জমি সংকট: আটকে আছে বহুল সম্ভাবনাময় তুলা চাষ

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় ফসল ‍তুলার উৎপাদন বাড়লেও, বাড়ছে না তুলা চাষের জমির পরিমাণ। গত ছয় বছরের ব্যবধানে তুলার উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ। কিন্তু জমির পরিমাণ বেড়েছে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ।

এছাড়া স্বল্প জনবল নিয়ে তুলার চাষ সম্প্রসারণেও গতি পাচ্ছে না তুলা উন্নয়ন বোর্ড। সব মিলিয়ে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তুলা চাষের সফলতা আটকে আছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জমি ও জনবল উভয় সংকটে তুলার চাষ ও উৎপাদন আশানুরূপভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। তবে উৎপাদনে সাড়া মিলেছে।

আর সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন জাতের সম্প্রসারণ, কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অপ্রচলিত জমিতে তুলার চাষ বৃদ্ধি করতে পারলেই তুলা চাষে সর্ব্বোচ্চ সফলতা পাওয়া যাবে।

তুলা চাষ ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। তবে তুলা চাষে অনেক চাষির মুখে হাসিও ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিশ্বের মধ্য তুলা আমদানি ও ব্যবহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অথচ দেশে তুলা চাষ ও উৎপাদনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ব্যাপক চাহিদা ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশে তুলা চাষ কমে যাচ্ছে। মোট চাহিদার মাত্র আড়াই ভাগ তুলা উৎপাদন হচ্ছে। এ কারণে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে দেশের বস্ত্রশিল্প। তুলা লাভজনক ফসল হওয়ার পরও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কৃষকদের মধ্যে চাষাবাদে তেমন আগ্রহ নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্বের তুলা আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। দেশে মোট ৩১১টির বেশি টেক্সটাইল মিল রয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে ২৩টি মিল পরিচালনা করা হয় এবং ব্যক্তি মালিকানায় ২৮৮টি মিল চলছে। এসব মিলে বার্ষিক প্রায় ৪১ লাখ বেল তুলার চাহিদা রয়েছে। দেশে তুলা উৎপাদন দিন দিন কমে যাওয়ায় চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

ভারত থেকে বাংলাদেশ তার চাহিদার প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ তুলা আমদানি করে। স¦াধীনতা যুদ্ধের পর থেকে আশির দশক পর্যন্ত কাঁচা তুলার অভাবে দেশের অনেক সুতার মিল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বস্ত্রশিল্প মারাত্মক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়। পরে বিদেশ থেকে তুলা আমদানি করে সুতা উৎপাদন করে বস্ত্রশিল্পকে টিকিয়ে রাখা হয়। সেই থেকে আন্তর্জাতিক তুলা ব্যবসায়ীরা এদেশের তুলার বাজার শক্ত করে ধরে বসেছে।

খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদনে সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। লাভ-ক্ষতির হিসাব কষে কৃষকরাও তুলা চাষের জমিতে অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

অন্যদিকে তামাক ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তামাক চাষীদের নানাভাবে সহায়তা দিলেও পোশাক মালিকরা তুলা উৎপাদনে চাষীদের ন্যূনতম সহায়তা দেয় না। ফলে দেশে বছরে ৪১ লাখ বেল (১ বেল=১৮২ কেজি) চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৭০ হাজার বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। আর তুলা আমদানির পেছনে বছরে খরচ হচ্ছে বছরে ১৯ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

দেশে টেক্সটাইল শিল্পের বিকাশ ঘটায় বিপুল পরিমাণ তুলার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে; কিন্তু সেই তুলনায় দেশে তুলা উৎপাদনের পরিমাণ নগণ্য। যশোর, সিলেট, আমানবাড়িয়া, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তুলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও জনবল ও জমি সঙ্কটে তা সম্ভব হচ্ছে না। আর গবেষণার অভাবে তুলা উন্নয়ন বোর্ডও ভালো কিছু করতে পারছে না। তুলা চাষীদেরকে সমন্বিতভাবে যে ব্যাপক সরকারি সহযোগিতা করা দরকার ও পৃষ্ঠপোষকতা করা দরকার তা সক্রিয়ভাবে হচ্ছে না।