পবিত্র দ্বীন ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যঃ ঢাবি শিক্ষককে লিগ্যাল নোটিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: মুসলিমদের শুদ্ধ উচ্চারণকে নিন্দনীয়, বেয়াদবিপূর্ণ ও জঘন্য ব্যাখ্যা প্রদান করে এসবকে জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত করায় অধ্যাপক, অপরাধতত্ত্ব বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিয়াউর রহমান কে লিগ্যাল নেটিশ পাঠিয়েছেন দৈনিক আল-ইহসান ও মাসিক আল-বাইয়্যিনাতের সম্পাদক মুহম্মদ মাহবুব আলম। সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট শেখ মুহম্মদ ওমর শরীফ আজ বৃহস্পতিবার নোটিশটি প্রেরণ করেন। আইনজীবী নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নোটিশে বলা হয়, সম্প্রতি “ডিবিসি নিউজ” টেলিভিশন চ্যানেলের “উপসংহার” নামক টক শো-তে “ধর্মের অপব্যাখ্যায় জঙ্গিবাদ” বিষয়ক আলোচনায় মুসলিমদের শুদ্ধ উচ্চারণে “আসসালামু আলাইকুম” বলা ও “আল্লাহ হাফেজ” বলাকে গর্হিত, নিন্দনীয়, বেয়াদবিপূর্ণ ও জঘন্য ব্যাখ্যা প্রদান করে এসবকে জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিয়াউর রহমান।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। “সালাম” আদান-প্রদান করা পবিত্র দ্বীন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। সালাম আদান-প্রদানের জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে বহুবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন, পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন:
– “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” [সূরা নূর, আয়াত ২৭]
– “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।” [সূরা নূর, আয়াত ৬১]
নোটিশে আরো বলা হয়, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও মহানবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-উনাদের প্রদত্ত নির্দেশ ও শিক্ষা অনুযায়ী শুদ্ধভাবে “সালাম” দেওয়াকে জিয়াউর রহমান অত্যন্ত গর্হিত, নিন্দনীয়, বেয়াদবিপূর্ণ ও জঘন্যভাবে জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত করেছে। এসব মন্তব্যের দ্বারা বাংলাদেশের মুসলিমদের শুদ্ধভাবে ধর্মীয় ইবাদাত পালনের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করতে চেয়েছে। এই ধরনের মন্তব্য ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক। মন্তব্যসমূহ বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করেছে।
নোটিশে আরো বলা হয়, “ডিবিসি নিউজ” টেলিভিশন চ্যানেলের “উপসংহার ” নামক টক শো-তে জিয়াউর রহমান ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অপরাধ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৮ ধারায় বলা হয়েছে:
(১) যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উস্কানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
একই আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে:
(১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তজ্জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
একইভাবে, এই মন্তব্যসমূহ বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ২৯৫(ক) ধারার অধীনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যেহেতু “ডিবিসি নিউজ” টেলিভিশন চ্যানেলের “উপসংহার” নামক টক শো-তে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। সেহেতু নোটিশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে নোটিশদাতা মুসলিম শিশুদের দ্বীনি শিক্ষা বিষয়ক আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চওয়ার জন্য বলেছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের বেআইনি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।