ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ওপর বাংলাদেশের কোনোভাবেই নির্ভরশীল হওয়া উচিত হবে না

নিউজ ডেস্ক: সীমান্তজুড়ে শূন্য রেখার ১৫০ গজের মধ্যে আরো অন্তত ৫৮টি স্থানে স্টিলের বেড়া নির্মাণের ভারতের পরিকল্পনাটি (যা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সোমবারের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে উত্থাপন করেছে) মোটেও শোভনীয় নয়। ভারত কয়েকবারই জোরালোভাবে ইস্যুটি উত্থাপন করেছে, পররাষ্ট্রসচিব একই দিন এক সেমিনারে ১৬৫ কিলোমিটারজুড়ে বেড়া প্রদানের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ভারত এর আগে ২০১৯ সালের আগস্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করে, একই বছর ডিসেম্বরে সীমান্তরক্ষা প্রধানদের বৈঠকেও তা উপস্থাপন করে।
‘বন্ধুপ্রতীম’ ভারতের (২০১৭ সালের এপ্রিলের পর থেকে দেশটি দাবি করে আসছে যে বাংলাদেশের সাথে তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঊর্ধ্বে ওঠে গেছে) স্টিলের বেড়া নির্মাণ পরিকল্পনা অবন্ধুসুলভ, কারণ দেশটি বৈরী পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম সীমান্তে তা করে থাকে। একদিকে এটি যেমন ভারতের আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন (কারণ প্রকৃত সীমান্ত থেকে ১৫০ মিটারে মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করার অনুমোদন নেই), অন্যদিকে তা ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সাথে করা চুক্তির প্রতি অসম্মান প্রদর্শন। উল্লেখ্য, ওই চুক্তিতে মানবিবক বিবেচনা ও ভৌগোলিক বাস্তবতার আলোকে কিছু কিছু স্থানে জনসাধারণের সুবিধার কথাটি বিবেচনা করা হয়েছিল।
ভারত এখন বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বদলে স্টিলের বেড়া দেয়ার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের এমন বৈরী আচরণ নতুন নয়। বিশেষ করে তিস্তা পানিবণ্টন ও নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের হত্যার ঘটনার কথা বলা যায়। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সাথে ভারত সামরিক পর্যায়ের সম্পর্ক বাড়াচ্ছে (এসবের মধ্যে রয়েছে ভারতে প্রস্তুত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি) বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে অংশীদারিত্ব নির্মাণের চলমান প্রয়াসে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আস্থার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে বলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অমীমাংসিত জটিলতাগুলো নিরসন না করা ও সীমান্তে স্টিলের বেড়া নির্মাণের পদক্ষেপে সত্য বলে মনে হয় না।
এ থেকে যা বোঝা যায় তা হলো এই যে ভারত চায় বাংলাদেশ ভারতীয় অস্ত্র কিনে ব্যবহার করুক। বাংলাদেশের সাথে ৪,১৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত থাকা ভারত এখনো বাংলাদেশকে হুমকি বলেই বিবেচনা করে। এ ধরনের ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বাংলাদেশের ব্যবহার করার জন্য যেকোনো ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করা হবে বিপজ্জনক ও অবিজ্ঞোজনোচিত কাজ। কারণ তাতে করে শেষ পর্যন্ত ভারতের সাথে যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বাংলাদেশ।
এ কারণে বাংলাদেশের উচিত হবে সীমান্তে স্টিলের বেড়া নির্মাণের ভারতীয় পরিকল্পনায় রাজি না হওয়া। কারণ তা ১৯৭৪ সালের ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির লঙ্ঘন। তাতে শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের নির্মাণকাজে বিধিনিষেধ রয়েছে। ভারতীয় সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার প্রশ্নে ভারতের সাথে কোনো ধরনের চুক্তিতে রাজি হওয়া উচিত হবে না বাংলাদেশের। এ ধরনের যেকোনো চুক্তি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য দ্বিগুণ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।