ঢাকার যানজট নিরসনে ৪ দাবি
আজকে দক্ষিণ ঢাকার সর্বত্র যানজট। জুরাইন থেকে ২ঘন্টায় মতিঝিল আসছি। মতিঝিল থেকে হেটে হেটে রাজারবাগ পর্যন্ত আসছি। আরামবাগ দিয়ে আসার সময় দেখলাম রাস্তা বন্ধ করে বিএনপির কার্যালয়ে মিটিং হচ্ছে।
লক্ষ লক্ষ মানুষকে যানজটে আটকে রেখে, জনজীবন স্থবির করে দিয়ে, হাজার হাজার নারী-শিশু, বয়স্ক, রোগীদের কষ্ট দিয়ে, মানুষের মূল্যবান কর্মঘন্টা নষ্ট করে, দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মিটিং মিছিল করে। আরা আমরা সেই দৃশ্য দেখে নীরবে সহ্য করে যাই। কিছু লোক রাগে ক্ষেবে গালি গালাজ করে, কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ বা প্রতিবাদ আমাদের সমাজের কেউ করেনা।
এই নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যাটি নিরসনে আমি একজন ভুক্তভোগী নাগরিক হিসেবে আজকে কিছু দাবি তুলে ধরছি। আপনি যদি এসব সমস্যার সমাধান চান তাহলে দাবিগুলো শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
যানজট নিরসনে দাবীসমূহ-
দাবি এক:
শহর বিকেন্দ্রীকরণ: ঢাকার মতো সমান সুযোগ সুবিধা প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বাস্তবায়িত করতে হবে। এরপর জেলা শহরগুলো উন্নত করতে হবে। উন্নত বলতে- উন্নত কর্মসংস্থান, থাকার পরিবেশ, আধুনিক চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থা, ব্যবসা বাণিজ্য, কল কারখানা, রাস্তা ঘাট, শপিংমল ইত্যাদি। নতুন করে করা সময় সাপেক্ষ; তাই রাজধানীতে থাকা গার্মেন্টস, কলকারখানা, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ঢাকার বাহিরের জেলাগুলোতে স্থানান্তর করতে হবে (যেভাবে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে সাভারে নেয়া হয়েছে)। পাশপাশি বিভিন্ন জেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কল কারখানাগুলো চালু করতে হবে। এতে করে ওইসকল কর্মসংস্থানের উপর নির্ভরশীল লোকবল ঢাকা ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় স্থানান্তরিত হবে।
অন্যান্য জেলা শহরগুলো উন্নত করা হলে আশা করা যায় ঈদের সময় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম হবে। কারণ নিজ জেলা শহরে উন্নত আবাসন ও কর্মসংস্থান পেলে কেউ মা বাবা পরিবার পরিজন থেকে ঢাকায় আসবেনা।
এই প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ৭০ ভাগ মানুষ ঢাকা থেকে স্থানান্তর করতে হবে।
দাবি দুই:
রাজধানীর সড়কে রাজনৈতিক দলের সভা-সেমিনার, মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ করতে হবে। কেউ নিষেধ অমান্য করে করার চেষ্টা করলে তাকে গ্রেপ্তার করে জেল জরিমানা করার আইন করতে হবে।
দাবি তিন:
রাজধানীর ফুটপাথে অস্থায়ী দোকান-ব্যবসার উপর জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক লক্ষ মানুষ। তাদেরকে যার যার জেলা শহরে ব্যবসা করার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে স্থানান্তরিত করতে হবে।
দাবি চার:
সড়কের উপর গাড়ি রেখে (রাস্তায় যানজট তৈরি করে) কোন আন্তঃজেলা পরিবহন যাত্রী তুলতে পারবেনা। ঢাকার ভেতরে কোন বাস টার্মিনাল ও বাস স্ট্যান্ডগুলো রাখা যাবেনা। তবে আন্তঃজেলা পরিবহনগুলো ঢাকার অভ্যন্তরে টিকেট কাউন্টার রাখতে পারবে এবং সেখান থেকে যার যার যাত্রী তুলে নেয়ার জন্য শাটল সার্ভিসের টার্মিনাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে।
এই চারটি দাবি বাস্তবায়িত হলে আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, ঢাকার যানজট অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
মনে রাখতে হবে যানজট মানেই ট্রাফিক। ট্রাফিক মানেই পরিবহন। যত মানুষ ততো পরিবহন, ততো যানজট। তাই যানজট নিরসনে ট্রাফিক কমাতে হবে। তবে মানুষের রুজি রোগগারের ক্ষতি করে নয় বরং আগের চেয়ে ভালো সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেই বিক্রেন্দ্রিকরণ করতে হবে।