ওহাবী-সালাফি মতবাদই জঙ্গি-সন্ত্রাসী তৈরীর উৎস

সালেহ মুনশী: ওহাবী-সালাফি মতবাদই জেএমবি, আনসারুল্লাহ, হিযবুত তাহরীরসহ সব জঙ্গি-সন্ত্রাসী তৈরীর উৎস। এদের নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন মতাদর্শ প্রচার, প্রকাশনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইউটিউবসহ লিংক, ওয়েবসাইটসহ আর্থিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া।

হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, আনসারুল্লাহ, হিযবুত তাহরীর, আহলে হাদীস এসব সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোই ওহাবী-সালাফীবাদের প্রচার-প্রসারকারী এবং পৃষ্ঠপোষক। এদের মধ্যে হুজি সদস্যরা দেওবন্দ ধারার কওমি মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া করা। জেএমবির সদস্যরা আহলে হাদিস ধারার মাদ্রাসা থেকে। তবে যে ধারা থেকেই আসুক না কেন সবাই ওহাবী-সালাফীবাদের সমর্থক ও অনুসারী। এসব জঙ্গি সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সালাফি মতাদর্শী উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে। আহলে হাদিস ধারাটি আগে ‘ওহাবি’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বে এরা সালাফি হিসেবে পরিচিত।

সালাফিদের পুস্তিকায় বাংলাদেশে কেন কিতাল বা জিহাদ প্রয়োজন, তার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কারণগুলো হলো ১. বাংলাদেশে ইসলামি হুকুমত কায়েম নেই, ২. ভারতের আগ্রাসী মনোভাব, ৩. বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের তৎপরতা, ৪. সারা দেশে বিভিন্ন পশ্চিমা মিশনারির ইসলামবিরোধী কর্মকা-।

জেএমবি দেশকে মোট ছয়টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত করে কার্যক্রম শুরু করে। মূলত আহলে হাদিস-অধ্যুষিত এলাকায় দাওয়াতি কাজ বা সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হয়। উত্তরাঞ্চলের ১৫ জেলার বাইরে জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ ও সাতক্ষীরার কিছু এলাকায় আহলে হাদিস মতাদর্শের লোকজনের বসবাস। তাই প্রথম কয়েক বছরে আবদুর রহমানসহ শুরা সদস্যরা এসব এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। বিভিন্ন আহলে হাদিস মসজিদ ও মাদ্রাসায় বক্তৃতা করেছেন।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মূলত ওই সব এলাকার আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের একটি অংশের ওপর ভর করেই জেএমবির বিস্তার লাভ করেছে। এর মধ্যে বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রংপুর থেকে সবচেয়ে বেশি সদস্য সংগ্রহ করেছে বর্তমানে নিষিদ্ধ এই সংগঠন। প্রশিক্ষণকেন্দ্রও গড়ে তোলে এসব এলাকার চরাঞ্চলে।

তিন ধরনের প্রশিক্ষণ শেষে বাছাই করা সদস্যদের বোমা তৈরি ও অস্ত্র চালনার তালিম দেওয়া হতো। সদস্য সংগ্রহের পর প্রত্যেকের ছদ্মনাম বা সাংগঠনিক নাম দেওয়া হয়। এরপর ‘কাট আউট পদ্ধতিতে’ ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে কার্যক্রম চালানো হয়। বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নানা ‘কোড’ শব্দ ব্যবহার করে জেএমবি। আর এসব সাংগঠনিক গোপনীয়তা রক্ষার কৌশল লস্কর-ই-তাইয়েবা থেকেই শিখেছেন বলে শায়খ আবদুর রহমান জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। কারও দায়িত্ব বা কর্ম এলাকা যতবার পাল্টায়, ততবার নতুন নতুন ছদ্মনাম ধারণ করতেন তাঁরা। শায়খ রহমানের নিজের ছদ্মনাম ছিল এহসান। শুরুর দিকে তাঁরা কয়েকজন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ে রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীর ক্যাম্পে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শিখে এসেছিলেন। বিনিময়ে তাঁদের বোমা তৈরির (আইইডি) প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

অবশ্য জেএমবির প্রথম পর্বে আগ্নেয়াস্ত্রের খুব একটা ব্যবহার ছিল না। তারা মূলত বোমার ব্যবহার করেছে, যার বেশির ভাগ উপাদান দেশ থেকে নেওয়া। বিস্ফোরক জেলসহ কিছু কিছু উপাদান ভারত থেকে সংগ্রহ করা হতো। শায়খ রহমান বলেছেন, তাঁরা কিছু ওয়ান শুটারগান (হাতে তৈরি দেশীয় অস্ত্র) ভারত থেকে এনেছিলেন। এর বাইরে বাংলা ভাই একটি এসএমজি ব্যবহার করতেন, সেটা বাগমারায় চরমপন্থীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া।

জেএমবির প্রথম পর্বে, অর্থাৎ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসির আগ পর্যন্ত কত সদস্য ছিলেন, তার কোনো প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। জোট সরকারের আমলে বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কখনো ৫ হাজার, কখনো ২৫ হাজার সদস্য থাকার কথা বলা হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করেন, এমন ব্যক্তিদের তখনকার ধারণা ছিল, এহসার (সার্বক্ষণিক কর্মী), গায়রে এহসার (সাধারণ সদস্য বা সমর্থক) ও তাঁদের স্ত্রীদের সদস্য হিসেবে ধরলে মোট সদস্য ৫ হাজার হতে পারে। এর মধ্যে ২০০৫ সালে দেশব্যাপী বোমা হামলার পর সাত শতাধিক গ্রেপ্তার হন।

২০০২ সালে ভারতের মালদহে জেএমবির ৬৫তম কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সহায়তায় ভারত থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করা হতো বলে পরে জঙ্গিনেতারা জবানবন্দিতে বলেছেন। ২০১৪ সালে ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার পর সে দেশে জেএমবির উপস্থিতির কথা আলোচনায় আসে।

শায়খ আবদুর রহমান জবানবন্দিতে বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে পাকিস্তানের লস্কর-ই-তাইয়েবার বাইরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আল মুহাজেরুন নামের একটি জিহাদি সংগঠনের যোগাযোগ ছিল। এর প্রধান সিরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শায়খ ওমর বাক্রি। সংগঠনটি বাংলাদেশে তাদের সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য জেএমবিকে অনুরোধ করেছিল। তারা এসে চরাঞ্চলে জেএমবির প্রশিক্ষণ সরেজমিনে দেখেও যায়। পরে ১৭ আগস্টের হামলার পর জেএমবি চাপে পড়লে টেলিফোনে আল মুহাজেরুনের নেতারা জেএমবিকে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসে হামলা, র‌্যাবের ওপর আক্রমণ এবং বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অপহরণ বা তাঁদের ওপর হামলা চালানোর পরামর্শ দিয়েছিল বলে জানায় শায়খ রহমান।

কলম্বোভিত্তিক রিজিওনাল সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, ‘সারা বিশ্বে এখন যে সন্ত্রাসবাদ আমরা দেখছি, সেটার মূলে রয়েছে সালাফিবাদ। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।’ বিগত শতকের সত্তরের দশক থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ধনী সালাফিবাদ প্রসারে বিনিয়োগ শুরু করে। এরপর গত সাড়ে তিন দশকে সালাফিবাদের পাশাপাশি উগ্র মতাদর্শ ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে ইউরোপ-আমেরিকাও বাদ যায়নি।

২০০৬ সালের ২ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে শায়খ আবদুর রহমান বলেছে, সৌদি আরবে থাকাকালীন মিসরভিত্তিক সালাফী মুসলিম ব্রাদারহুডের (ইখওয়ানুল মুসলিমিন) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতাম।

২০১৩ সাল থেকে মাঠে নামা দুই জঙ্গি সংগঠনের একটি হলো আল-কায়েদার অনুসারী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (বর্তমান নাম আনসার আল ইসলাম) এবং অপরটি ‘নব্য জেএমবি’। লক্ষ্যবস্তু বা টার্গেট এখন পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন হলেও দুটি সংগঠনই সালাফি বা আহলে হাদিস মতাদর্শী। দুই গোষ্ঠীরই সদস্যদের বড় অংশ তরুণ এবং ইংরেজিমাধ্যম স্কুল ও সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করা সচ্ছল পরিবারের সদস্য।

জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় কার্যকর বা সমন্বিত পদক্ষেপ ও নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা নজরদারির অভাবে ১১ বছরের মাথায় এত ভয়ংকররূপে আবির্ভূত হয়েছে জেএমবি। বিপর্যস্ত জেএমবি আবার ঘুরে দাঁড়াবে, সেটা কেউ ধারণা করেনি। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করলেও নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা নজরদারি ছিল না। তেমনি কারাগারে থাকা জঙ্গিরা কে কখন সাজা শেষে বা জামিনে বের হচ্ছেন, সেটারও ভালো নজরদারি হয়নি।

২০০৭ সাল থেকেই জঙ্গিবাদবিরোধী বিশেষায়িত বাহিনী বা বিভাগ করে একই কেন্দ্র থেকে মামলার তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ, নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা নজরদারিসহ সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল।

অবশ্য পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০০৭ সালে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসি ও নিযুক্ত আমির সাইদুর রহমানসহ বেশ কিছু জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আত্মতুষ্টিতে ভুগছিল। তারা ভেবেছিল জঙ্গিবাদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো মতাদর্শী উগ্র গোষ্ঠীকে এভাবে শেষ করা যায় না। যতক্ষণ না মতাদর্শ বিলুপ্ত হয়, ততক্ষণ এরা নতুন নতুনরূপে আবির্ভূত হবে। তার ওপর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে অনুকূল পরিবেশ থাকলে এটা নতুন মাত্রা পায়। যার বড় নজির গুলশান হামলা।

প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর রহমানের পর জেএমবির দ্বিতীয় আমির মাওলানা সাইদুর রহমানসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এরপর সংগঠনটির কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। কিছু সদস্য তখন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দিকেও ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে বাইরে থাকা জেএমবির সদস্যরা আবার সংগঠিত হতে শুরু করেন। কারাগারে থেকে সাইদুরসহ অন্যান্য জঙ্গিনেতার নির্দেশনাও পাচ্ছিলেন বাইরের জঙ্গিরা, এমন খবর বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ২০১৩ সাল থেকে এই জঙ্গিরা খুলনা ও ঢাকায় কিছু হত্যাকা- ঘটান। কিন্তু বিষয়টি তখন ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি সালাহউদ্দিনসহ জেএমবির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতাকে (অপর দুজন বোমা মিজান ও হাফেজ মাহমুদ) ছিনিয়ে নেওয়ার পর টনক নড়ে সরকারি বাহিনীগুলোর। এরপর জানাজানি হয় যে জেএমবি তিন ভাগে ভাগ হয়ে পৃথক নেতৃত্বে সংগঠিত হচ্ছে। এর একাংশের নেতৃত্বে থাকা কারাবন্দী সাইদুর রহমান তাঁর ছেলে আবু তালহা মোহাম্মদ ফাহিমের (২০১৫ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় গ্রেপ্তার) মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সংগঠিত করছিলেন। আরেকটি অংশ সংগঠিত হচ্ছিল প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সালাহউদ্দিন ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানের নেতৃত্বে ভারতে বসে।

নব্য জেএমবির সঙ্গে ১৯৯৮ সালে শায়খ আবদুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জেএমবির অনেক তফাত। আগের মতো দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত নয়, উচ্চ ও মধ্যবিত্তের সন্তান ও আধুনিক শিক্ষিতরাও যুক্ত হয়েছেন নব্য জেএমবিতে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, নাবিকÍএমন নানা পেশাজীবীও আছেন। বিদেশে লেখাপড়া কিংবা বসবাস করেন, এমন ব্যক্তিরাও যুক্ত হয়েছেন। যাঁরা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ দেশে এসে জঙ্গিদের সমন্বয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন এসব জঙ্গি মোকাবিলায় তথা সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। তবে গুলশান হামলার পর সরকার জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। গত ২৬ জুলাই ভোরে ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযান এবং নয় জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় গুলশান হামলার মতো আরেকটি ভয়ংকর হামলা থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। দেশের সব মহলে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটা মতৈক্য তৈরি হয়েছে। তবে এখনো মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়ে গেছে। এই উদ্বেগ দূর করতে এবং সন্ত্রাসীদের সর্বক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন করতে প্রয়োজন ওহাবী-সালাফী, আহলে হাদীসদের মতাদর্শ প্রচার, প্রকাশনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইউটিউবসহ লিংক, ওয়েবসাইটসহ আর্থিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া।