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা।

অনেকেই বলাবলি করছে, নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী আইএস সংশ্লিষ্ট কেউ হতে পারেন। কেননা, এ যাবৎকাল আইএস জঙ্গিদের যতগুলো ছবি প্রকাশ পেয়েছে প্রায় সবগুলোই নেয়ামত উল্লাহ আব্বসীর আদলে তোলা ছিলো। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনেও চলছে ব্যাপক তোলপাড়।

সূত্র মতে, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে এইচএন এপারেলস নামক একটি পোশাক কারখানায় লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত এক দেড়শ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। এ ঘটনার পরই আলোচিত ওই হেলিকপ্টার হুজুরের ছোট ভাইয়ের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। যে ছবিতে তার পাশে একটি বড় আগ্নেয়াস্ত্র রাখা এবং হাতে একটি রিভলবার এবং তার বেশভূষা আইএস জঙ্গিদের মতো। এমন ছবি প্রকাশের পরই সর্বত্র শুরু হয় তোলপাড়। এমন ছবি দেখে একবাক্যে সকলেই বলছে ‘এ ছবিতো আইএস জঙ্গিদের মত’! তাহলে কী নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসী আইএস সংশ্লিষ্ট কেউ?

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মীর শাহেন শাহ পারভেজও ছবিটি নিয়ে ঘোর সন্দিহান। তিনি বলেন, এই ছবিটি দেখে আমরাও অবাক হচ্ছি। ছবিটি কোথা থেকে পেল, কীভাবে প্রকাশ পেল। এবং এটি যদি অর্জিনাল ছবি হয়ে থাকে তাহলে এ নিয়ে সন্দেহ উঠতেই পারে। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে জানার চেষ্টা করছি।

এদিকে এইচ এন এপারেলস এর কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের দায়ের করা মামলায় এখনও পর্যন্ত নেয়ামত উল্লাহর চারজন সহযোগিকে আটক করেছে পুলিশ। পলাতক রয়েছেন নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীসহ তার অন্যান্য সহযোগিরা। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি।

দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় জৈনপুরী পীর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর ছোট ভাই নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর নেতৃত্বে আমির উদ্দিন, মঞ্জুর রহমান, হাসানুর রহমান, ইমরান হোসেন, ফয়সাল, কাউসার, চঞ্চল, রাব্বি, শিবলু, রোমান সহ অজ্ঞাত ১৫০ জন দলবদ্ধভাবে লাঠি, লোহার রড, বল্লম, শাবল, হ্যামার নিয়ে এইচএন এপারেলস লিমিটেডের টিনশেড বিল্ডিংয়ের প্রিন্ট ফ্যাক্টরীর দেয়াল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে কারখানার ১০ লাখ টাকা ক্ষতি সাধন ছাড়াও কারখানার অভ্যন্তরে থাকা প্রিন্টিং কেমিক্যাল, প্রিন্টিং মেশিন, কিউরিং মেশিন, কার্টুন রোলসহ ১০ লাখ টাকা মূল্যেও সামগ্রী লুটে নিয়ে যায়।

এসময় হামলাকারীরা ফ্যাক্টরী ছেড়ে না গেলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমির উদ্দিন, মঞ্জুর রহমান, হাসানুর রহমান, ইমরান হোসেনকে হাতেনাতে আটক করে।

পুলিশ জানায়, নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর নেতৃত্বে কারখানাটিতে হামলা চালানোর খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসলে তাদের উপরেও চড়াও হয় আব্বাসীর লোকজন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নেয়ামত উল্লাহ আব্বাসীর ৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করে।

উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রুয়ারি (২০১৯) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের নবীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় দু’টি লঞ্চে নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক চলাকালে জৈনপুরী হুজুর এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর বড় ভাই সৈয়দ ইমদাদ উল্লাহ আব্বাসী সহ জামায়াত ও শিবিরের ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এছাড়াও শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) শহরে এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর সভাপতিত্বে সুন্নী সম্মেলনের পূর্বে পুলিশের সাথে তার ভক্তদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। শুধু তাই নয়, নানা সময়ে জৈনপুরী এই পীর নানা ধরণের বিতর্কের জন্মও দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে সরকারি জমি দখলেরও।

শুধু তাই নয়, হেলিকপ্টারে করে এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর চলাফেরার বিষয়টিও দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচিত। এ নিয়ে নানা জনের নানা মতও শোনা যায়। এই শান শাওকতের নেপথ্যে কী এমন কারণ রয়েছে তা নিয়েও অনেকের মাঝে প্রশ্ন রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীরা বংশগত ভাবে পাকিস্তানি। চলাফেরাও পাকিস্তানিদের মতো। এলাকায় প্রকাশ্যেই বিপুল পরিমাণের অস্ত্র তারা ব্যবহার করে থাকে। তাই অনেকেরই ধারণা, পাকিস্তানি কোনো উগ্রপন্থীদের সাথে তাদের কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে।