পৃথিবী ধ্বংস নিয়ে মিথ্যে প্রমাণিত অমুসলিমদের যত ভবিষ্যদ্বাণী

নিউজ নাইন২৪ ডেস্ক: সম্প্রতি বুলগেরিয়ার আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন অন্ধ নারী বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। তার কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা, ভারত উপকূলে সুনামি, আইএসের উত্থান প্রভৃতি বিষয়ে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমগুলোতে দাবি করা হচ্ছে। তবে পৃথিবী ধ্বংসের বিষয়ে বাবা ভাঙ্গা যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তা ইতিমধ্যে মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
শুধু বাবা ভাঙ্গা নয়, অনেকেই পৃথিবী ধ্বংসের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেসবও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আসুন জেনে নিই, পৃথিবী ধ্বংসের বিষয়ে মিথ্যে প্রমাণিত হওয়া ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর বিষয়ে।
মায়া পঞ্জিকা (Maya Calendar) : মায়া সভ্যতাকালে যে পঞ্জিকা তৈরি হয়েছিল, তাতে ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বেরের পরে আর কোনো দিন-ক্ষণ ছিল না। এমনকি এর পরে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণীও করা হয়েছিল। সে হিসেবে ২০১৩ সালের আগেই পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কথা ছিল। ওই আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন ২০১৬ সাল।
মধ্য আমেরিকার (বর্তমান মেক্সিকো) বিলুপ্ত জনগোষ্ঠী বা সভ্যতা ২০১২ সাল নিয়ে এ আশঙ্কার জন্ম দিয়েছিল। ৮ বা ৯ শতকে এ সভ্যতা বিলুপ্ত হলেও তাদের রেখে যাওয়া ক্যালেন্ডার বা দিনপঞ্জি ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর নিয়ে কল্পকাহিনির জন্ম দেয়। মায়া ক্যালেন্ডারে বিশ্বাসী অনেক আধ্যাত্মিক লোক মনে করতেন, এ দিনে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের বিশ্বাস ছিল, মায়া পঞ্জিকাতে যত ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তার প্রতিটিই কালের আবর্তে সত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মায়া ক্যালেন্ডারে ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বরের পরে আর কোনো দিনক্ষণের হিসাব উল্লেখ করা হয়নি। তাই ওই দিনকে মনে করা হতো পৃথিবীর শেষ দিন।
তবে প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলেছেন, প্রাচীন মায়া ক্যালেন্ডারে যা বলা হয়েছে, তার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাদের মতে, মায়া ক্যালেন্ডারে কোথাও বলা হয়নি যে, ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবীর শেষ দিন। তাদের মতে, মায়ারা সময়কে একটি চক্রের মধ্যে হিসাবে করত। যেখানে একটি চক্র শেষ হলে নতুন চক্রের বা সময়ের সূচনা হবে। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর ছিল একটি চক্রের শেষ দিন।
অ্যাপোক্রাইফা (The Apocrypha) : বাইবেলের একটি লাইনের অপব্যাখ্যা করে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে, ঈসা (আ.) এর মৃত্যুর এক প্রজন্ম পর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ইঞ্জিল শরিফের লাইনটি ছিল এরকম- ‘…that generation will not pass.’ এর অর্থ- ‘সেই প্রজন্ম পরিত্রাণ পাবে না।’ সে সময়ে প্রচলিত প্রথা অনুসারে, চার্চ থেকে মানুষ অর্থের বিনিময়ে স্বর্গ কিনতে পারতেন। চার্চে অনুদান দিয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত থেকে মুক্তি পেতেন। যেহেতু পৃথিবী শিগগির ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তাই অনেকে সর্বস্ব বিক্রি করে চার্চে অনুদান দিয়ে স্বর্গের টিকিট নিশ্চিত করার চেষ্টা করতেন। যেহেতু তখন ঘড়ি বা পঞ্জিকার প্রচলন ছিল না, তাই সাধারণ মানুষ দুনিয়া ধ্বংসের তারিখ হিসাবের ভার চার্চের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এর পর অনেক বছর কেটে গেলেও পৃথিবী ধ্বংস হয়নি। আসলে এটা ছিল ধর্ম ব্যবসায়ী পাদ্রিদের অর্থ কামানোর জন্য সুনিপুণ প্রতারণা।
দ্য ওয়াচটাওয়ার সোসাইটি (The Watchtower Society) : পুরো নাম- দ্য ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্রাক্ট সোসাইটি। এই ওয়াচটাওয়ার সোসাইটি একটি অদ্ভুত সোসাইটি। এরা অনেকবার পৃথিবী ধ্বংসের তারিখ নির্ধারণ করেছিল। এরা বলে, ‘যিশু শিগগির ফিরে এসে সবার বিচার করবেন।’ ভবিষ্যদ্বাণী অনেকবার মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ার পরও ওই সোসাইটি এখনো টিকে আছে এবং নতুন নতুন ভবিষ্যদ্বাণী করছে। অবাক করার বিষয় হলো, আজও কিছু লোক তাদের কথা বিশ্বাস করে। এরা প্রথমে দাবি করে যে, ১৮৭৪ সালে বিশ্ব ধ্বংস হবে। পরে আবার বলে, আগেরটা ভুল ছিল, পৃথিবী ধ্বংস হবে ১৯৪১ সালে। ওই সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পরও পৃথিবী টিকে থাকল। এরা অবশ্য এখন সুর পাল্টেছে। সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখের কথা না জানালেও তাদের দাবি, শিগগিরই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
নস্ট্রাডামাস (Nostradamus) : নস্ট্রাডামাস ছিলেন জনপ্রিয় গণক। তিনি জীবনে অনেকগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কাকতালীয়ভাবে এর কিছু ফলেছে। আসলে এগুলো বিভিন্ন ঘটনার সম্ভাব্য ফলাফল, যা তিনি অনুমান করে আগে বলতেন। তিনি সাধারণত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও বড় ঘটনার বিষয়ে পূর্বানুমান করতেন। তবে পৃথিবী ধ্বংসের ব্যাপারে নস্ট্রাডামাস যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে আলোচিত হয়েছিলেন নস্ট্রাডামাস।
স্বর্গের দরজা (Heavens Gate) : ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেও সান ডিয়েগোতে প্রতিষ্ঠিত ওই ধর্মীয় সংস্থার লোকরা বিশ্বাস করত পৃথিবী ভিনগ্রহবাসী দিয়ে ভরে গেছে। এমনকি বিভিন্ন দেশের সরকারের বেশির ভাগই এলিয়েন। ১৯৯৭ সালে এক উল্কাকে অনুসরণ করে আরো এলিয়েন পৃথিবীতে আসবে এবং তারা বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ নেবে। এলিয়েনরা পৃথিবীর সব মানুষকে দাস করে রাখবে বলে আশঙ্কা ছিল তাদের। তাদের ধারণা, এলিয়েনের কর্তৃত্ব থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় আত্মহত্যা করা। এ অন্ধবিশ্বাসে অনেক মানুষ আত্মহত্যাও করেছিল। ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ ওই সংস্থার ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার করে, যারা গণআত্মহত্যা করেছিল। সেই ১৯৯৭ সাল চলে গেছে। এলিয়েনরা আসেনি, পৃথিবীও দখল করেনি।

ওয়াইটুকে সমস্যা (Y2K Problem) : ২০০০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে, এই ধারণা থেকেই জন্ম নেয় Y2K (Year 2000)। সে সময় কম্পিউটারে ’৯৯ সালের পরের সাল অর্থাৎ ২০০০ উল্লেখ করা ছিল ০০ দিয়ে। তখন কেউ কেউ মনে করতেন যে, ২০০০ সালে সব কম্পিউটার আপনাআপনি বিগড়ে যাবে, নিউক্লিয়ার বোমাগুলো এই বিগড়ে যাওয়া কম্পিউটারের কারণে বিস্ফোরিত হবে। এতে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ২০০০ সাল পার হয়ে গেছে, কিন্তু পৃথিবী আজও টিকে আছে বহাল তবিয়তে।