কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক

কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক

নিউজ ডেস্ক: স্থানীয় নাম ‘সিঙ্গাড়া’, অনেকই চেনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। এর একমাত্র কারণ এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়। দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গাড়ার মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গাড়া বলেও চেনেন। তাছাড়াও এ ফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ওয়াটার চেস্টনাটও বলা হয়। এরও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার পতিত জমিতে এই পানিফলের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। প্রতি বছর বোরো ধান কাটার পর, খাল-বিল-ডোবায় জমে থাকা পানিতে প্রথমে এই ফলের লতা রোপণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। এ ফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রতি বিঘা জমি চাষে তিন-চার হাজার টাকা খরচ করে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ করেন চাষিরা। দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুরের তিন শতাধিক কৃষক পতিত ৭৪ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ করছেন। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। এদিকে ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে সাবলম্বী হয়ে উঠছে এ অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার। আবুল হাসেম, মোস্তাক আলী, দানেছ আলী, মির্জা বদি উজ্জামান, বিপ্লব আলী, তারা মিয়াসহ পানিফল চাষিরা জানান, সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরও অনেক মানুষ পানিফল চাষ করবে। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।

পানি ফলের গুণাগুণ : চিকিৎসকরা বলেন, যেকোনো মৌসুমি ফলই শরীরের জন্য উপকারী। ঠিক একইভাবে উপকারী পানিফল। খাদ্য ও পুষ্টিগুণে এটি মহৌষধ। পানিফলের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশ অর্থাৎ খোসা ছাড়িয়ে মোট শাঁসের পরিমাণ ১০০ গ্রাম হলে তাতে পাওয়া যায়- খাদ্যশক্তি ৬৫ কিলো ক্যালোরি, জলের পরিমাণ ৮৪.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৬ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, শর্করা ১১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৫ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম, এক একটি পানি ফলে চর্বির পরিমাণ ০.৯ গ্রাম, এছাড়াও আছে পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন-ই। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এছাড়া এ ফলের ঔষধি গুণ বা খাদ্য গুণ বা উপকারিতাও অনেক। পানিফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, পেটের রোগ নিরাময় করে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, দুর্বল শরীরকে বল দেয়, হাত-পা ফোলা ঠিক করে, এটি যকৃতের প্রদাহনাশক অর্থাৎ লিভারের ইনফ্লামেশন নিরাময় করে, এটি যৌন শক্তিবর্ধক একটি ফল, ঋতুর আধিক্যজনিত সমস্যা ঠিক করতে খুবই উপকারি, এমনকি এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধের গুণও, শরীর ঠা-া করতে পানিফলের জুড়ি নেই, শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, বমিভাব, হজমের সমস্যা দূর করতে পানিফলের কোনো তুলনা হয় না, অনিদ্রা দূর করতে কাজে দেয়, ঠা-া লাগা, সর্দি থেকে স্বস্তি পেতে সাহায্য করে, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যানিমিয়া কমাতে পারে, পানি ফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি দূর হয়, পিত্তজনিত রোগ নাশ করে, রক্ত আমাশা বন্ধ করে, প্রস্রাবের সমস্যা দূর করে।

ফুসফুস ভালো রাখার খাবার ফুসফুস মানব শরীরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম। করোনায় অনেকেরই ফুসফুস অকেজো হয়ে প্রাণহানিও ঘটছে। তাই ফুসফুস নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত সবার। ফুসফুস সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে খাদ্য। বয়স বাড়ার কারণে, অত্যধিক পরিবেশ দূষণ এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের ফলে যাদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে গেছে, তাদের খাবারের প্রতি বিশেষ যতœ নেওয়া প্রয়োজন। ফুসফুসকে সুস্থ রাখার জন্য যেসব খাবার খাওয়া উচিত তা হলো-

পানি : ফুসফুসের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার বা তার বেশি পানি পান করতে হবে। এতে ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং শ্লেষ্মা পাতলা থাকে। ফলে দূষিত পদার্থ ও জীবাণু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বের করে দিতে সুবিধা হয়।

গ্রিন টি : গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি পানীয়। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ফুসফুসের প্রদাহ কমায় ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই রোজ দুই কাপ করে গ্রিন টি পান করুন।

মাছ : গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাটি এসিডযুক্ত সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের কার্যক্ষমতাকে অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। ম্যাকারেল, ট্রাউট, হেরিংয়ের মতো মাছ সিওপিডি রোগের চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে।

কাঁচা হলুদ : হাজারেরও বেশি বছর ধরে এশিয়ায় হলুদের ব্যবহার শুধু মসলা হিসেবেই নয়, ঔষধি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কারকিউমিন ফুসফুসকে দূষিত পদার্থের প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়। রোজ সকালে কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে পারেন। শুধু হলুদ না খেতে চাইলে মধু ও হলুদ একসঙ্গেও খেতে পারেন।

রসুন ও আদা : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেতে পারেন আদা ও রসুন। এগুলোতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ফুসফুসকে ভালো রাখতে এবং ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।

ব্রকলি : ব্রকলিতে থাকা সালফোরাফেন, অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই রোজকার খাবারের পাতে অবশ্যই রাখুন ব্রকলি।

তুলসী পাতা : তুলসী পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ফুসফুসের সুরক্ষার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বাতাসে ভেসে থাকা দূষিত পদার্থ নিঃসরণ করতে তুলসী পাতা সহায়তা করে। তাই রোজ সকালে তুলসী পাতা চিবিয়ে বা এক টেবিল চামচ রস বের করে খেতে পারেন।