বিপিসির ‘গচ্চা’ যাবে ৫০ কোটি টাকা!

লোকসানের মুখে বিপিসি

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)কম দামে সেবা কিনে বছরে ৫০ কোটি টাকা আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। রবিবারের (৫ মে) এক বৈঠকে খোদ মন্ত্রণালয় বিপিসির এত কম দামে সেবা কেনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে বিপিসি এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও ধারণা দিতে পারেনি। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেডও (সিএনএস) বিষয়টি তাদের ব্যবসায়িক কৌশল বলে এড়িয়ে গেছে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জ্বালানি বিভাগের ওই বৈঠকে সিএনএসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এত কম মূল্যে যেহেতু সেবা দেওয়া সম্ভব নয়, তাই এখানে তাদের আয়ের উৎস কী।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জ্বালানি বিভাগ, বিপিসি এবং সিএনএসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে এতে জ্বালানি বিভাগ এবং বিপিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বিপিসি বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানিপণ্য বেচে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম কোম্পানির মাধ্যমে এসব পণ্য ডিলার পর্যায়ে বেচা হয়। নিজের কোম্পানির কাছ থেকে বেচা অর্থ বিপিসির হিসাবে জমা হতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। এজন্য অটোমেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে বিপিসি অর্থ আদায়ের জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেডকে (সিএনএস) নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই কার্যাদেশ দেওয়া হবে বলে বিপিসি জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী জানতে চান, এত কম মূল্যে কীভাবে এই সেবা কেনা হচ্ছে? উত্তরে বিপিসি জানিয়েছে, তারা জানে না কীভাবে এত কমে সেবা দেওয়া সম্ভব। সিএনএস-ও এত কম দামে কীভাবে সেবা বেচতে যাচ্ছে জানতে চাইলে তারাও বিষয়টি পরিষ্কার করেনি। তবে তাদের তরফ থেকে জানানো হয়, এটি তাদের গোপন ব্যবসায়িক কৌশল। পরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কোনও গোপন আয় না থাকলে এভাবে এত কমে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।’
প্রসঙ্গত, গত বছরও বিপিসি ৪৯ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি বেচেছে। বাৎসরিক পাঁচ শতাংশ হারে তাদের বিক্রি বাড়ছে। বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসাব করলেও পাঁচ বছরে ২৫ বিলিয়ন ডলার আদায় করে দেবে সিএনএস। কিন্তু এ জন্য পাঁচ বছরে তাদের পরিশোধ করতে হবে মাত্র ১০ লাখ টাকার মতো।
জানা গেছে, বিপিসি বিপণন কোম্পানির কাছে যে জ্বালানি বেচে তা ব্যাংক পে-অর্ডারের মাধ্যমে আদায় করা হয়। মূল সমস্যা এখানেই বলে জানান একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, যে ব্যাংকে আদায় হবে ওই ব্যাংকের এসএনডি (শর্ট নোটিশ ডিপোজিট বা স্বল্পমেয়াদের আমানত) হিসাবে বিপিসির টাকা জমা থাকবে। এই হিসাব নিয়ন্ত্রণ করবে জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানি এবং সিএনএস।
মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বৈঠকের বরাত দিয়ে জানান, দৈনিক প্রায় ২০০ কোটি টাকা এই ব্যাংক হিসাবে প্রবেশ করবে। এ অনুযায়ী আট দিনে হিসাবে প্রবেশ করবে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আট দিনের শর্ত মানলে বিপিসির হিসাবে হস্তান্তর হওয়ার কথা ২০০ কোটি টাকা। এভাবে হিসাবটিতে সব সময় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা জমা থাকবে। যা থেকে বাৎসরিক সুদ পাওয়া যাবে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী এই টাকা বিপিসির পাওয়ার কথা, কিন্তু এখানে ছাড় দেওয়া হচ্ছে আট দিনের শর্তের কথা বলে। ওই শর্তে আট দিনের হিসাব হলেও সারা বছরই ওই ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা থাকবে। যাতে সুদ বাবদ আয়ে কোনও হেরফের হবে না।
জানতে চাইলে বিপিসি চেয়ারম্যান মো. শামসুর রহমান বলেন, ‘কীভাবে এত কম দরে তারা (সিএনএস) সেবা দেবে তা নিয়ে বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কোম্পানিটি ব্যাংক থেকে কমিশন পাবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’ তবে কীভাবে এই কমিশন পাবে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নয় জানিয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছে, আমরা ব্যাংকে কিছু সফটওয়ার এবং যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবো, এভাবেই আমরা কমিশন পাবো।’ এই প্রক্রিয়ায় বিপিসির বাৎসরিক আয় ২৫০ কোটি টাকা বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে মাসের পর মাস বকেয়া থাকতো এখন সেখানে আমরা আট দিন পরেই টাকা পেয়ে যাবো।’