দেশ ছাড়ছেন কানাডার নাগরিকসহ অভিবাসীরা, নেপথ্যে কারণ
ডেস্ক: পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রতিবছর হাজারো মানুষ পাড়ি জমান স্বপ্নের দেশ কানাডায়। তবে তাদের অনেকে এখন নেমেছেন টিকে থাকার লড়াইয়ে। কিন্তু বর্তমানে দেশটির নাগরিকেরাই সেই স্বপ্নের দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন। শুধু তাই না অভিবাসীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ার মধ্যে নতুন আগতরা, যারা এই দেশকে নিজের বাসভূমি বানাতে চেয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন কানাডা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। ম্যাকগিল ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব কানাডার এক গবেষণায় এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
উত্তর আমেরিকার এই দেশে জীবনযাপনের খরচ অনেক। আছে বাড়ির স্বল্পতা। অভিবাসীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ার মধ্যে নতুন আগত যারা এই দেশকে নিজের বাসভূমি বানাতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন কানাডার দিকে পেছন ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
কানাডার সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে দেশ ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন ৪০ লাখ মানুষ। যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়া ছাড়াও উত্তর আমেরিকার এই দেশে জীবনযাপনের খরচ অনেক। তার মধ্যে আছে আবার বাড়ি অর্থাৎ বাসস্থানের স্বল্পতা ও সংকট।
এদিকে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অন্তত ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা জীবনযাত্রার উঁচু ব্যয়ের কারণে কানাডা ছেড়ে চলে গেছেন অথবা যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। তাদেরই একজন কারা। এই নারী ২০২২ সালে হংকং থেকে কানাডায় এসেছিলেন শরণার্থী হিসেবে। টরন্টো শহরের পূর্বাঞ্চলে স্কারবরোতে তিনি এক রুমের একটি বেজমেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট থাকেন, যার জন্য তাকে ভাড়া গুনতে হয় ৬৫০ কানাডিয়ান ডলার, যা ৪৭৪ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। তিনি মাসে যা আয় করেন, তার ৩০ শতাংশই খরচ করতে হয় বাসাভাড়ার পেছনে।
২৫ বছর বয়সী এই নারী রয়টার্সকে আরো বলেন, ‘পশ্চিমা একটি দেশে বাস করতে গিয়ে আপনাকে বেজমেন্টের একটি রুমে থাকতে হবে, এটা আমি জীবনেও ভাবিনি।’ তিনি তার আসল নাম জানাননি, কারণ সম্প্রতি বাতিল করা এক্সট্রাডিশন বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ২০১৯ সালে তিনি হংকং থেকে পালিয়ে এসেছিলেন।
কারা তিনটি খণ্ডকালীন কাজ করেন। প্রতি ঘণ্টায় তিনি পান ১৬ দশমিক ৫৫ কানাডিয়ান ডলার, যা অন্টারিও প্রদেশে সর্বনিম্ন বেতন। এরপর তিনি বয়স্কদের জন্য নির্দিষ্ট একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি নেয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রতিটি পাইপয়সা খরচ করতে হচ্ছে।’ হংকংয়ে থাকতে তিনি মাসিক আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমাতে পারতেন।
কানাডার পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশটির নাগরিকদের প্রায় ৩১ শতাংশ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকগিল জানিয়েছে, নতুন নাগরিকদের ধরে রাখতে পারছে না কানাডা। দেশটিতে আসার চার থেকে সাত বছরের মধ্যে তারা দেশ ছাড়ছেন। ক্রয়ক্ষমতা সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়া এর অন্যতম কারণ।
এতে বলা হয়েছে, কানাডার সরকারের বিদেশি ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে অনমনীয়তা এবং অবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ফলে অভিবাসীরা দেশটিতে এসে পছন্দসই চাকরি খুঁজে পায় না। এজন্য তারা ক্যারিয়ার গড়তে হিমশিম খায়।
কানাডার নাগরিকদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক অভিবাসী বাবা-মার মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। এছাড়া এক-তৃতীয়াংশ জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। বাতি ১৫ শতাংশ অন্য দেশে জন্মগ্রহণ করে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। এসব নাগরিকের দেশ ছাড়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভ্রমণ, চাকরি এবং পড়াশোনার সুযোগ।
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশন অব কানাডার তথ্য বলছে, বিদেশে বসবাসকারী কানাডার নাগরিকদের বেশিরভাগ থাকেন হংকং, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে। সমীক্ষা বলছে, জনসংখ্যার তুলনায় কানাডার নাগরিকদের বিদেশে বসবাসকারীর সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পাঁচগুণ এবং যুক্তরাজ্যের সমান।
কানাডার নাগরিকদের নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি অনুমোদন করেছে বি সি সেন ইউয়েন পাউ উ–এর কার্যালয়। তারা বলছে, দেশ ছেড়ে যাওয়া নাগরিকদের সমর্থনের জন্য কানাডা আরো বেশকিছু করতে পারে। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রবাসীরা কানাডার কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থানের আরো প্রসার ঘটাতে পারেন।