বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম মসজিদ সম্পর্কে বিস্ময়কর কিছু তথ্য ও ছবি

Djamaâ el Djazaïr, the third largest mosque in the world

ডেস্ক: উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত একটি মুসলিম প্রধান দেশ আলজেরিয়া। দেশটির আয়তন প্রায় ২৪ লাখ বর্গকিলোমিটার। সেই বিচারে আলজেরিয়া পৃথিবীর দশম বৃহত্তম দেশ এবং আফ্রিকার মধ্যে বৃহত্তম দেশ। তবে এ বিশাল দেশের জনসংখ্যা ভূখন্ডের তুলনায় বেশ কম। বিভিন্ন সূত্রমতে, দেশটির জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি, যার ৯৫ শতাংশই মুসলমান। তবে কারও কারও মতে, মুসলমানের শতকরা সংখ্যা আরও বেশি।

আলজেরিয়ায় সম্মানিত ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু হয় ৪৯ হিজরী মুতাবিক ৬৭০ খ্রি: সনে। তখন মুসলিম বিশ্ব পরিচালিত হতো বৃহত্তর সিরিয়া অঞ্চলে অধিষ্ঠিত উমাইয়া বংশের মাধ্যমে। সেই আমল থেকেই আলজেরিয়ায় বিভিন্ন মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়। তবে অতিসম্প্রতি আলজেরিয়া মুসলিম বিশ্ব তথা সমগ্র বিশ্বের নজর কাড়ে একটি অত্যাধুনিক মসজিদ কেন্দ্র করে।

SM40.COM

বিগত ১৪৪৫ হিজরী সনের পবিত্র রমাদ্বান মাস শুরুর আগে (২৬ ফেব্রুয়ারি) আলজেরিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় আয়তনে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ও বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনারবিশিষ্ট মসজিদ। স্থানীয়ভাবে মসজিদটির নাম জমা এল জাজির মসজিদ (Djamaa el Djazaïr), (আরবিতে جامع الجزائر)।

আলজেরিয়ার রাজধানী ও দেশের সবচেয়ে বড় শহর হিসেবে পরিচিত আলজিয়ার্সে ২০১২ সালের ১৬ আগস্ট মসজিদটি নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ বুতেফ্লিকা। দুই যুগ ধরে দেশ শাসন করা এই প্রেসিডেন্ট দেশের জন্য তার অবদান স্মরণীয় করে রাখার প্রয়াসে এমন একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।

জার্মানের দুটি স্থাপত্য ও প্রকৌশলী কোম্পানির দ্বারা তৈরিকৃত নকশায় মসজিদ নির্মাণের দায়িত্ব পায় চীনের চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং। ৭ হাজার স্থানীয় শ্রমিক ও ১০ হাজার চীনা শ্রমিক, কারিগর ও প্রকৌশলী ৭ বছর পরিশ্রম করে এ মসজিদ নির্মাণ করে। ২০১৯ সালে মুসল্লিদের নামায আদায় ও পর্যটকদের পরিদর্শনের জন্য মসজিদটির একটি বড় অংশ খুলে দেওয়া হয়। তৎকালীন বাজারমূল্যে ২ দুই বিলিয়ন ডলারের এ মসজিদ নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করে ফ্রান্সের প্রকৌশলী পরামর্শের প্রতিষ্ঠান সেকোটেক।

প্রায় ২৮ হেক্টর (৬৯ একর) জমির ওপর নির্মিত হয় চারকোনা এ মসজিদ কমপ্লেক্স। বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য মসজিদটিকে আলোচনার শীর্ষে স্থান করে দিয়েছে। মসজিদের মূল যে অংশটা অর্থাৎ নামায কক্ষের আয়তন ২০ হাজার স্কয়ার মিটার বা ২ লাখ ২০ হাজার স্কয়ার ফুট, যেখানে ১ লাখ ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামায আদায় করতে পারেন। তার ওপরে গম্বুজের ব্যাসার্ধ ৫০ মিটার (১৬০ ফুট), যার চূড়ার উচ্চতা ৭০ মিটার (২৩০ ফুট)। সার্বিক বিচারে মক্কা শরীফের মসজিদ আল হারাম এবং মদীনা শরীফের মসজিদ আল নববী শরীফের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদের স্বীকৃতি পেয়েছে এ মসজিদটি। আবার সুউচ্চ মিনারের কারণে বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনার তথা সর্বোচ্চ মসজিদেরও দাবিদার এ জমা এল জাজির মসজিদ। এই মিনারের উচ্চতা ২৬৫ মিটার (৮৬৯ ফুট), যেখানে রয়েছে ৩৭ তলা ফ্লোর। এ মিনারটি ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় এবং প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয় প্রতিরোধক বলে দাবি নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের।

মসজিদে রয়েছে অষ্টভুজাকার ৬১৮টি কলাম। মসজিদজুড়ে লেজার কাট করে খোদাইকৃত কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ পাশাপাশি রাখলে তা ৬ কিলোমিটার অতিক্রম করবে। অন্যদিকে প্রায় ৯০ লাখ বই রয়েছে মসজিদের পাঠাগারে। বাইরের পার্কিং এরিয়ায় একসঙ্গে সাত সহস্রাধিক গাড়ি রাখা যায়।

অনেক আশা নিয়ে মসজিদে পরিকল্পনা ও নির্মাণকাজের উদ্বোধন করলেও আলজেরিয়ার দুই যুগের শাসক প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ ২০১৯ সালে গণআন্দোলন ও সামরিক বাহিনীর চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এবং ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার স্বপ্নের মসজিদ ও মিনার বেঁচে আছে মাথা উঁচু করে।

ছবির এলবাম