আজ দিবাগত রাতটিই পবিত্র আশূরা শরীফ
ডেস্ক: পবিত্র আশূরা শরীফ দিবসটি মূলত আক্বীদা বিশুদ্ধ করার ও আমলে ছলেহ বা নেক আমল করার বরকতময় রাত ও দিন। যার উসীলায় বান্দা-বান্দী ও উম্মত ইহকালে সর্বপ্রকার মুছীবত থেকে নাজাত লাভ করবে এবং পরকালে জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভ করে সম্মানিত জান্নাত লাভ করবে।
তাই প্রত্যেক বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য দায়িত্ব কর্তব্য হলো- পবিত্র আশূরা শরীফ উনার সম্মানার্থে আক্বীদা বিশুদ্ধ করে ও সংশ্লিষ্ট আমলগুলো করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের কোশেশ করা।
খালিছ ঈমানদার বা আল্লাহওয়ালা হতে হলে প্রথমতঃ আক্বীদা উনাকে বিশুদ্ধ করতে হবে অর্থাৎ প্রতি ক্ষেত্রে সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ প্রতি ক্ষেত্রে পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার ইত্তিবা অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত নেক আমলগুলো করতে হবে।
পবিত্র আশূরা শরীফ উনার সাথে আক্বীদা ও আমল দুটি বিষয়ই জড়িত রয়েছে। যেমন আক্বীদা সম্পর্কিত বিষয়গুলো হলো- অনেকে ক্বিল্লতে ইলিম ও কিল্লতে ফাহাম তথা কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার আলোচনায় হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে মনগড়া ও বানানো সমালোচনা বা দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! যেমন, তারা বলে থাকে যে, “পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার এবং অনেক হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের গুনাহখতা মাফ করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ একথা বলা ও এরূপ আক্বীদা পোষণ করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা পবিত্র আক্বাইদ শরীফ সম্পর্কিত কিতাবে উল্লেখ আছে, “সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শিরকী এবং সমস্ত প্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র অর্থাৎ মা’ছূম।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র আক্বাইদে নসফী শরীফ)
পবিত্র আশূরা শরীফ উনার আলোচনায় অনেকে এও বলে থাকে যে, ‘বিশিষ্ট ছাহাবী, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইয়াযীদকে ক্ষমতা দিয়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।’ নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! অথচ আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু সম্মানিত ছাহাবীই নন; বরং জলীলুল ক্বদর কাতিবে ওহী ও গুপ্তভেদ জাননেওয়ালা ছাহাবী। সুবহানাল্লাহ! আর পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া মতে- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কারো সম্পর্কে কোনো প্রকার সমালোচনা করা, বা কোনো প্রকার দোষারোপ করা কাট্টা কুফরী।
আর সম্মানিত পবিত্র আশূরা শরীফ উনার আমলগুলো হলো- ১. পরিববার-পরিজনের জন্য সাধ্যমত ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা। ২. পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে গোসল করা। ৩. চোখে ইছমিদ (মেশক মিশ্রিত) সূরমা দেয়া অথবা যেকোনো সুরমা দেয়া। ৪. ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো। ৫. গরিব-মিসকীনকে পানাহার করানো। ৬. নয় ও দশ অথবা দশ ও এগারো তারিখ দুটি রোযা রাখা। ৭. রোযাদারকে ইফতারী করানো। উল্লিখিত প্রতিটি আমলই খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
যারা পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন রোযা রাখবে, তারা পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রাত্রিতে ভালো খাবে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার হিসেবে রাত্রি আগে আসে আর দিন পরে আসে। সে হিসেবে এবছর আজ দিবাগত রাতটি হচ্ছেন পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রাত্রি। আর আগামীকাল রোববার দিনটিই পবিত্র আশূরা শরীফ। এদিনে রোযা রাখলে ষাট (৬০) বছর দিনে রোযা রাখার ও রাতে ইবাদত করার ফযীলত হাছিল হয় এবং বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই প্রত্যেক বান্দা-বান্দী ও উম্মতের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হলো, পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে আক্বীদা বিশুদ্ধ করে ও সংশ্লিষ্ট আমলগুলো করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি মুবারক হাছিলের কোশেশ করা।