খ্রিস্টান জঙ্গি ভয়াবহ হামলায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ জন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে খ্রিস্টান সন্ত্রাসীর ভয়াবহ হামলায় নিহত বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে ৪৮ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদ এবং লিনউড এলাকায় আরেকটি মসজিদে ভয়ঙ্কর এ হামলা চালানো হয়। নিহতদের মধ্যে ৪১ জন আল-নূর মসজিদ এবং লিনউডের মসজিদে ৭ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাবস্থায় আরেকজন মারা যান।

হামলাকারী খ্রিস্টান এ সন্ত্রাসী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত। দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে সেও নিহত হয়।

মসজিদে নামাজ শুরুর পরপরই স্বয়ংক্রিয় বন্দুকের মাধ্যমে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়। চারদিকে লাশের পর লাশ পড়তে থাকে। রক্তে ভেসে যায় গোটা মসজিদ।

হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে আল-নূর মসজিদে হামলাকারী মাথায় ক্যামেরা রেখে ১৬ মিনিট এই নৃশংসতা ফেসবুক লাইভে প্রচার করেন।

হামলার পর হতাহতদের স্বজনেরা ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে ভিড় করছেন। তারা আহত প্রিয়জনের খবরের অপেক্ষায় আছেন। স্বজন হারানোর আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

হাসপাতালে অপেক্ষমাণ মাহাদী জওগাব। তিনি বন্ধুর সন্ধানে এসেছেন। সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা একটার পর একটা খারাপ খবরই পাচ্ছি। আমরা ধারণা করছি বন্ধুটি আর বেঁচে নেই।’

দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা এ ঘটনাকে দেশটির ইতিহাসে ‘অন্ধকার দিন’ দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা উল্লেখ করে জড়িতদের খুঁজে বের করার কথাও বলেছেন তিনি।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায়, এক বন্দুকধারী স্বয়ংক্রিয় বন্দুক থেকে নির্বিচার গুলি চালাচ্ছে। আর মসজিদে নামায পড়তে আসা লোকজন পাখির মতো ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ছেন। বন্দুকধারী নিজেই নৃশংসতার ঘটনা সরাসরি প্রচার করে।

আলজাজিরা বলছে, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এক বন্দুকধারী আল-নূর নামের ওই মসজিদে ঢুকে পড়ে এবং এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এ সময় মসজিদে ৩০০ জনের মতো লোক ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন।

দেশটির পুলিশ বলছে, তারা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে লোকজনকে ঘরে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছ।

পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সক্রিয় বন্দুকধারীর কারণে ক্রাইস্টচার্চে একটি গুরুতর ও নব্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শী লেন পেনেহা বলেছেন, তিনি দেখেছেন কালো পোশাক পড়া একজন লোক আল-নূর মসজিদে প্রবেশ করতে এবং তার পরই বেশ কিছু গুলির শব্দ শুনেছেন তিনি। ভয়ে লোকজনকে ছোটাছুটি করতেও দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।

জরুরি সার্ভিসের লোকজন আসার আগেই ওই বন্দুকধারী পালিয়ে যায় বলেও জানান তিনি।

পেনেহা বলেন, তিনি মসজিদে প্রবেশ করে সাহায্যের চেষ্টা করেন। ‘আমি সর্বত্র মৃত মানুষ দেখেছি’।

ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের ২০১৩ সালের এক গবেষণার বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মাত্র। তবে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলেও ওই গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে।