একসময় সারা পৃথিবীতে মিলাদুন নবী উদযাপন হতো, ইতিহাস ও প্রমাণ
আল্লামা মুহম্মদ নূর উদ্দীন পলাশঃ ইমামুল মুহাদ্দিসীন হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি সমগ্র বিশ্বে সকলের কাছে এক নামে স্বীকৃত একজন মুহাদ্দিস। এখন থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে উনার বিলাদত শরীফ। তিনি পবিত্র ইলমে হাদীছ শরীফ উনার জ্ঞান অর্জন করতে পবিত্র মক্কা শরীফ শরীফ, পবিত্র মদীনা শরীফ সব স্থানে ছফর করেন। সকল মাদরাসায় পঠিত এবং সকল উছুলে হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে উনার নাম স্বমহিমায় উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়াচ্ছে। উনার রচিত ‘মিশকাত শরীফ’-এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরক্বাত শরীফ’ সারা পৃথিবীতে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব। তিনি সারাটা জীবন অসংখ্য কিতাব রচনা করে মুসলিম জাহানের জন্য এক বিশাল নিয়ামত রেখে গিয়েছেন।
উনার অসংখ্য কিতাবের মধ্যে একটা খুবই গুরুত্ব¡পূর্ণ এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থের নাম হচ্ছে ‘আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ কিতাবে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ সম্পর্কে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ থেকে দলীল পেশ করেছেন। এবং সেই সাথে একটা বিষয় উল্লেখ করেছেন সেটা হচ্ছে, “সারা পৃথিবীর সকল দেশে যে জাঁকজমকের সাথে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পালন হতো তার ঐতিহাসিক প্রমাণ উল্লেখ করেছেন।” আমরা উক্ত কিতাব থেকে সে ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলো উল্লেখ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ!
(১) পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীদের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
“আমাদের মাশায়েখ উনাদের ইমাম, হযরত ইমাম শায়েখ শামসুদ্দিন মুহম্মদ সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মক্কা শরীফে মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানে যারা কয়েক বছর উপস্থিত ছিলেন, আমি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। আমরা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ অনুষ্ঠান উনার বরকত অনুভব করছিলাম যা নির্দিষ্ট কয়েক ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়। এ অনুষ্ঠানের মধ্যেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যিয়ারত আমার কয়েকবার হয়েছে।
আল্লামা হযরত সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো বলেন, পবিত্র মক্কাবাসীগণ বরকত ও কল্যাণের খনি। উনারা সেই প্রসিদ্ধ পবিত্র স্থান উনার প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করেন, যেটা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার স্থান। এটা সাউকুল লাইলে অবস্থিত। যাতে সুমহান বরকতে প্রত্যেকের সকল উদ্দেশ্য সাধিত হয়। এসকল সম্মানিত মানুষেরা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার দিন আরো অনেক কিছুর আয়োজন করে থাকেন। এ আয়োজনে আবেদ, নেককার, পরহিজগার, দানবীর কেউই বাদ যায় না। বিশেষ করে হেজাজের আমীর বিনা সংকোচে সানন্দে অংশগ্রহণ করেন এবং উনার আগমন উপলক্ষে ঐ জায়গায় এক বিশেষ নিশান তৈরি করা হতো। পরবর্তীতে এটা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিচারক ও বিশিষ্ট আলিম আল-বুরহানিশ শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে আগত যিয়ারতকারী খাদিম ও সমবেত লোকদের খানা ও মিষ্টি খাওয়ানো পছন্দনীয় কাজ বলে রায় দিয়েছেন।”
(২) পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীদের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল:
“পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসিগণও পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করতেন এবং অনুরূপ অনুষ্ঠানাদি পালন করতেন। বাদশাহ হযরত মোজাফফর শাহ আরিফ অধিক আগ্রহী এবং সীমাহীন আয়োজনকারী ছিলেন। হযরত ইমাম আবু শামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অন্যতম শায়েখ এবং বিশিষ্ট বুযুর্গ ছিলেন, তিনি স্বীয় কিতাব “আল বায়াছ আলাল কদয়ে ওয়াল হাওয়াদিছে” বাদশাহের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন- এরকম ভালো কাজসমূহ উনার খুবই পছন্দ এবং তিনি এধরনের অনুষ্ঠান পালনকারীদের উৎসাহ প্রদান ও প্রশংসা করতেন। ইমাম হযরত জাজরী রহমতুল্লাহি আলাইহি আরো সংযোজন করে বলেন, এসব অনুষ্ঠানাদি পালন করার দ্বারা শয়তানকে নাজেহাল এবং ঈমানদারদের উৎসাহ উদ্দীপনা দানই উদ্দেশ্যে হওয়া চাই।”
(৩) মিশর ও সিরিয়াবাসীগণ উনাদের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিলে সবচাইতে অগ্রগামী ছিলেন মিশর ও সিরিয়াবাসী। মিশর সুলতান প্রতি বছর পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সুমহান রাত্রে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন। ইমাম হযরত সামছুদ্দীন সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ননা করেন আমি ৭৮৫ হিজরী সনে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সুমহান রাতে সুলতান বরকুকের উদ্যোগে আল জবলুল আলীয়া নামক কেল্লায় আয়োজিত মীলাদ শরীফ মাহফিলে হাজির হয়েছিলাম। ওখানে আমি যা কিছু দেখেছিলাম, তা আমাকে অবাক করেছে অসীম তৃপ্তি দান করেছে। কোনোকিছুই আমার কাছে অসস্থিকর লাগেনি। সেই মহান পবিত্র রাতে বাদশাহর ভাষণ, উপস্থিত বক্তাগণের বক্তব্য, ক্বারীগণের তিলাওয়াতে কুরআন শরীফ, এবং না’ত শরীফ পাঠকারীগণের না’ত শরীফ আমি সাথে সাথে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছি।”
(৪) স্পেন ও পাশ্চাত্য দেশে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
স্পেন ও পাশ্চাত্য শহরগুলোতে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার রাতে রাজা-বাদশাহগণ বিশাল লোকবহর নিয়ে শহরের রাস্তা প্রদক্ষিণ করতেন। সেই লোকবহরে বড় বড় ইমাম ও ওলামায়ে কিরামগণ অংশগ্রহণ করতেন। মাঝ পথে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এসে উনাদের সাথে যোগ দিতেন এবং কাফিরদের সামনে সত্য বাণী তুলে ধরতেন। আমি যতটুকু জানি, রোমবাসীগনও কোন অংশে পিছিয়ে ছিলো না। তারাও অন্যান্য বাদশাহগণের মতো পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করতেন।”
(৫) অনারব দেশে তথা ভারতবর্ষে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন:
“আরব ছাড়াও অনারবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার প্রচলন ছিলো মহাসমারোহে। যেমন- পবিত্র রবীউল আউওয়াল মাসে এবং মহিমান্বিত দিনে এসব এলাকার অধিবাসীদের পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলে জাঁকজমকপূর্ণ মজলিসের আয়োজন হতো, গরিব মিসকিনদের মধ্যকার বিশেষ ও সাধারণ সকলের জন্য বহু ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। তাতে ধারাবাহিক তিলাওয়াত, বহু প্রকার খতম এবং উচ্চাঙ্গ ভাষায় প্রশংসা সম্বলিত ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা হতো। বহু বরকতময় ও কল্যাণময় আমলের সমাহার ঘটতো, বৈধ পন্থায় আনন্দ প্রকাশ করা হতো, বহু বিখ্যাত আলিমগণও তাতে অংশগ্রহণ করতেন। মুঘল বাদশাহ হুমায়ুনও বিশাল জাঁকজমকের সাথে প্রতিবছর পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করতেন।” (দলীল- আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবিইয়ি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। লেখক- ইমামুল মুহাদ্দিসীন হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। বিছাল শরীফ: ১০১৪ হিজরী।)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! দেখুন, সারা দুনিয়াতে আজ থেকে ৫০০/৬০০ বছর আগেও সমগ্র দেশব্যাপী দেশের বাদশাহ এবং জনগণ সবাই মিলে ব্যাপকভাবে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতেন। এবং সেসব মাহফিলে উপস্থিত থাকেন তখনকার যুগশ্রেষ্ঠ আলিম এবং ইমামগণ। তখন পৃথিবীর যমীনে কোনো মানুষই এর বিরোধিতা করে নাই। কোনো আপত্তি করে নাই।
তবে আজ ২০/২৫ বছর ধরে কোন্ নব্য দল উদয় হলো যে, এরা যুগযুগ ধরে চলে আসা এই বরকতময় আমল উনার বিরোধিতা করে? পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন হারাম-নাজায়িয বলে কোন্ সাহসে? এই নব্য উদিত ফিতনা ওহাবী, সালাফী, জামাতী, দেওবন্দী, খারিজীদের কে অধিকার দিয়েছে মনগড়া ফতওয়া দেয়ার?
শুধু তাই নয়, বিষয়টি বিখ্যাত হাদীছ শরীফ বিশারদ, লক্ষাধিক হাদীছ শরীফ উনার হাফিয, বিখ্যাত মুহাদ্দিস, বুখারী শরীফ উনার ব্যাখ্যাকারক, হাফিযে হাদীছ, আল্লামা ইমাম কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে বর্ননা করেন,
ﻭﻻﺯﺍﻝ ﺍﻫﻞ ﺍﻻﺳﻼﻡ ﻳﺤﺘﻔﻠﻮﻥ ﻳﺸﻬﺮ ﻣﻮﺍﻟﺪﻩ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻳﻌﻤﻠﻮﻥ ﻟﻮﻻﺀﻡ ﻭ ﻳﺘﺼﺪ ﻗﻮﻥ ﻓﻲ ﻟﻴﺎﻟﻴﻪ ﺑﺎﻧﻮﺍﻉ ﺍﻟﺼﺪﻗﺎﺕ ﻭﻳﻈﻬﺮﻭﻥ ﺍﻟﺴﺮﻭﺭﻳﺮﻳﺪﻭﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺒﺮﺍﺕ ﻭ ﻳﻌﺘﻨﻮﻥ ﺑﻘﺮﺍﺓ ﻣﻮﻟﺪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﻭﻳﻈﻬﺮ ﻋﻠﻬﻢ ﻣﻦ ﺑﺮﻛﺎﺗﻪ ﻛﻞ ﻓﻀﻞ ﻋﻤﻴﻢ ﻭ ﻣﻤﺎ ﺟﺮﺏ ﻣﻦ ﺧﻮﺍﺻﻪ ﺍﻧﻪ ﺍﻣﺎﻥ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻌﺎﻡ ﻭﺑﺸﺮﻱ ﻋﺎﺟﻠﺔ ﺑﻨﻴﻞ ﺍﻟﺒﻐﻴﺔ ﻭ ﺍﻟﻤﺮ ﺍﻡ ﻓﺮﺣﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻣﺮﺀ ﺍﺗﺨﺬ ﻟﻴﺎﻟﻲ ﺷﻬﺮ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻙ ﺍﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻴﻜﻮﻥ ﺍﺷﺪ ﻋﻠﺔ ﻋﻠﻲ ﻣﻦ ﻓﻲ ﻗﻠﺒﻪ ﻣﺮﺽ ﻭ ﻋﺘﺎﺩ ﻭﻟﻘﺪ ﺍﻃﻨﺐ
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার মাসে মুসলিম মিল্লাত সর্বদা মাহফিল অনুষ্ঠিত করে আসছেন, আনন্দের সাথে খাওয়া-দাওয়া তৈরি করছেন এবং খাওয়ার দাওয়াত করে আসছেন। এই মহান রাতে উনারা বিভিন্ন রকমের দান-খয়রাত এবং আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন এবং ভালো কাজ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধিই করে আসছেন। উনার বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়ে আসছেন। যার বরকতে উনাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বরাবরই হচ্ছে। এর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে এটা পরিলক্ষিত যে, পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার কারণে ঐ বছর নিরাপত্তা কায়িম থাকে এবং সমস্ত নেক উদ্দেশ্য পূরণে তড়িৎ সুসংবাদ প্রবাহিত হয়। অতএব, মহান অল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তির উপর অসংখ্য রহমত বর্ষণ করেন। যিনি পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাসে প্রতিটি রাতকে ঈদ বানিয়ে নিয়েছেন। আর পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার এই ঈদ তাদের অন্তরে কঠিন মুছিবত হয়ে যায় যাদের অন্তরে ব্যাধি ও শত্রুতা আছে।” (দলীল- আল মাওয়াহেবুল লাদুনীয়া ১ম খ- ২৭ পৃষ্ঠা, মিসর থেকে প্রকাশিত।)
আসুন এবার আমরা দেখি, হাফিযে হাদীছ আল্লামা হযরত কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপরোক্ত বক্তব্য মুবারক থেকে কীসব বিষয় প্রমাণিত হচ্ছে,
১) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাসে পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিল অনুষ্ঠান করা মুসলিম মিল্লাতের ঐতিহ্যবাহী তরীক্বা।
২) মুসলিম জাহান এই মহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার রাতে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে এবং দান-সদকা করে আসছে!
৩) মহান রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে ঈদ পালন করা মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী আমল।
৪) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার রাতে অধিক থেকে অধিক হারে নেক কাজ করা মুসলমান উনাদের একটি প্রিয় তরীক্বা হিসাবে গণ্য হয়ে আসছে।
৫) মহান রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনাতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়া এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ পড়ার বৈশিষ্ট্যম-িত বিশেষ আয়োজন করা মুসলমান উনাদের একটি অত্যন্ত প্রিয় আমল হিসাবে বিবেচিত।
৬) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মহান বরকতে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠকারী দের উপর আল্লাহ তায়ালা উনার ব্যাপক অনুগ্রহ সর্বদা বর্ষিত হয়ে আসছে।
৭) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার বৈশিষ্ট্যসমূহ হতে একটি অতীব সত্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যে বছর এই সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, ঐ গোটা বছরই পরম নিরাপদে অতীত হয়। সুবহানাল্লাহ!
৮) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার অনুষ্ঠান নেক উদ্দেশ্য পূরণে খোশ সংবাদ প্রদানকারী।
৯) পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ উনার রাত্রিতে আনন্দ উদযাপনকারী মুসলমানগণ উনারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রহমত উনার ভাগীদার হন।
১০) পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার আয়োজন করা এবং পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাসে প্রত্যকটি রাতেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ কারার আনন্দ উদযাপন করা ঐ জাতীয় লোকদের জন্য কঠিন মুছিবত, যাদের অন্তরে নাপাকী আছে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে দুশমনী আছে। নাউযুবিল্লাহ!
সুতরাং প্রমাণিত হলো- পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ নতুন কোনো আমল নয়, বরং সমগ্র পৃথীবির সব প্রান্তেই পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা হয়ে আসছে। আর ইবলিস শ্রেণীর মানুষ যাদের অন্তরে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিদ্বেষ আছে তারাই একমাত্র পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনাকে বিদয়াত বলে। নাউযুবিল্লাহ!