‘পদ্মা সেতু’র গল্প বলতে গিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
ডেস্ক: আজ শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগ মুহূর্তে সুধী সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে স্বাধীনতার পর থেকে পদ্মসেতুর গল্প শোনালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একটি নিরবচ্ছিন্ন এবং কার্যকর যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি যমুনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে জাপান সফরকালে যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য তিনি জাপান সরকারের সহায়তা চান। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন আমি ওই সেতুর উদ্বোধন করি।
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে জাপান সফরকালে আমি পদ্মা নদী এবং রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সহযোগিতা চাই। জাপান সরকার দুটি নদীর ওপরই সেতু নির্মাণে রাজি হয়। আমার অনুরোধে ওই মেয়াদেই রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যেহেতু পদ্মা অনেক খরস্রোতা, বিশাল নদী, তাই পদ্মা নদীর সমীক্ষার প্রয়োজন হয়। ২০০১ সালের মাঝামাঝি পদ্মার নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার কাজ শেষ করে জাপান। স্থান নির্বাচন করে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। তখন ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। তারা মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণ করতে দেয়নি। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচায় পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান বর্তমান মাওয়া-জাজিরা প্রান্তকেই বাছাই করে পদ্মা সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১-২০০৬ মেয়াদে এই সেতু নির্মাণের বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আবার সরকার পরিচালনার দায়িত্বে এসে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে আসি। জাপানের সমীক্ষার ভিত্তিতেই এই সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেই। সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার ২২ দিনের মাথায় সেতুর নকশা তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেই। অনেক আলাপ-আলোচনার পর বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা এই সেতু নির্মাণে টাকা দিতে সম্মত হয়। কিন্তু আমাদের দেশের একটা ব্যাংকের এমডি ৭০ বছরের বেশি বয়সে পদে থাকার জন্য ষড়যন্ত্র করেন। তখন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যায়। পরে অন্য অংশীদাররা বিশ্বব্যাংকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। আমরা এটা চ্যালেঞ্জ নিলাম।
তিনি আরও বলেন, তারপর পানি অনেক ঘোলা করা হয়েছে। তথাকথিত নাগরিক সমাজের একশ্রেণির প্রতিনিধি, কতিপয় মিডিয়া, স্বঘোষিত অর্থনীতিবিদরা সরকারের তীব্র সমালোচনায় মেতে ওঠেন। অনেকটা চিলে কান নিয়ে গেছে প্রবাদ বাক্যের মতো অবস্থা। কেউ ন্যূনতম অনুসন্ধান পর্যন্ত করলেন না যে, যে প্রকল্প একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে তাতে কীভাবে দুর্নীতি হতে পারে? দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে জানাল যে, কোন দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু তাদের কথা কেউ বিশ্বাস করলেন না। বাংলাদেশ আমাদের দেশ। যতই অপবাদ দিক। আমি তখন সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করবো। তখন বাংলাদেশের জনগণ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। জনগণের শক্তিটাই বড় শক্তি। জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে পরামর্শক টিমও আমাদের পাশে ছিল। যেসব প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ছিল, তারাও আমাদের পাশে ছিল। কৃতজ্ঞাতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। তারা শুধু পাশে দাঁড়ায়নি, টাকাও দিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা। আমি তাদের স্যালুট জানাই।