জেনে নিন বজ্রপাত থেকে সতর্ক থাকার ১২টি উপায়

৭০০ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে বজ্রপাত ব্রাজিলে

নিউজ নাইন২৪, ডেস্ক: ভূমিকম্পের যেমন পূর্বাভাস দেয়া যায়না, বজ্রপাতও তদ্রুপ। আর এই বজ্রপাতের শিকার হলে নির্ঘাত মৃত্যু। গত বৃহস্পতিবার (১২ মে) ও গতকাল শুক্রবার (১৩) দেশের ২৩ জেলায় বজ্রপাতে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিকেরও বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিহতদের অধিকাংশই বজ্রপাতের শিকার হয়েছেন অসতর্কতার কারণে। তাই বজ্রপাত থেকে সতর্ক থাকার উপায় সকলেরই জানা থাকা আবশ্যক। এখানে ১২টি সতর্কতার বিষয়ে আলোকপাত করা হলো-

এক. খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না: 
ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। ক্ষেত-খামার, বড় মাঠ, বাড়ির ছাদ কিংবা খোলা আকাশের নিচে থাকা অবস্থায় আকাশে কালো জমাটবাধা মেঘ বা বজ্রপাতের সম্ভবনা দেখলে দ্রুত সরে পড়ুন। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নিতে পারলে।

দুই. গাছের নিচে থাকা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকুন
কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেবেন না। খোলা স্থানে বিচ্ছিন্ন একটি যাত্রী ছাউনি, বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে।

তিন. খোলা জানালা থেকে দূরে থাকুন
বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন।

চার. ধাতব বস্তু স্পর্শ করবেন না
বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, মেটাল পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করবেন না। বজ্রপাতের সময় এগুলো স্পর্শ করেও বহু মানুষ আহত হয়।

পাঁচ. বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র থেকে সাবধান
বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরবেন না। বজ্রপাতের আভাষ পেলে আগেই এগুলোর প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করুন। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখুন।

ছয়. পানিতে থাকা যাবেনা
বজ্রপাতের সময় আপনি যদি ছোট কোনো পুকুরে সাঁতার কাটেন বা পানিবদ্ধ স্থানে থাকেন তাহলে সেখান থেকে সরে পড়ুন। ওই পানির মধ্যে বজ্রপাত পড়লে পুরো পানিই বিদ্যুৎ হয়ে যাবে। কেননা, পানি খুব ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী।

সাত. পরস্পর দূরে থাকুন
কয়েকজন মিলে খোলা কোনো স্থানে থাকাকালীন যদি বজ্রপাত শুরু হয় তাহলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।

আট. নিচু হয়ে বসুন
যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসুন। চোখ বন্ধ রাখুন। কিন্তু মাটিয়ে শুয়ে পড়বেন না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

নয়. বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ জানুন
আপনার উপরে বা আশপাশে বজ্রপাত হওয়ার আগের মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে দ্রুত বজ্রপাত হওয়ার প্রস্তুতি নিন।

দশ. রবারের বুট পরুন
বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।

এগার. বাড়ি সুরক্ষিত করুন
আপনার বাড়িকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করুন। তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

বারো. গাড়ির ভেতর থাকলে
বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। গাড়ির কাচেও হাত দেবেন না।

মনে রাখতে হবে, বজ্রপাত একরকম বিদ্যুৎবর্ষণ। তাই কেউ বজ্রপাতে কেউ আহত হলে তাকে বিদ্যুতে শক লাগা রোগীর মতোই দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। তবে বজ্রপাতের ফলে অনেকের হার্টের, কানের সমস্যাও দেখা দেয়।