চাকরির পেছনে না ছুটে পেয়ারা চাষে সাবলম্বী যুবক

চাকরির পেছনে না ছুটে পেয়ারা চাষে সাবলম্বী যুবক

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম আটিগ্রামের সালাউদ্দিন জিকু। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে চান। এজন্য তিনি বেশ কিছু টাকাও জমান। কিন্তু হঠাৎ মত পাল্টান তিনি। নিজে দেশে থেকেই কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করেন। বিদেশে না গিয়ে সে টাকা দিয়ে নিজের দুই বিঘা জমিতে করেন পেয়ারা বাগান।

তার এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ একেবারেই নতুন ছিল। ফলে সাফল্য পেতে দেরি হয়নি তার। এখন ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন পেয়ারা, মাল্টা, কমলা ও বিভিন্ন উন্নত জাতের কুলসহ বিশাল এক সমন্বিত ফলের বাগান। নানা ধরনের ফলের গাছ দিয়ে তিনি তার বাগান সাজিয়েছেন। বাণিজ্যিকভাবে বাগান করে তিনি সফল হওয়ায় তাকে দেখে অনেক তরুণই এখন ফলের বাগান করছেন। ফল বাগানে সাফল্য অর্জন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম আটিগ্রামের সালাউদ্দিন জিকু।

সালাউদ্দিন জিকু বলেন, শুরুটা সহজ ছিল না। আমার পাশে কেউ ছিল না। একে তো বেকার তার ওপর বয়সও কম। তাই বেশ ঝুঁকি নিতে হয়েছিল। আমার দাদা তখন বেঁচে ছিলেন। দাদাকে পেয়ারা চাষ করে যে লাভ করা যায়, সেটা বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখালাম। তখন দাদার অনুপ্রেরণায় আমি সিদ্ধান্ত নিই। পরে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করি পেয়ারা চাষ সম্পর্কে। দুই বিঘা জমিতে ‘থাই পেয়ারা-৩’ জাত দিয়ে চাষ শুরু করলেও এখন আমার বাগানের পরিধি ২০ বিঘা ছুঁয়েছে। ২০১৬ সালে প্রথম মাত্র ২ বিঘা জমিতে ‘থাই-৩’ জাতের পেয়ারা দিয়ে শুরু করি বাগান। আমি ছাড়াও এখন আমার বাগানে প্রতিদিন হচ্ছে চারজনের কর্মসংস্থান। তিনি বলেন, শুরুতে যে টাকা হাতে ছিল, তা দিয়ে শুধু চাষ আর চারা কেনার টাকাটা হয়েছিল। দুই বিঘা জমিতে আমি ৪০০ পেয়ারার চারা রোপণ করি। পরে বাগানের চারপাশ ঘেরার জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার করেছিলাম; বছরে তাকে ১০ হাজার টাকা বেশি দেওয়ার শর্তে। প্রথমবারেই বেশ ভালো পেয়ারা পাই। সে পেয়ারা বিক্রি করে সে-ই ৫০ হাজার টাকা শোধ করেও ভালো লাভ ছিল।

জিকু বলেন, পড়ালেখা শেষ করে আমি বিদেশে যাওয়ার জন্য কিছু টাকা জমিয়ে একজনের কাছে দিয়েছিলাম। কিন্তু বিদেশ যাওয়া হয়নি। তাই তিনি আমাকে আমার টাকা ফেরত দিয়ে দেন। তারপর চিন্তা করলাম, আর বিদেশ যাব না, দেশে থেকেই কিছু একটা করব। আমি সবাইকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, একজন বিদেশে গিয়ে কি করছে, আর আমি দেশের মাটি থেকে উৎপাদন করে কি করছি?