ক্ষতিপূরণ পাবে শিশু জিহাদের পরিবার

jamin-online-dhaka-guide

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: রাজধানীর শাহজাহানপুর রেল কলোনির পরিত্যক্ত নলকূপের পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।

তবে ক্ষতিপূরণের অংক কতো হবে এবং কারা ওই অর্থ দেবে তা জানতে পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম।

একটি রিটের ওপর জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে খোলা থাকা কয়েকশ’ ফুট গভীর একটি নলকূপের পাইপে পড়ে যায় চার বছরের জিহাদ।

প্রায় ২৩ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে অনেক নিচে ক্যামেরা নামিয়েও ফায়ার সার্ভিস কোনো মানুষের ছবি না পাওয়ায় পাইপে জিহাদের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। ওই সন্দেহ রেখেই উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।

এর কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে উঠে আসে অচেতন জিহাদ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি বেঁচে নেই। ওই ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

ওই ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করলে দুই দিন পর চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করে, যাতে জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়।

জিহাদকে উদ্ধারে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আবদুল হালিম রিট আবেদনটি করেন।

ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতবছর ১৫ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট রুল জারি করে। জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।

এছাড়া সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হওয়ায় শিশুটির মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, রেলওয়ে ও সিটি করপোরেশনের অবহেলাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।

সারা দেশে অরক্ষিত ও উন্মুক্ত পাইপ, কূপ, টিউবওয়েল, স্যুয়ারেজ পাইপ, গর্ত এবং পানির ট্যাঙ্কের তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

স্বরাষ্ট্র ও রেলওয়ে সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, রেলওয়ের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইনেন্স), ওয়াসা চেয়ারম্যান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার ও শাজাহানপুর থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

ওই রুলের ওপর শুনানি শেষে একবছর পর বৃহস্পতিবার ক্ষতিপূরণের পক্ষে রায় দিল আদালত।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। আদালত প্রাঙ্গণে ছিলেন জিহাদের বাবা নাসির ফকির, মা খাদিজা আক্তার ও ছোট ভাই।

রায়ের পর ব্যারিস্টার আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, “শিশু জিহাদের মামলায় এক বছর আগে আদালত তিনটি বিষয়ে রুল দিয়েছিলেন, তা যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করেছেন। এর মাধ্যমে আদালত বলে দিলেন যে, জিহাদের মৃত্যুর জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষ দায়ী এবং বিশেষ করে সাংবিধানিক আইনে ক্ষতিপূরণ দিতে তারা বাধ্য। কিন্তু কত টাকা ক্ষতিপূরণ কে দেবে তা আদালত পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রকাশ করবেন।

“দ্বিতীয়ত আদালত একটি গাইডলাইন প্রকাশ করবেন, যে এ ধরনের অরক্ষিত পাইপে, সুড়ঙ্গে, গর্তে, স্যুয়ারেজ পাইপে যদি কোনো শিশু বা মানবপ্রাণী পড়ে মারা যায় এবং সেক্ষেত্রে যদি পাবলিক কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা যদি দেখা যায় সেক্ষেত্রে কী কী করণীয় থাকবে সে ব্যপারে একটি গাইডলাইন পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রকাশ করবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার হালিম বলেন, “ভারতে এটি শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। বাংলাদেশের ৪৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সাংবিধানিক আইনে কোনো মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণের রায় এল।”

জিহাদের মৃত্যুর পর তার বাবা নাসির ফকির শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন, যাতে ওই প্রকল্পের পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জেএসআর এর মালিক আব্দুস সালামকে আসামি করা হয়।

গতবছর ৭ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক আবু জাফর মামলায় অভিযোগপত্র দেন। তাতে দুই আসামির বিরুদ্ধে অপরাধজনক প্রাণনাশের অভিযোগ আনা হয়।

তবে ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ করে জিহাদের বাবা অভিযোগপত্র নিয়ে আপত্তি তুললে আদালত পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়।

বৃহস্পতিবার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়ে জিহাদের বাবা নাসির বলেন, “মহামান্য আদালত আমাকে যে রায় দেবে, আমি তাই মেনে নেব। এলাকার শক্তিশালী লোকেরা যাতে আমার ক্ষয়ক্ষতি না করতে পারে সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ।

“আমাকে অনেক ভাবে হুমকি-ধামকি দিতাছে। এমনকি পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের আছে অনুরোধ থাকবে, কেউ যাতে হুমকি-ধামকি না দিতে পারে।”

অনেক লোক মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জিহাদের মা খাদিজা আক্তার বলেন, “আমি আর কী চাইমু, চাইলে তো আমার সন্তানই চাইমু। সন্তান তো আর ফিরা পামু না; চাই সরকার, আদালত যেন সান্ত্বনা দেয়। এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে, তার জন্য আমি নিরাপত্তা চাই।”