পেঁয়াজ চাষে কৃষকের বিঘাপ্রতি ক্ষতি ১৩ হাজার টাকা
ফরিদপুর সংবাদদাতা: এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৬০-৬৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ৬৫ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও টাকা উঠে না। বিঘা প্রতি ১২-১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে। কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফূলসুতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি লোকমান মোল্লা। তিনি এবার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে হালি পেঁয়াজ উৎপাদন করেছেন।
পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৬৫ মণ করে। আর বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকা।
পেঁয়াজচাষিরা জানান, মৌসুমে পেঁয়াজ সংরক্ষণে জায়গার অভাব, শ্রমিকদের পাওনা ও আর্থিক প্রয়োজনে কম দামে তাদের পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়। পাশাপাশি পরবর্তী ফসল পাটের জন্য জমি প্রস্তুত, বীজ কেনা, সেচ ও শ্রমিকের খরচ যোগাতে হয় পেঁয়াজ বিক্রির টাকা দিয়ে। ফলে মৌসুমে দাম কম থাকায় তারা লাভবান হতে পারেন না।পরবর্তীতে দাম বাড়লেও এর সুফল পায় ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা।
ফরিদপুরের সালথার একজন চাষী জানান, আমার তিন বিঘা জমির পেঁয়াজ উৎপাদনে মোট খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো। পেঁয়াজ লাগানোর পর থেকে শুরু করে সার, সেচ, আগাছা দমন এবং ক্ষেত থেকে তুলে বাড়িতে আনতে সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকার মতো লোকসান গুণতে হচ্ছে।
সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি মুহম্মদ আশরাফ সরদার বলেন, একজন শ্রমিক নিলে তাকে দিতে হয় ৫০০ টাকা। তারপর দুপুর ও সকালের খাবার তো আছেই। সে মোট দেড় মণ পেঁয়াজ তুলতে পারে। যার দাম ৮০০ টাকা। তাহলে আমরা কী করে বাঁচব?
সালথা উপজেলার জয়কাইল বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মুহম্মদ খোকন শেখ জানান, তিনি গত ৫ বছর ধরে পেঁয়াজের ব্যবসা করছেন। কিন্তু এত কম দাম তিনি কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, এত কম দাম থাকলে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সালথার মুরাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফুলবাড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম খুবই কম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম মণ প্রতি ৮০০ টাকা দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রতি হাটে পেঁয়াজ কিনে সেদিনই ট্রাক ভর্তি করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই। বস্তা প্রতি আমাদের অল্প কিছু লাভ থাকে। মৌসুমের পেঁয়াজ আমরা সাধারণত সংরক্ষণ করি না।
ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মুহম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগই মৌসুমে বিক্রি করে দিতে হয়। পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ মেটাতে এবং পরবর্তী ফসল পাট চাষ করতে কৃষককে এটা করতে হয়। পাশাপাশি পেঁয়াজ সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতার কথাও বলেন এই কর্মকর্তা।