দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির ভূমিকাকে স্যালুট জানাই

নিজস্ব প্রতিবেদন:

একঝাঁক দেশপ্রেমিক ঢাবি শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় অসামান্য ভূমিকা পালন করায় আমরা স্যালুট জানাচ্ছি সংগঠনটিকে। সংগঠনটির অব্যাহত প্রচেষ্টা ও দেশবাসীকে সচেতন করার কার্যক্রম পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অতএব, এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অতিসত্বর প্রত্যাহার করে তাদেরকে দেশের পক্ষে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।

‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্র বিরোধী পরিকল্পনা এবং ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র বিচ্ছিন্নতাবাদ বিরোধী বয়ানের মূল্যায়ন’ শীর্ষক জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে ‘সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ’ ব্যানারে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আজ (২৬ জানুয়ারি ২০২৫ রোববার দুপুর সাড়ে ৩’টায়) এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

আলোচনা সভায় দেশের বুদ্ধিজীবী, সাবেক বিচারপতি, রাষ্ট্রদূত, আর্মি অফিসার, সচিব ও আইনজীবীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

 

বক্তারা বলেন, সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পরিমার্জন কমিটিতে নিয়োগকৃত বহিরাগত লাল সন্ত্রাস রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদরা পাঠ্য বইতে রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইন বিরোধী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত করে। এটাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি, তাদের পৃষ্ঠপোষক ও দোসরদের আদিবাসী দাবীর অন্তরালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার সুপ্ত পরিকল্পনা দেশবাসীর কাছে ফাঁস করে দেয় দেশ রক্ষায় নিবেদিত ছাত্রদের প্লাটফর্ম ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। এই কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি, তাদের পৃষ্ঠপোষক ও দোসর বামপন্থী লাল সন্ত্রাসীরা একজোট হয়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রপাগান্ডা ও অপপ্রচারে মাঠে নেমেছে, মিথ্যা মামলা করেছে, দুজন শুভাকাঙ্ক্ষিকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে, হয়রানী করা হচ্ছে সংগঠনটির সদস্যদের, যা অত্যন্ত দু:খজনক এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী!

 

আমরা আশ্চর্য হচ্ছি যখন দেখছি- দেশ রক্ষাকারীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে জেলবন্দী করা হচ্ছে, আর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা ও অপরাধের বিরুদ্ধে থানা পুলিশ কোনো মামলা নিচ্ছে না। এটি দেশের সার্বভৌমত্বের সাথে এক ধরণের প্রহসন বৈ অন্য কিছু নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই, ধিক্কার জানাই দেশের দায়িত্বশীলদের প্রতি। দ্রুত এর অবসান কল্পে নিম্নোক্ত ৩ দফা দাবী বাস্তবায়ন করতে হবে-

 

১. দল মতের উর্দ্ধে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ একটি দেশ প্রেমিক ছাত্র সংগঠন, যারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় কাজ করছে। অবিলম্বে সংগঠনটির বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা তুলে নিতে হবে এবং বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

 

২. গত ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবনের সামনে পুলিশের ৪টি ব্যারিকেড ভেঙ্গে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির উপর আগে হামলা করে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি ও লাল সন্ত্রাসীরা, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত লাইভ ভিডিওতে দৃশ্যমান। ঐদিন সহিংস ঘটনা তৈরির অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও হোতা লাল সন্ত্রাস রাখাল রাহা, অলিক ম্রি ও আরমানুল হক গংদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সাথে আদিবাসী বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে দেশবাসীর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করায় এবং দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মে অংশ নেয়ায় দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

 

৩. ‘আদিবাসী’ শব্দটি সংবিধান বিরোধী ও দেশবিরোধী শব্দ। যে বা যারা ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি চাচ্ছে ও এই দাবীর পক্ষে কাজ করছে, প্রচারণা চালাচ্ছে তারা প্রত্যেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ও তাদের দোসর। রাষ্ট্রকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এই রাষ্ট্রদ্রোহীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

উপরোক্ত ৩ দফা দাবী রাষ্ট্রকে অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। নইলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর যে আস্থা আছে, দেশের জনগণ সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় সেটি হারিয়ে ফেলবে। অতএব অতিদ্রুত উপরোক্ত ৩টি দাবী বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, গত ৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে, ১২ জুনুয়ারি এনসিটিবির সম্মুখে এবং সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবী নিয়ে এবং বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইতে সংবিধান বিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শব্দ ‘আদিবাসী’ যুক্ত গ্রাফিতি সংযোজনকারী লাল সন্ত্রাসী রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদ গংয়ের অপসারণের দাবীতে এনসিটিবিতে যায় পূর্ব নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী। সেখানে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির মুহম্মদ জিয়াউল হক, ইয়াকুব মজুমদার ও শাহাদাত ফরাজী সাকিব (জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য) সহ ৬ জন প্রতিনিধিকে ডেকে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করতে। কিন্তু সভারেন্টির প্রতিনিধি দলকে চেয়ারম্যানের পরিবর্তে পরিমার্জন কমিটির বহিরাগত রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদের সাথ বসিয়ে দেয়। এতে সভারেন্টির প্রতিনিধিরা আপত্তি জানালেও লাল সন্ত্রাস রাখাল রাহা সময় ক্ষেপন করে। বার বার আপত্তি সত্ত্বেও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিদের মিছিল এনসিটিবি পর্যন্ত পৌঁছে সহিংসতা সৃষ্টি পর্যন্ত সময় ক্ষেপন করতে থাকে রাখা রাহা।

 

সভারেন্টির প্রতিনিধি দল এতে ব্যাপক আপত্তি জানালে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে পৌঁছার আশঙ্কায় পুলিশ এসে দ্রুত আলোচনা শেষ করতে বলে। কিন্তু এরপরেও রাখাল রাহা এক ধরণের আটকে রাখার মত সভারেন্টির প্রতিনিধিদের সময় নষ্ট করতে থাকে। অবশেষে রাখাল রাহাদের পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়; বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিদের অতর্কিত হামলায় দিশেহারা সভারেন্টির পক্ষের লোকজন আত্মরক্ষার্থে ব্যবস্থা নেয়। ফলে অনেকে হতাহতের শিকার হয়। এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনারত সভারেন্টির প্রতিনিধিরা তখনো জানেন না নিচে কী হচ্ছে। পরবর্তিতে পুলিশ এসে বিস্তারিত জানালে আলোচনা কিছুটা অসম্পূর্ণ রেখেই সভারেন্টির প্রতিনিধিরা নিচে চলে আসেন।

এর পরপরই অনলাইন অফলাইনে উপজাতি নিপীড়নের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়, সভারেন্টিকে বিতর্কিত করার শতভাগ চেষ্টা চালানো হয়। মিথ্যা মামলা, দুজনকে গ্রেপ্তার, সদস্য ও পক্ষের লোকদেরকে হয়রানী করা হয়।

 

উল্লেখ্য, বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি ও লাল সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলা প্রতিহতকালীন মুহম্মদ জিয়াউল হক, ইয়াকুব মজুমদার ও শাহাদাত ফরাজী সাকিব এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের সাথে ৬ তলায় মিটিংয়ে ছিলেন অথচ এই তিনজনকেও হামলাকারী হিসেবে মামলার আসামি করা হয়। যার দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের করা এই মামলাটি মিথ্যা ও বানোয়াট।

 

‘সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের’ এর তীব্র নিন্দা জানায় ও প্রশাসনকে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, সভারেন্টির উপর এই হামলা-মামলা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত; যেই কারণে রাখাল রাহা সভারেন্টির প্রতিনিধিদের আটকে রেখে সময় ক্ষেপন করিয়ে উপজাতি কর্তৃক সহিংস ঘটনার সুযোগ তৈরি করে দেয়। আমরা এর বিচার চাই। দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

 

বক্তারা বলেন, কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায় যে, খ্রিস্টান মিশনারীদের এজেন্ট উগ্র বিচ্ছিন্নতাবাদী অলিক ম্রি ও ছাত্র ফেডারেশনের লাল সন্ত্রাস আরমানুল হক গংদের নেতৃত্বে বিচ্ছিন্নতাবাদী মিছিলটি অত্যন্ত উগ্র কায়দায় পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী (ব্যারিকেড) ভেঙ্গে নৃশংসভাবে সভারেন্টির পক্ষের লোকজনের উপর হামলা করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় জান বাঁচাতে সভারেন্টির পক্ষের লোকজন আত্মরক্ষার্থে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করে।

 

অতএব, মূল দোষী প্রথম হামলাকারী উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও লাল সন্ত্রাসীরা। এদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে হবে এবং গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সভারেন্টি আত্মরক্ষার্থে বিচ্ছিন্নতবাদীদের প্রতিহত করেছে মাত্র। বাংলাদেশ দন্ডবিধি, ১৮৬০ এ ‘সাধারণ ব্যতিক্রম’ পরিচ্ছেদে ৯৬-১০৬ নং ধারা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি তার শরীর ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কারো কোনো ক্ষতি হলে আইনের চোখে তা অপরাধ নয়। কাজেই আত্মরক্ষার অধিকার স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির রয়েছে। এনসিটিবির পাদদেশে সভারেন্টির পক্ষের লোকজন আত্মরক্ষার কাজটিই করেছে।

অতএব, বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি কর্তৃক দায়েরকৃত স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সদস্য ও পক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ উপরোক্ত ৩ দফা দাবী অনতিবিলম্বে সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে। নইলে দেশব্যাপী বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ইনশায়াল্লাহ!

 

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন, এ্যাডভোকেট আলম খান, সাবেক সচিব ড. জাকারিয়া, ব্যারিস্টার (মেজর অব:) সারোয়ার, কর্নেল (অব:) হাসিনুর রহমান, বিশ্ববার্তা সম্পাদক আরিফুর রহমান, লে: কর্নেল ফরিদ আকবর, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক সহ দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, কূটনীতিক, ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।