ক্লিনফেল্টার সিন্ড্রোম

ক্লিনফেল্টার সিন্ড্রোম, টার্নারস সিন্ড্রোম (Turner’s syndrome)এর মতোই একটি জেনেটিক রোগ (genetic disease) তবে এই রোগে কেবলমাত্র একটি ছেলেশিশুই আক্রান্ত হয়।  এই রোগীদের দেহকোষে স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে ক্রোমোজমের (chromosome) সংখ্যা একটি বেশী থাকে। সোজা কথায় একজন স্বাভাবিক মানুষের দেহকোষে ক্রোমোজম থাকে ৪৬ টি (মহিলাদের 44+XX আর পুরুষের 44+ XY) আর এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিটির ক্রোমোজমের সংখ্যা  ৪৭ টি (44+XXY)। আর যেহেতু আক্রান্ত শিশুটির কোষে একটি Y ক্রোমজম থাকে সে জন্যই সে একজন ছেলের রূপ নিয়েই জন্মায়।

১৯৪২ সালে হেনরি ক্লিনফেল্টার সর্বপ্রথম এই রোগটি বর্ননা করেন আর তার নামানুসারেই এ রোগের নামকরণ করা হয়। ভুমিষ্ট হওয়া প্রতি ১০০০ ছেলে সন্তানের মাঝে একজনের এ রোগ নিয়ে জন্মাবার সম্ভাবনা থাকে।

একটি শিশু বয়ঃসন্ধি হবার আগ পর্যন্ত খুব সময়ই বোঝা যায় সে এমন রোগে ভুগছে কিনা। তবে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ক্লিনফেল্টার সিন্ড্রোম এ আক্রান্ত শিশুটির মাংশ পেশীর গঠন থাকে অপেক্ষাকৃত স্বল্প ও দুর্বল প্রকৃতির। ।যার ফলে খুব অল্প বয়স থেকেই সে দুর্বলতায় ভোগে, বিশেষ করে যে কোন খেলাধুলায় তাকে সব সময়ই পিছিয়ে থাকতে দেখা যায়। এদের কিছু সংখ্যকের মেধা বা বুদ্ধি ও সামান্য কম থাকতে দেখা যায়।

বয়সন্ধির সময় হলে বাবা মা প্রথম বুঝতে পারে যে তাদের ছেলেটি পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। কারন তার গোফ দাড়ি যেমন জন্মায় না তেমনি সমস্ত শরীরে কিশোরীদের মতো কোমলতা দেখা দেয়। তার স্তন বড় হয়ে যেতে থাকে (gynaecomastia)এবং নিতম্ব  এর বৃদ্ধি ও অনেক বেশী হয় (broader hips)।শিশুটি কৈশোরে তার সমবয়সীদের তুলনায় অনেক বেশী লম্বা হয়ে থাকে (tall stature)। তার এই ক্রমবর্ধমান লম্বা হতে থাকাটাও অনেক সময় মা-বাবার চোখে প্রথম লক্ষনীয় বিষয় হয়ে দেখা দেয়।

আক্রান্ত শিশুটি হাইপোগোনাডিজম (hypogonadism) নামক একটি রোগের শিকার। তার শরীর একটি এক্স ক্রোমোজম (chromosome) বেশী থাকার কারনে সে এমন সব বৈশিষ্টের অধিকারী হতে থাকে। তার অন্ডকোষ (testicle) পুরোপুরি গঠিত হয়না, যার ফলে তার টেস্টেস্টেরন (testosterone) নামক হরমোন (hormone) টির মাত্রা থাকে নগন্য। ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তার অন্ডথলি (scrotum)তে অবস্থিত অন্ডকোষ (testicle)গুলো খুবই ক্ষুদ্রাকৃতির এবং নরম।

কোন শিশুর ক্লিনফেল্টার সিন্ড্রোম আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ক্যারিওটাইপিং (karyotyping) নামক একটি পরীক্ষা করতে হয়। অভিভাবকের ঘাবড়ানোর কিছু নেই,এ রোগের চিকিৎসা আছে। একজন হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞের (endocrinologis)অধীনে তাকে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিতে হয়। এমন রোগীদের বিয়ে-সাদি এমন কি বাচ্চা উৎপাদন করাও সম্ভব, তবে এদের স্তন ক্যান্সার (breast cancer),থ্রম্বোএম্বলিজম (thromboembolism),অটোইমিউন ডিজিজ (autoimmune disease)এবং অস্টিওপোরোসিস (osteoporosis)হবার ঝুকি থাকে অন্যদের চেয়ে একটু বেশী। তাই নিয়মিত চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হয়ে নিশ্চিত হতে হবে তার এসব রোগ হয়েছে কিনা।

সব কথার শেষ কথা ক্লিনফেল্টার সিন্ড্রমের অনেক রোগীরই কোন ধরনের উপসর্গ থাকেনা, এবং সবার ক্ষেত্রে সব গুলো উপসর্গ বা ঝুকিও সমান ভাবে উপস্থিত থাকেনা। আর তাই অনেক রোগীই স্বাভাবিক একজন মানুষ হিসেবে তার জীবন পার করে দিতে পারে।