প্রধানমন্ত্রী ফিরলে ‘স্বল্প সময়ে’ কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন: নানক
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফর থেকে ফেরার পর ‘স্বল্প সময়ের’ মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
শুক্রবার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ আশ্বাস দেন তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে একদল চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থী। গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলে ঘরে ফেরেন তারা।
তবে এর আগেই এই আন্দোলন ঘিরে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পাঁচটি মামলা করে পুলিশ, যা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এরমধ্যে সম্প্রতি আন্দোলনকারী তিন শিক্ষার্থীকে ধরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে কিছু সময় পর ছেড়ে দেওয়া হয়, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়।এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্ন ন্যাম ভবনে নিজের বাসায় আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র নেতাদের নিয়ে বসেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এই বৈঠকে আন্দোলনকারীদের ১৫ জনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নানক ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণা কবে কীভাবে কার্যকর হবে, তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত নেওয়া হবে।
“রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। দেশে ফেরার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।”
‘গ্লোবাল সামিট অন উইমেনে’ যোগ দিতে এখন অস্ট্রেলিয়া আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন দিনের সফর শেষে রোববার দেশের পথে যাত্রা করবেন তিনি।
আন্দোলনকারীরা তার কথায় আস্থা রেখেছেন জানিয়ে নানক বলেন, তারা আগামী ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছে। তাদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে।
“তবে ভিসির বাংলোয় আক্রমণ ও ভাংচুরে জড়িতদের শাস্তি তারাও চেয়েছে।”
কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা
বৈঠকের পর ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ রাশেদ খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফরে থাকায় কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির জন্য ৭ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছি আমরা।“৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন। তারপর আমাদের বেঁধে দেওয়ার সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”
আগামী ৭ মে পর্যন্ত রাজপথে তাদের কোনো কর্মসূচি থাকছে না জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্বঘোষিত ৩০ এপ্রিলের ছাত্র-শিক্ষক মতবিনিময় সভা করবেন তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যাতে হয়রানি করা না হয় সেই বিষয়টি তারা আলোচনায় তুলেছিলেন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের এই শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, “উপাচার্যের বাসভবনে যারা হামলা ও ভাংচুরে জড়িত, তদন্ত করে তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দেওয়া অজ্ঞাতনামা যে মামলা, তা যেন তুলে নেওয়া হয়।”
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।আন্দোলনকারীরা কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে দুই মাস ধরে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, কোটা নিয়ে যেহেতু এত কিছু, সেহেতু কোনো কোটাই আর রাখা হবে না।
কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওই দিন বলেছিলেন সরকারপ্রধান।