একজন সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং সকলের জন্য শিক্ষা

হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রওজা

মুহম্মদ গিয়াস আল হানাফীঃ মহা ফযীলতপূর্ণ একটি মাস হলো বর্তমান পবিত্র রজবুল হারাম। এ মাসের সম্মানিত প্রথম রাত্রিটি দোয়া কবুলের খাছ রাত্রি বলে হাদিস পাকে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া এ মাসের সম্মানিত পহেলা জুমুয়ার রাত্রি হলো পবিত্র দ্বীন ইসলামের মধ্যে ঘোষিত সমস্ত মহান রাত্রির চেয়েও মহান যা পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব নামে মশহুর। অপরদিকে ২৭শে রজব পবিত্র মি’রাজ শরীফের রাত্রি। এতোগুলো মহান রাত্রির সমন্বয়ে যে মাস সেই পবিত্র রজবেই দুনিয়াতে আগমণ করেন পবিত্র দ্বীন ইসলামের গৌরব, ওলীকুল শিরোমণি, সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল হিন্দ, মুজাদ্দিদে মিল্লাত, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতি আজমিরী সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। একই মাসে তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাকের দীদারে গমন করেন।

অধিকাংশ মতে ইরানের খোরাশান (বর্তমান মসূল) প্রদেশের সিজিস্তানের সনজর নামক গ্রামে মহান আল্লাহর এই ওলী দুনিয়াতে আগমন করেন। তিনি পিতৃ বংশধারায় আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী ইবনে আবি ত্বলিব আলাইহিস সালাম থেকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার হয়ে ইমামতের ধারায় সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আলী রিদ্বা আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে এবং মাতৃ বংশধারায় সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার হয়ে দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনেন। কাজেই তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ আওলাদের অন্তর্ভুক্ত।

পবিত্র হজ্বে গিয়ে পবিত্র রওজা শরীফ জিয়ারত কালে তিনি হেদায়তের কেন্দ্রস্থল হিসেবে হিন্দুস্তান গমন করার নিদের্শ মুবারক পান স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে। নির্দেশ মুতাবেক তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলামের হাদীরূপে হিন্দুস্তানে আগমন করেন। গোটা হিন্দুস্তান ছিল তখন মুশরিকী কার্যকলাপের পীঠস্থান। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি হিন্দুস্তানের কাফির-মুশরিকদের মাঝে এমন আলোড়ন সৃষ্টি করেন যে, দলে দলে লোকজন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মাঝে দীক্ষিত হতে লাগলো।

এভাবে উনার উসীলায় এক কোটিরও বেশি লোক পবিত্র ঈমান আনলো। সুবহানাল্লাহ! এজন্য কিতাবে লিখা হয়- ‘এই উপমহাদেশে যারাই পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মহামূল্যবান সম্পদের অধিকারী হয়েছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত হবেন এবং তাদের অধস্তন বংশধারা সকলেরই নেকীগুলি হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আমল মুবারক-উনার অন্তর্ভুক্ত সুবহানাল্লাহ। উপরন্তু ভারতবর্ষে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পেতে থাকবে তার ছওয়াবের হাদিয়া শায়েখুল মাশায়িখ, কুতুবুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমত ততই পৌঁছতে থাকবে।’ সুবহানাল্লাহ!

অথচ আজ বড়ই আফসুস! ভারতবর্ষ তথা গোটা উপমহাদেশের মুসলমানগণ উনার পবিত্র জীবনী সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ। খাছভাবে ভারতবর্ষ তথা উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য দায়িত্ব-কর্তৃব্য হলো- পবিত্র রজব মাসে উনার পবিত্র আগমন ও বিদায় দিবস উপলক্ষে বেশি বেশি পবিত্র মীলাদ ও ইছালে সাওয়াবের মাহফিলের আয়োজন করা এবং আলোচনার মাধ্যমে নিজ নিজ ঈমান আমলকে পরিশুদ্ধ করার খালিছ দীক্ষা গ্রহণ করা।

লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।