বিবিসির প্রতিবেদন: ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা গুজব
ডেস্ক: বাংলাদেশের দীর্ঘসময় ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকা শেখ হাসিনার আকস্মিক পতনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ‘হিন্দুদের গণহত্যা’ করা হচ্ছে বলে কিছু খবর ছড়িয়েছে। এ সংশ্লিষ্ট কিছু ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বলছে এবং ভয়াবহ সহিংসতায় নারীরা কান্নারত অবস্থায় সাহায্যের আবেদন করছে। কিন্তু এসব ভিডিও বা পোস্টকে গুজব বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। গণমাধ্যমটির খবরে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিও গুজব ছাড়া কিছুই নয়। হিন্দুদের মন্দিরে হামলার বিষয়টি মিথ্যা বলেও উল্লেখ করেছে বিবিসি।
১৮ আগস্ট ‘ফার-রাইট স্প্রেডস ফলস ক্লেইমস অ্যাবাউট মুসলিম অ্যাটাকস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিবিসি সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে খবরের কেন্দ্রে রয়েছে সেখানের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ যাতে চার শতাধিক লোক নিহত হয়েছে। পরে গণঅভ্যুত্থানের ফলে দেশ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। হাসিনার পতনের পর সেখানে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং তার দলের সদস্যদের দ্বারা এই সহিংস পরিস্থিতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। মুসলমান এবং হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিয়ে গঠিত ওই দলটি। এই সুযোগে মিথ্যা ভিডিও এবং তথ্য প্রচার করছে ভারতের অতি-ডানপন্থী গণমাধ্যমগুলো।
যা বিভ্রান্তিকর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে। তারা বাংলাদেশের মৌলবাদীদের দায়ী করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা ঘটছে বলে নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়েছে বলে দাবি করেছে বিবিসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, হিন্দুদের একটি মন্দিরে বাংলাদেশের মুসলমানরা নাকি অগ্নিসংযোগ করেছে। তবে বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, যে মন্দিরে আগুনের কথা বলা হয়েছে সেই মন্দিরটি চট্টগ্রামের নবগ্রহ মন্দির। সেখানে কোনো আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেনি। মন্দিরটি আওয়ামী লীগের দলীয় একটি কার্যালয়ের পাশেই অবস্থিত। অগ্নিকা-ের পর বিবিসি যে ছবি পেয়েছে সেখানে আওয়ামী লীগের এক সদস্যের ছবিসহ পোস্টারের কিছু অংশের প্রমাণ মিলেছে।
৫ আগস্ট সেখানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়। যেটির অবস্থান ঠিক মন্দিরের পিছনে। এ বিষয়টি বিবিসিকে মন্দিরের কর্মকর্তা স্বপন দাস নিশ্চিত করেছে। সে বলেছে, ‘আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আসবাব পত্র বাহিরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সে আরও বলেছে, এসময় মন্দিরে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় মন্দিরের সামনে সারাক্ষণ পাহাড়া বসানো হয় এবং এটি বন্ধ করে দেয়া হয়।’ তবে এই ভুয়া খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এটি এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ হ্যাশট্যাগ দিয়ে শেয়ার করেছে। ভারতের অভ্যন্তরেই বেশির ভাগ শেয়ার হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভাইরাল পোস্টে বলা হয় বাংলাদেশের এক হিন্দু খেলোয়াড়ের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। তবে বিবিসির অনুসন্ধানে এটিও মিথ্যা বা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা গেছে আগুন দেয়া ওই ভবনটি আওয়ামী লীগের এক মুসলিম সদস্যের বাসভবন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন যেসব ভিডিও বা পোস্ট ভাইরাল হয়েছে তা খতিয়ে দেখা গেছে এসব হামলার পেছনে ধর্ম উদ্দেশ্য নয় বরং প্রতিটি ঘটনাই রাজনৈতিক। ভুয়া এই পোস্টগুলো একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে বার বার শেয়ার করা হয়েছে যা মূলত হিন্দু উগ্রবাদীতাকে উস্কে দেয়।