পহেলা বৈশাখ হারাম: ‘আমিই এই দাবি তুলেছি এবং দাবিতে অটল আছি’ : হাসান শেখ শরীয়তপুরী
নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: গত শনিবার (৯ এপ্রিল, ২০১৬) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মানববন্ধনে হিন্দু সংস্কৃতি খ্যাত পহেলা বৈশাখকে ‘অনৈসলামিক’ ও হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি আখ্যায়িত করে তা নিষিদ্ধের দাবি জানান বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। তাদের এই দাবির পক্ষে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন মহলে মধ্যে ব্যাপক সাড়া পরিলক্ষিত হয়৷ এ বিষয়ে অনলাইনে বিডিনিউজের একটি জরিপেও ৭৪% মানুষ নববর্ষ ভাতার বিপক্ষে ভোট দেয়। সেখানে ওলামালীগের দাবি ছিলো (সরকারি চাকুরিজীবীদের) ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ভাতা বাতিল করে ঈদে মীলাদুন্নবী উপলক্ষে ভাতা প্রদান করতে হবে’- এ দাবির পক্ষে ভোট দেয় শতকরা ৭৪ ভাগ অনলাইন ব্যবহারকারী।
তবে ওলামা লীগের পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে অবস্থানকে সহজে মেনে নিতে পারেনি সংস্কৃতিবাদী ও বামপন্থী কিছু মহল। তাদের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা ও সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়। এরই সূত্র ধরে গত সোমবার (১১ এপ্রিল) ডয়চে ভেলে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরীর সাক্ষাৎকার নেয়। সাক্ষাৎকারে মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলিষ্ঠ ভাষায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শনিবার প্রেস ক্লাবের সামনে আমিই এই দাবি তুলেছি এবং দাবিতে অটল আছি৷”
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখ হিন্দুদের সংস্কৃতি, মুসলামানদের নয়৷ এই দেশের ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা পহেলা বৈশাখের নামে কোনো বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনা মেনে নেবে না৷”
ওলামা লীগের সেই মানববন্ধনের পর বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর ওলামা লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। ওলামা লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সাংবাদিকদের তীর্যক প্রশ্নে প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘‘ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই৷ ওটা বাটপারদের দল, যারা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে এ ধরনের দল বা সংগঠন করে৷ তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি৷ আওয়ামী ওলামা লীগের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে৷”
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিডিয়া বিষয়ক বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘‘ওলামা লীগ! এটা কি খায় না মাথায় দেয়? পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা আওয়ামী লীগের কেউ না, এ কথা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি…৷”
তবে এ সব কথারও জবাব দিয়েছেন ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক৷ তিনি বলেছেন, ‘‘হানিফ সাহেবেরা ব্যক্তিগতভাবে মনে করতে পারেন যে, ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের কেউ নয়৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো কিছু বলেননি৷ শেখ হাসিনা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন৷ তিনি ইসলাম প্রিয়৷ ইসলামের পক্ষেই তাঁর অবস্থান৷ আমরা ওলামা লীগের সদস্যরা জামায়াত-শিবির ও বিএনপিকে মোকাবেলা করেছি ৷ আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী ৷ বঙ্গবন্ধুই কিন্তু মদ, জুয়া, ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করেছিলেন।”
উল্লেখ্য, পহেলা বৈশাখের বিপক্ষে ওলামা লীগের শক্ত অবস্থান নেয়ার পর থেকে গণসাড়া পড়ে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে পান্তা ইলিশের রেওয়াজ থেকে এখন বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে সচেতন মহল। এ নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনও অুনষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক বলেন, ‘এখন রূপালী ইলিশের প্রজণনের মৌসুম। এ সময়ে রূপালী ইলিশ খাওয়া মানে হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা। তাই নববর্ষ উদযাপনে পান্তা-ইলিশ ছাড়া সব ধরনের আয়োজনই থাকবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।’ তিনি নববর্ষ উৎসবে পান্তা-ইলিশ খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
এছাড়াও পান্তা-ইলিশ খাওয়ার নব্যপ্রথা নিয়ে সমালোচনা করে তা বন্ধ করার দাবি জানান বিশেষজ্ঞ মহল।
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা বৈশাখের দিন তাঁর খাবারের মেন্যু থেকে বাদ দিয়েছেন ইলিশ। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে, প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে ঘটে যাওয়া নারী যৌন নিপীড়নের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার আলোকে এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কড়াকড়ির নির্দেশনা চলে এসেছে। এ ব্যপারে গত ৬ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ঘোষণা দিয়েছেন, “বিকাল ৪টার মধ্যে রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই সাথে বিকাল ৫টার মধ্যে এসব এলাকায় যত অনুষ্ঠান হবে, তা শেষ করতে হবে।”
একই সাথে বর্ষবরণের উৎসবে শব্দদূষণ ও অপরাধ ঠেকাতে নিষিদ্ধ হয়েছে ভুভুজেলা বাঁশি ও মুখোশ। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, এবার ভুভুজেলা নিষিদ্ধ থাকবে, সেইসঙ্গে মুখোশ পরা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।