সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার দাবিতে কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলন
নিউজনাইন২৪ডটকম, কক্সবাজার: রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার দাবিতে রোববার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মুসলিম ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত কয়েকদিন যাবত আমরা পত্রপত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়া মারফত জানতে পেরেছি, বাংলাদেশের মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার একটি কার্যক্রম চলছে। আমরা মুসলিম ঐক্য পরিষদ, কক্সবাজার জেলার পক্ষ থেকে এই উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রধর্ম প্রসঙ্গে টেনে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বহাল আছে। যেমন: ইরাক, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, তিউনিসিয়া, জিবুতি, আফগানিস্তান, আল জেরিয়া, ব্রুনেই, কোমোরোস, জর্দান, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, মিশর, কাতার, সউদী আরব, সোমালিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ওমান, কুয়েত, ইয়েমেন, বাহরাইন। এতগুলো দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকতে সমস্যা কোথায়। আরো উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ হচ্ছে মুসলমান। এদেশ গণতান্ত্রিক দেশ। গণতান্ত্রিক উপায়ে এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা উচিত এবং জনগণের আশা-আকাঙ্খা সেটাই।
সরকারকে নির্বাচনী ইশতেহার স্বরণ করিয়ে দিয়ে বক্তারা বলেন, সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের বিচারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল এবং তাদের বিচার করে সরকার জনগনের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। একইভাবে ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না” এটাও সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু এটা এখনো আইনে পরিণত হয়নি এবং জনগণের সেই প্রত্যাশাও এখনো পূরণ হয়নি। যা দুঃখজনক।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো তা ইসলামী চেতনার মাধ্যমেই হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান ৭ই মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন- “এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।” ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহারে স্পষ্ট করে বলা ছিলো: “আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না।” মূলত এই নির্বাচনী ওয়াদার কারণে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীজলীগ নিরঙ্কুশ ভোটে জয়লাভ করে। সেক্ষেত্রে বলা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ছিলো সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কোন অস্তিত্ব ছিলো না, ছিলো ইসলামী মূল্যবোধের। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য লেবেল সর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নয়। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করীম (সা.) এর ইসলাম। যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের সুবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বারবার যারা অন্যায় অত্যাচার শোষণ বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদেরই বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জনই মুসলমান, সে দেশে ইসলামবিরোধী আইন পাসের সম্ভাবনার কথা ভাবতে পারেন কেবল তারাই যাদের ঈমানই আদতে নাজুক আর ইসলামকে যারা ব্যবহার করেন দুনিয়াটা ফায়েস্তা করে তোলার কাজে। অতএব আমরা যারা আল্লাহর মজলুম বান্দাদের জন্য সংগ্রাম করছি, তারা ইসলামের বিরোধিতা করাতো দূরের কথা বরং ইসলামের বিধান মতে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠারই উমেদার, আর সে ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হলেন তারাই যারা ইসলাম বিপন্নের জিগির তুলে জনগণকে ধোঁকা দিতে চান।’’ (তথ্যসূত্র: বই-মুজিবের রচনা সংগ্রহ, বাংলাদেশ কালচারাল ফোরাম ৮৪-৮৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)
সর্বশেষে বলতে চাই, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অক্ষুন্ন থাকবে’ এটাই বাংলাদেশ সরকার ও মহামান্য হাইকোর্টের কাছে আমাদের আহবান। একইসাথে ‘বাংলাদেশের সংবিধানে আল্লাহ তায়ালার উপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনরায় ফিরিয়ে আনা হবে’ মুসলমান হিসেবে এটাই আমাদের ঈমানী দাবি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আল্লামা ফারুক আহমদ খান।