ক্ষমতায় টিকে থাকতেই মামলা ও গ্রেপ্তার :বিএনপি

 

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: আওয়ামী লীগ ‘রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ায়’ যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিরোধীদের দমনের অংশ হিসেবে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের কারাগারে ভরছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

বিতর্কিত সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার এক সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের মতো পুরনো রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে, তাদের কোনো রাজনীতি নেই। তারা একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে; নানা ঘটনা ঘটিয়ে সব বিরোধী পক্ষ, ভিন্নমত পোষণকারীদের যারা ভিন্নমতের কথা বলছেন, সোচ্চার হচ্ছে তাদের অধিকারের জন্য, যারা গণতন্ত্রের জন্য কথা বলছেন, বাক স্বাধীনতার জন্য কথা বলছেন, তাদের ধরে ধরে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

“এই সরকার মূলত ভিন্নমতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য- যেভাবে হোক ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে।” শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে বিএনপিপন্থী সাংবাদিককে শফিক রেহমানকে ধরে নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের চক্রান্তের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

এফবিআইয়ের এক এজেন্টের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগের বিচারের নথি থেকে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জয়কে অপহরণ ও তার শারীরিক ক্ষতি করা চক্রান্ত তথ্য বেরিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিচারের নথিতে দেখা যায়, ওই মামলায় দন্ডিত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক জাসাস নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার সে জয়ের বিষয়ে তথ্য জানতে ওই এজেন্টকে ঘুষ দেয়। তথ্য পাওয়া পর তা বাংলাদেশের এক সাংবাদিককেও সরবরাহ করে সে। ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার উদ্যোগে এই সভায় শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, প্রতারণা করে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত সময়ের মতো এখনও গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসন চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। “বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, শাস্তি দেয়া হচ্ছে, কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। আজকে যখন ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ৮৬টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়, তখন আমাদের সংবাদ মাধ্যমের মানুষরা বুঝতে পেরেছেন, যে এই সরকার মূলত ভিন্নমত পোষণের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।”

“কিন্তু আমাদের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে যখন তিন বছর কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়, এখন একটার পর একটা মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়, তখন গণমাধ্যমের অনেকে চুপ ছিলেন, প্রতিবাদ করেননি। এখন প্রতিবাদ করার সেই সুযোগটাও চলে গেছে,” বলেন ফখরুল। কারাবন্দি ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদের মুক্তিরও দাবি জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা এক অবরুদ্ধ ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি, চারিদিকে অস্বস্তিকর অবস্থা। যখন বিএনপি একটা সফল সম্মেলন করেছে, যখন বিএনপি গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করেছে, যখনই বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাঠ পর্যায় চলে গেছে, তখনই সরকার গণতন্ত্রের সবগুলো পথ ও জানালাগুলো বন্ধ করে দিয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ কায়েমম করছে। “দেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মুক্ত হাওয়ায় বিশ্বাস করে, মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাস করে।”

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিদিন তান্ডব চলছে। আমাদের প্রার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আর আমাদের নির্বাচন কমিশন একেবারে নির্বাক ও নিশ্চুপ বসে আছেন।” যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “দেশে আজ মানবাধিকার বলে কিছু নেই। কথায় কথায় গুম করে দেওয়া হয়। আজ বিরোধীরা ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।”

জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান বক্তব্য দেন।