ফিলিস্তিন ও ভারতসহ সারা বিশ্বে মুসলমানদের প্রতি অন্যায় জুলুম বন্ধ করে ইনসাফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতার ১৭ দফা দাবী
ডেস্ক: ফিলিস্তিন ও ভারতসহ সারা বিশ্বে মুসলমানদের প্রতি অন্যায় জুলুম বন্ধ করে ইনসাফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা ১৭ দফা দাবী উত্থাপন করেছে। আজ সোমবার রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে ফালইয়াফরাহু চত্বরে এক সমাবেশে তারা এ দাবী উত্থাপন করেন।
বক্তারা বলেন, “পৃথিবীর সমস্ত মুসলমান একটি দেহের মত। এই দেহের মধ্যে যদি তার চক্ষু পীড়িত হয় তবে তার সমগ্র দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে সমগ্র শরীরই অসুস্থ হয়ে পড়ে।”-এটা মুসলিম শরীফে বর্ণিত পবিত্র হাদীস শরীফ। তাই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে কোনো মুসলমানকে কষ্ট দিলে সারা পৃথিবীর সমস্ত মুসলমান কষ্ট পান।
সমাবেশে আরো বলা হয়, বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মানবতার বুলি উড়ানো পশ্চিমাদের সমর্থনে মুসলমানদের দেশ ফিলিস্তিনে ইহুদি পরগাছা ইসরাঈল কর্তৃক অবৈধ দখল পুনরুদ্ধার, অবৈধ ইহুদি দেশ ইসরাঈল মুসলিম দেশ ফিলিস্তিনকে দেয়ার দাবী, বিশ্ব সন্ত্রাসী জাতি ইহুদি কতৃক মুসলমানদের গণহারে শহীদ করা বন্ধের দাবী, ফিলিস্তিনে বেসামরিক লোকদেরকে অবরোধ করে ক্ষুৎপিপাসায় ধুঁকে ধুঁকে শহীদ করা, মুসলমানদের বাড়ি-ঘর, মসজিদ, গোরস্তান সব গুড়িয়ে দেয়া বন্ধ করা; পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মুসলমানদের প্রতিদিন বিভিন্ন অজুহাতে শহীদ করা, মুসলমান মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি করা এমনকি মৃত মুসলিম নারীদেরকেও কবর থেকে তুলে সম্ভ্রম করার মত ঘোষণা দেয়া, মুসলমানদেরকে মসজিদে ঢুকে শহীদ করার হুমকি দেয়া, বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমানদের বাড়ি-ঘর উচ্ছেদ করা, দোকানপাট লুট করা, মসজিদ-মাদরাসা-গোরস্থান গুড়িয়ে দিয়ে মাঠ বানানো, মন্দির বানানো এমনকি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানী করা, পবিত্র কুরআন শরীফ পুড়িয়ে দেয়াসহ মুসলমানদের প্রতি জুলুম নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে ১৭ দফা দাবী উত্থাপন করেছে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা।
১. ফিলিস্তিনের মুসলমানদেরকে অবশ্যই ফিলিস্তিন ভূখন্ড ফিরিয়ে দিতে হবে। ইসরাইল কোন বৈধ রাষ্ট্র নয়। ইসরাইলের সমস্ত ভূমির মালিক ফিলিস্তিনের মুসলিম জনগণ। তাই ইসরাইলকে বিলুপ্ত করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে।
২. ইউরোপ থেকে যে বিপুল সংখ্যক ইহুদি ফিলিস্তিন দখল করেছে তাদেরকে আবার ইউরোপে ফিরে যেতে হবে।
৩. ১৯৪৮ সালের ইহুদিসংঘ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের যে প্রস্তাব ফিলিস্তিন ভূখন্ডকে দ্বিখন্ডিত করেছে তা বাতিল করতে হবে।
৪. ইহুদিরা মুসলমানদের যত বসতবাড়ি, মসজিদ, গোরস্থান গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদেই ইসরাইলকে অবৈধ এবং সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে।
৬. পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশকে ফিলিস্তিনের সহযোগীতায় এগিয়ে আসতে হবে এবং সম্মিলিতভাবে অস্ত্র, সৈন্য, প্রযুক্তি, অর্থ সব কিছু দিয়ে ইসরাইল এবং তার সমর্থক সমগোত্রীয়দেরকে প্রতিহত করতে হবে।
৭. মুসলিম অমুসলিম সকল দেশকেই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তাকে কোনো রকম সহযোগিতা করা যাবেনা। ইসরাইলি এবং তার সহযোগীদের সকল পণ্যও বয়কট করতে হবে।
৮. পৃথিবীর সকল মুসলমানকেই ইসরাইলের এবং তার সমগোত্রীয়দের বিরুদ্ধে বদদোয়া করতে হবে। দোয়া মুসলমানের অস্ত্র। আর জালিমের বিরুদ্ধে বদদোয়া করা, জালিমকে ধংসের জন্য দোয়া করা ফরজ।
আমাদের দ্বিতীয় বিষয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত প্রসঙ্গে। উদ্বেগের এই বিষয়গুলোর প্রেক্ষিতে আমাদের দাবি-
১। ভারতে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি প্রত্যাহার করতে হবে।
২। গরুর গোস্ত খাওয়া বৈধ। এর জন্য আইন পাস করতে হবে। গরুর গোস্তের জন্য মুসলমান শহীদ করা যাবেনা।
৩। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা সহিংসতা উস্কে দেয় এমন ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪। মুসলমানদের মাদরাসাগুলো বন্ধ করা চলবেনা। যেসমস্ত মাদরাসা বন্ধ হয়েছে সেগুলো পুনরায় সরকারীভাবে চালু করতে হবে এবং মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৫। আসাম এবং অন্যান্য অঞ্চলে মুসলিম পরিবারদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। যেসব মুসলমানদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদেরকে মানবাধিকার নীতি এবং পর্যাপ্ত পুনর্বাসনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে হবে।
৬। মসজিদ, মাজার, ঈদগাহ এবং কবরস্থানসহ ধর্মীয় স্থানগুলিকে ধ্বংস ও অপবিত্রতা থেকে রক্ষা করতে হবে।
৭। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভিএইচপি, বজরং, শিবসেনা, গৌরখিয়াসহ সকল উগ্রবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। উগ্রবাদী হত্যা ও সম্ভমহানির উস্কানীদাতা সকল নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে শাস্তির বিধান করতে হবে।
৮। কাল্পনিক মামলার অজুহাতে মসজিদ ভাঙ্গা যাবে না।
৯। মুসলামনদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় নবী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানীকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
ভারতে মুসলমানদের ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা এবং নিপীড়ন কেবল একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমরা আশা করি যে ভারত সরকার এই প্রতিবাদের প্রাপ্য গুরুত্ব সহকারে সাড়া দেবে এবং তার সমস্ত নাগরিকের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
– প্রেস বিজ্ঞপ্তি