বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ
নিউজ ডেস্ক: ভারতের জন্য এখন ভালো সময় যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ কোভিড-১৯ ও তার পুরনো শত্রু চীনের সাথে সীমান্ত সঙ্ঘাত। তবে আরেকটি নতুন অস্বস্তি যোগ হয়েছে। আর তা অনেকটাই আচমকা এসেছে। এটি হলো, আইএমএফ আভাস দিয়েছে যে চলতি বছর বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে।
আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২০ সাল বাংলাদেশের জিডিপি হবে বেশি। তবে এই খবর ভারতের মিডিয়া ও রাজনৈতিক দুনিয়ায় বড় ধরনের ঝড়ের সৃষ্টি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে রাহুল গান্ধী যখন মোদির সমালোচনা করে, তখন ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক পাল্টা আক্রমণ করে জানায়, বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের জনসংখ্যা ৮ গুণ বেশি হলেও জিডিপি বেশি ১১ গুণ। এই খবরটি এত গুরুতরভাবে নেয়াটাই কিছুটা অপ্রত্যাশিত। এই অঞ্চলে ভারতই একমাত্র দেশ নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কাই তাদেরকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায়।
আইএমএফ কী বলছে?
আইএমএফ বলছে, ডলারের মূল্যে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৪ ভাগ বেড়ে ১,৮৮৮ ডলারে দাঁড়াবে। কিন্তু ভারতের ১০.৫ ভাগ হ্রাস পেয়ে হবে ১,৮৭৭ ডলার। চার বছরের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫.৪ ভাগ বেড়ে হবে ১,৯৯০ ডলার।
কিন্তু জনসাধারণ ও মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, ভারতের অর্থনীতি গুঁড়িয়ে যাচ্ছে, আর বাংলাদেশ তার স্থান গ্রহণ করছে। যা ভারতের জন্য ‘উইপোকা’ হওয়া মেনে নেয়া ভারতের জন্য কঠিন।
ভারত যে অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা গত সপ্তাহের রিজার্ভ ব্যাংকের প্রতিবেদনেও নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি বেশি দিন স্থায়ী হবে না।
ভারতীয়দের অহমিকায় আঘাত লেগেছে। ভারতীয় নিউজ ম্যাগাজিন দি ওয়্যার বলছে: এই পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে যা, তা হলো এই যে ৫ বছর আগে পর্যন্ত ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৪০ ভাগ বেশি। গত ৫ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে ৯.১ ভাগ করে, আর একই সময়ে ভারতের বেড়েছে ৩.২ ভাগ করে। ‘বাংলাদেশের জিডিপি ৮ ভাগ করে হতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
ভারতের তুলনামূলক জিডিপির রাজনীতি
রাহুল গান্ধী মূলত যা বলছে তা হলো এই যে ‘আপনি এতই খারাপ যে আপনি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ।’ এটি বাংলাদেশের হাতে পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেট পরাজয়ের প্রতিক্রিয়ার মতোই। বাংলাদেশের হাতে দিল্লী ও ইসলামাবাদের পরাজয়ের চেয়ে খারাপ কিছু আর হতে পারে না।
স্বাভাবিকভাবেই আরবিআই পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছে যে ক্রয়ক্ষমতা সূচকের (পিপিপি) দিক থেকে আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ৬,২৮৪ ডলার, আর বাংলাদেশের ৫,১৩৯ ডলার। ২০১৯ সালে ভারতের জিডিপি ছিল বাংলাদেশের চেয়ে ১১ গুণ বেশি, আর জনসংখ্যা ছিল ৮ গুণ বেশি। এ নিয়ে কারো সংশয় নেই, তবে ব্যবধানটি কমে আসছে।
পরিবর্তনশীল সময়
বাংলাদেশ অনেক দ্রুত বাড়ছে, ভারত ততটা নয়। কোভিড-১৯ একমাত্র কারণ নয়। নোট বাতিলকরণের মতো কিছু কিছু অর্থনৈতিক নীতি ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৯.১ ভাগ করে, আর ভারতের প্রায় ৩.২ ভাগ করে। আমদানি বাদ দিলে করোনা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুব বেশি ক্ষতির কারণ হয়নি।
সমস্যা সম্ভবত রয়েছে অন্যস্থানে। ভারতের মূলধারা মনে হচ্ছে স্থিতিবস্থায় আটকে আছে, যেখানে তার কল্পিত শ্রেষ্ঠত্বকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য কোনো পরিবর্তন হতে পারে না। খবরটি যে ধরনের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তা প্রায় হাস্যকর। বাংলাদেশে বলতে গেলে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও ভারতে ব্যাপক ‘গেল গেল রব’ পড়ে গেছে।
সীমান্তে চীন অবস্থান করছে, নেপাল নতুন মানচিত্র তৈরী করছে, বাংলাদেশ জিডিপিতে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত মনে করছে যে পুরনো ব্যবস্থা হুমকির মুখে।
চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত সঙ্ঘাত বড় ধরনের সামরিক ঘটনা না হলেও এতে দুটি বিষয় দেখা যাচ্ছে: ১. যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন সত্ত্বেও চীন-ভারত শান্তি ভারতীয় চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছে না। ২. আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভারত এখন অনেক বেশি নিঃসঙ্গ। প্রথমটি ব্যাপকভাবে জানা, তবে দ্বিতীয় ঘটনায় অনেক ভারতীয় শোকাহত।
মূলত ভারতের দায়িত্বে থাকা পুরনো দক্ষিণ এশিয়ার সমাপ্তি ঘটেছে। অন্যান্য রাষ্ট্র কেবল বিকশিতই হয়নি, তারা না ভারতের ওপর নির্ভরশীল, না তারা তাকে খুব পছন্দ করে। আর ভারত সত্যকে সহজে স্বীকার করতে চাচ্ছে না।
দক্ষিণ এশিয়া একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা। এ কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বে সে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারছে না। বস্তুত, দক্ষিণ এশিয়া ভারতের সাথে সমার্থক হয়ে পড়েছিল। তবে এখন ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো এগিয়ে যাওয়ায় ওই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। আর এই পরিবর্তনে প্রধান খেলোয়াড় হলো চীন। ভারত যদি সার্ককে ডুবিয়ে দিয়ে থাকে, তবে সে বিমসটেককেও ভাসাতে পারবে না। দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যরা বদলে গেছে।