উপজাতীদের ‘আদিবাসী’ বলায় প্রধান উপদেষ্টাকে ক্ষমা চাইতে হবে

পা্হাড়ে উপজাতিদের পল্রী

আদিবাসী বলতে বুঝায় কোনো দেশ বা স্থানের আদিম অধিবাসী বা অতিপ্রাচীনকাল থেকে বসবাসরত জনগোষ্ঠীই ওই অঞ্চলের আদিবাসী। সেই অর্থে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে বসবাসরত বাঙালিরাই এ দেশের আদিবাসী।

গতকাল রোববার জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে নব্য প্রধান উপদেষ্টা ডা. ইউনুস পার্বত্য উপজাতি গোষ্ঠীকে আদিবাসী বলে সম্বোধন করেছে, যা এক মারাত্মক ভুল ও বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান বিরোধী এবং স্বাধীন  স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।

বর্তমানে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে বিভিন্ন সময়ে আগত অন্যান্য নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে অভিবাসী বটে, তবে আদিবাসী নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শত শত বছর পূর্বেও বাঙালি ছিল। সেখানে আশপাশের দেশ থেকে আগত নৃ-গোষ্ঠীর জনগণ আজ এ দেশের নাগরিক হয়েছে। কিন্তু তাদের আদিনিবাস বাংলাদেশ নয়।

কোন জাতি, উপজাতি গোত্র কোন সময়ে বাংলাদেশে এসেছে তার তালিকা ও একনজরে ইতিহাস।

চাকমা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এসেছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কাছাকাছি চম্পক নগর থেকে। ত্রিপুরা (তিপ্রা) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আদিনিবাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মারমাদের নামের উৎপত্তি হয়েছে বার্মিজ শব্দ ‘মায়ানমা’ থেকে, যার অর্থ বার্মা বা মিয়ানমারে আদিবাসী। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মণিপুরীরা এসেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল মণিপুর রাজ্য থেকে। ম্রো নৃ-গোষ্ঠী বা মুরং উপজাতিরা সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে আরাকান থেকে পালিয়ে এসেছে। একইভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইনদের উৎপত্তিগত ইতিহাসও একই। এরা মগ নামে পরিচিত। আঠারো শতকের শেষে এরা মায়ানমারের আরাকান থেকে বাংলাদেশে এসে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও পটুয়াখালীতে বসতি স্থাপন করে।

এই রকম করে প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। তাদের আদিনিবাস কখনোই বাংলাদেশ নয়, বরং ভারত, মায়ানমার বা ভিন্ন কোন রাষ্ট্র। সুতরাং তাদেরকে আদিবাসী বলার কোন সুযোগ নেই, বরং তারা অভিবাসী। এজন্য বাংলাদেশের আইনে এদেরকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যা বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৩ (ক) উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য চরম ভুল এবং বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান বিরোধী এবং দেশদ্রোহিতার শামিল।

মূলকথা হলো- পার্বত্য উপজাতি গোষ্ঠী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, তারা আদিবাসী নয়। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে উপজাতিদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে সম্বোধন করেছে, এটা তার ভুল হয়েছে। এ জন্য তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। নয়ত তাকে পদত্যাগ করতে হবে। বাংলাদেশের আইনে পার্বত্য উপজাতি গোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, যা সংবিধানেও উল্লেখ আছে। অতএব, তাদেরকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে সম্বোধন করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- আদিবাসী নিয়ে তার বক্তব্য অতিসত্বর প্রত্যাহারপূর্বক ক্ষমা চাওয়া।

– মুহম্মদ ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ, কলামিস্ট

sm40.com