মোদির ক্ষমতায় ফেরা যে অর্থ বহন করে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বড় ব্যবধানে জিতে ক্ষমতায় আসার কয়েকদিন পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনেকটা সমঝোতার সুরে বলেছেন যে, তার দলকে দেশের সবচেয়ে বড় গোষ্ঠি মুসলিমদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
মুসলিম বিরোধী বিভক্তিমূলক প্রচারণা চালিয়েছে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবার ভূমিধস বিজয় পেয়েছে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছে যে, বিরোধী দলগুলো সংখ্যালঘুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদেরকে প্রতারণা করেছে।
নতুন নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে সে বলে, “ভোট ব্যাংকের রাজনীতির কারণে, সংখ্যালঘুদের অবদমন করা হয়েছে, তাদেরকে একঘরে করে রাখা হয়েছে এবং অজানা ভয়ের মাঝে ঠেলে দেয়া হয়েছে, আবার ভোটের সময় তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে”।
কিন্তু মোদি যে ব্যবহার করেছেন, সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত মুসলিম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রেসিডেন্ট ওয়াইসি আল জাজিরাকে বলেন, “ভোটের ফল ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মাথায়, যারা মোদির বিজয় উদযাপন করছিল, তারা বহু জায়গায় মুসলিমদের উপর প্রকাশ্যে হামলা করেছে।
গত সপ্তাহে বিজেপির জয়ের পর থেকে অন্তত পাঁচটি এ ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটেছে।
মধ্য প্রদেশে এক নারীসহ তিনজন মুসলিমকে গরুর গোস্ত বহনের অপরাধে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে একটি গ্রুপ।
রোববার দিল্লীর শহরতলী গুরুগ্রামে একজন মুসলিমের উপর হামলা করা হয়। তার মাথার টুপি খুলে নিয়ে তাকে দিয়ে হিন্দুদের দেবতার নামে শ্লোগান দেয়ানো হয়।
নির্যাতন বন্ধ করুন
ওয়াইসি স্থানীয় মিডিয়াকে বলেন যে, মোদি যদি মুসলিমদের ব্যাপারে ভাবতেন, তাহলে মুসলিমদের উপর হামলা করা থেকে গো রক্ষকদের নিরস্ত করতেন তিনি।
মোদির শাসনের আগের পাঁচ বছরে, ৪৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে যাদের অধিকাংশই মুসলিম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের রিপোর্টে এ তথ্য দিয়েছে।
বিজেপি সম্ভাব্য মুসলিম হুমকি সম্পর্কে হিন্দুদের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে। বিভিন্ন বিভক্তিমূলক ইস্যু নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ. এবং মুসলিমদের বাদ দিয়ে নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের মতো বিষয়।
লেখক ও সিনিয়র সাংবাদিক সাইদ নাকভি বলেন যে, বিজেপির সাফল্যের পেছনে প্রধান কারণ হলো ধর্মীয় মেরুকরণ।
কাশ্মীর ও আসাম
ভারত শাসিত কাশ্মীরের মানবাধিকার আইনজীবী পারভেজ ইমরোজ এবং আসামের আইনজীবী আমান ওয়াদুদ – উভয়েরই আশঙ্কা হলো, তাদের এই দুই রাজ্য বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার প্রথম শিকার হবে।
ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহত হওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তাকে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধান ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে বিজেপি।
আসামে বিজেপি প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা ওই রাজ্যটিকে বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অভিবাসীদের থেকে মুক্ত করবে এবং ভারতের সেক্যুলার সংবিধানের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে আবার তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, হিন্দু অভিবাসীদের তারা নাগরিকত্ব দেবে।
বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ নির্বাচনী প্রচারণার সময় বাংলাদেশী অভিবাসীদের ‘উঁইপোকা’ এবং ‘অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়েছে।
অন্যদিকে, ইমরোজের মতে, মোদির বিজয়ের কারণে কাশ্মীরিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে যে, বিজেপি এখন ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করবে, যে অনুচ্ছেদ দুটোর মাধ্যমে কাশ্মীরীদের নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে।
‘কর্মজীবী শ্রেণীর নায়ক’
ইমরোজ সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, কাশ্মীরের নিরাপত্তার এই বিধানগুলো সরিয়ে নিলে সেখানে বড় ধরনের অভ্যুত্থান দেখা দেবে এবং কাশ্মীরিদের মধ্যে চরমপন্থা আরও বাড়বে, যাদেরকে এখন পর্যন্ত রাজনীতির বাইরে রাখা গেছে, তারাও এতে জড়িয়ে যাবে।
তিনি বলেন, “অতীত রেকর্ড দেখলে বোঝা যায়, এবার প্রতিরোধ তৈরি হলে সেখানে আরও বর্বরতা নিয়ে প্রতিরোধে নামবে প্রতিরক্ষা বাহিনী”।
“ফিলিস্তিনে ইসরাইলিরা যে নীতি গ্রহণ করেছে, মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সেই নীতি গ্রহণ করেছে। দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাও বেড়েছে। কাশ্মীরে যে প্রশ্নটা উঠেছে, সেটা হলো: ইসরাইলের মতো ভারতও কি কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক মতামতকে অগ্রাহ্য করবে?”
জিন্দাল স্কুল অব গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক পলিসির অধ্যাপক সুমিত মাস্কার জনগণের উপর হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রভাব অতটা পড়েছে বলে মনে করেন না।
মাস্কার বলেন, দেশের অসংগঠিত কর্মশক্তির একটা বড় অংশ হলো নিম্নবর্নের হিন্দুরা। তারা বিজেপিকে ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, দলটি মোদিকে কর্মজীবী শ্রেণীর নায়ক হিসেবে সফলভাবে প্রচারণা চালাতে পেরেছে।