সাত শিক্ষকের ৯ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন কম্পিউটার অপারেটর
![](https://i0.wp.com/newsnine24.com/wp-content/uploads/2016/08/News-Nine24-default.jpg?fit=400%2C250&ssl=1)
গাইবন্ধা সংবাদদাতা: জালিয়াতির মাধ্যমে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাত সহকারী শিক্ষকের সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) ফান্ড থেকে মোটা অংকের টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা জানাজানির পর অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক গা ঢাকা দিয়েছেন।
জালিয়াতির মাধ্যমে গেল বছরের ডিসেম্বরে তাদের জিপিএফ ব্যাংক হিসাব নম্বর থেকে মোটা অংকের টাকা ঋণ তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি এ ঘটনা জানাজানির পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঋণের জন্য শিক্ষকরা আবেদন কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার বিষয়ে কিছু না জানলেও সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড সুন্দরগঞ্জ এবং পাঁচপীর শাখা থেকে সর্ব্বোচ্চ ২ লাখ ৬৪ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৬৬ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা তুলে নেওয়া হয়।
শিক্ষকদের অভিযোগ, জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের নামের বিপরীতে ৯ লাখের বেশি টাকা তুলে নেয় উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক। জালিয়াতির এ ঘটনায় তারা সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন-উর-রশিদ সম্পৃক্ত বলে দাবি করছেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
অভিযোগে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক স্বপ্না রানী, রহিমা বেগম, আতাউর রহমান, শামছুন্নাহার বেগম, মাসুদা বেগম, হাজেরা বেগম ও আনিছুর রহমান সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা, কালির খামার, দক্ষিণ রাজিবপুর, পূর্ব বজরা হলদিয়া পুটিমারী, নতুন দুলাল ভরট, পুটিমারী ও চণ্ডিপুর ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত।
শিক্ষকদের নামের বিপরীতে মোট ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হলেও কিছুই জানা নেই তাদের। ঋণের টাকার জন্য তারা কোনো দিন শিক্ষা অফিস কিংবা আবেদনও করেননি। এমনকি তাদের হিসাব নম্বরে কোনো টাকাও আসেনি। জালিয়াতির মাধ্যমে এই টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক তুলে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।
এদিকে, জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা জানা নেই সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগও করেনি বলে জানান সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা। তবে এরইমধ্যে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়াসহ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।
এ বিষয়ে দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপ্না রানী রায় অভিযোগ করে বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩ হাজার ২০০ টাকা কর্তন করা হয়। পরে ট্রেজারি অফিসে গিয়ে দেখি আমার জিপিএফ ফান্ড থেকে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। অথচ এই ঋণের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষক রহিমা বেগম বলেন, আমার স্বাক্ষর ছাড়া আমার নামে কীভাবে ঋণ মঞ্জুর হয়। এই জালিয়াতির ঘটনা আবু বক্কর একাই কখনও করতে পারেন না। এর সঙ্গে শিক্ষা অফিসার সরাসরি জড়িত।
এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ কমিটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম যুতি বলেন, এটা জঘন্যতম জালিয়াতি। এ ঘটনার সঙ্গে শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ট্রেজারি অফিসের কর্মচারী জড়িত। দ্রুত এই জালিয়াতির ঘটনার সমাধান না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।
এদিকে, জালিয়াতির এই ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষক সমাজ। ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসার এ কে এম হারুন-উর-রশিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। তাছাড়া এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে সড়কে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন কর্মসূচিও পালন করেন উপজেলার শিক্ষক সমাজ। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি স্মারকলিপি দেন।
ঘটনা জানাজানির পর গা-ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক। আর ঘটনার পর আবু বক্কর সিদ্দিককের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সাড়ছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন-উর-রশিদ। অভিযোগের বিষয়ে জানতে অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন-উর-রশিদকে।
ফোনে যোগসাজসের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা জানা নেই সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগও করেনি বলে জানান সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আব্দুল হাদী। এ বিষয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে এরইমধ্যে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়াসহ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, এমন ঘটনা কখনও কাম্য নয়। দ্রুত এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।