অসহযোগ আন্দোলনের ১ম দিন: কোথায় কতজনের মৃত্যু
ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রবিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২০ জেলায় অন্তত ৯৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন, ঢাকায় ১৩ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, ফেনীতে ৭ জন, নরসিংদীতে ৬ জন, সিলেটে ৫ জন, শেরপুরে ৫ জন, রংপুরে ৪ জন, মাগুরায় ৪ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, পাবনায় ৩ জন, বগুড়ায় ৩ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, জয়পুরহাটে ২ জন, বরিশালে ১ জন, হবিগঞ্জে ১ জন, কক্সবাজারে ১ জন, ভোলায় ১ জন ও গাজীপুরে ১ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ, হাসপাতাল ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে নিহতের এ সংখ্যা জানা গেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার (৪ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সোমবার থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ এবং সারা দেশের নিম্ন আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে কোর্ট প্রশাসন। দেশের সব তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিজিএমইএ। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে আজ সোমবার করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীসহ সব অভিভাবককে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছে সরকার।
সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন নিহত:
সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এনায়েতপুর থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রাজশাহী রেঞ্জের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইডি বিজয় বসাক। তিনি বলেন, কারা এই হামলা চালিয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা ওই এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করছি, কিন্তু এখনো পারছি না।
এদিকে রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাজারে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে সাংবাদিকসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- দৈনিক খবরপত্রর রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিক(৫০), ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার লিটন (৫৫), তার ভাই গোলাম হাসনাত টিটো(৪০), রাশগঞ্জ উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ইলিয়াস (৪০), সাধারণ সম্পাদক আলামিন হোসেন (৩৭), রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৪০)।
এ ছাড়া, সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকায় আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- শহরের পৌর এলাকার মাসুমপুর মহল্লার মাজেদ রহমানের ছেলে রঞ্জু রহমান। তিনি জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক। এছাড়া শহরের গয়লা মহল্লার গনজের আলীর ছেলের সুমন শেখ (২৮) ও একই মহল্লার মৃত আসু মুন্সীর ছেলে আবদুল লতিফ (৪২)।
লক্ষ্মীপুরে ৮ জন নিহত:
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত এবং শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ দুইশতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতরা কলেজছাত্র হলেন- মো. কাউসার, আফরান, সাব্বির ও মিজান হোসেন। এছাড়া যুবগীলগের নিহতরা হলেন, হারুন মেম্বার, মো. সুমন, রিয়াজ পাটওয়ারী ও অজ্ঞাত একজন। এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরূপ পাল।
ফেনীতে ৭ জন নিহত:
ফেনীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নিহতরা হলেন- ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ (১৯), সদর উপজেলার দক্ষিণ কাশিমপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন (১৮), ফাজিলপুর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম (২০), সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে শকিব (২১)। এছাড়া, সরোয়ার হোসেন মাসুদ, আরাফাত এবং বিপ্লব নামে অপর তিনজনের লাশ মিললেও বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নরসিংদীতে ৬ জন নিহত:
নরসিংদীতে ছয়জন আওয়ামী লীগের নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাধবধী পৌর ভবনের পাশে বড় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মাধবধী পৌরসভার মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহীন (৪০), স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরুর নাতি মাধবদী থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), মহিষাশুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল (৪০), আওয়ামী লীগ নেতা মোক্তার হোসেন (৩৫) ও সজিব হোসেন (৩২)।
ফেনীতে ৫ জন নিহত:
ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা অসহযোগের সমর্থনে মহিপাল এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। তবে দুপুর দুইটার দিকে মহিপাল সেতুর নিচে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে হতাহতদের ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আসিফ ইকবাল দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বলেন, এ মুহূর্তে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঁচজনের লাশ রয়েছে। তারা সবাই মহিপালে সংঘর্ষের ঘটনায় মারা গেছেন।
সিলেটে ৫ জন নিহত:
সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পৃথক স্থানে গুলিতে ৫ জন নিহত হয়েছেন। সিলেটে পুলিশ বক্স, নির্বাচন অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নগরজুড়ে ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালায় আন্দোলনাকরীরা। এ নিয়ে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ৫ জনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ। নিহতরা হলেন— গোলাপগঞ্জ উপজেলার ধারাবহর গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪০), উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮) ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম, গোচ মিয়া (৪০), মিনহাজ উদ্দিন (২২)
শেরপুর ৫ জন নিহত: কোটা বিরোধীদের এক দফা দাবির অসহযোগ আন্দোলনে শেরপুরে আন্দোলনকারী ৫ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- মাহবুবুল ইসলাম (২৪), সবুজ মিয়া (১৯), সজিব মিয়া (২১), মিম আক্তার (২২) ও তুষার মিয়া (২৪)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. হুমায়ূন আহমেদ নূর।
রংপুরে ৪ জন নিহত:
রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বে থাকা আব্দুল জলিল দুজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও দুজন নিহতের তথ্য জানান। নগরীর পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা ও তার গাড়িচালক সংঘর্ষের সময় নিহত হন। তাদের মরদেহ সিটি করপোরেশন গেটের সামনে পড়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
মাগুরায় ৪ জন নিহত:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সকাল থেকেই উত্তপ্ত মাগুরা। দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মেহেদী হাসান রাব্বীসহ ৪ জন মারা গেছেন। রাব্বী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক। অপর তিনজন শিক্ষার্থী হলেন ফরহাদ হোসেন ও সুমন শেখ, আহাদ মোল্লা। গুরুতর আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। ছাত্রদল নেতা রাব্বীর বাড়ি শহরের বৈরনাতুল গ্রামে। শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেনের বাড়ী শ্রীপুরের রায়নগরে। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সুমন শেখের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়ন এবং আহাদ মোল্লার বাড়ি একই উপজেলায়।
মুন্সীগঞ্জে ৩ জন নিহত:
মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। গুলিবিদ্ধ একজন ঢাকায় আনার পথে সিরাজখানে মারা যান। নিহতদের বয়স ২২-২৫ বছর। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. আবু হেনা জামাল।
পাবনায় ৩ জন নিহত:
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে গুলিবিদ্ধ তিন শিক্ষার্থী পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান। সংঘর্ষে আরো বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আছেন। তাদের মধ্যে কয়েজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বগুড়ায় ৩ জন নিহত:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে বগুড়ায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। বগুড়ার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে তারা। দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শামসুন্নাহার বলেন, ১২ জন চিকিৎসা নিতে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে যান। তার মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হয়েছেন। তার নাম মনিরুল ইসলাম (২৪)। অন্যদিকে আহত চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই হাসপাতালেও একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জে ৩ জন নিহত:
কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৬ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন এবং শতাধিক আহতের খরব পাওয়া গেছে। জীবন নামে একজন সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জানিয়েছেন, তিনি সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন আহত রোগী নিয়ে যাওয়ার পর একজনকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করতে দেখেছেন। এ ছাড়া তিনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে শহরের স্টেশন রোড এলাকায় দুজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। কিশোরগঞ্জের শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক দিদার মোহাম্মদ তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাট্যাস দিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে ৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।
কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন নিহত:
কুমিল্লায় দিনভর সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। দুর্বৃত্তরা ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের কনস্টেবল এরশাদ আলীকে (২৮) থানায় ঢুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ সময় হামলায় আহত হন ওসি মঞ্জুর আহমেদ। দেবিদ্বার উপজেলা সদরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আবদুর রাজ্জাক রুবেল নামে এক বাসচালককে কুপিয়ে ও গুলি করে দুর্বত্তরা। তিনি পৌরসভার বারেরা এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।
এদিকে রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ বছরের অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বী জানান, আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন স্থানে আহত ৩২ জনকে ভর্তি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
জয়পুরহাটে ২ জন নিহত:
বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জয়পুরহাট শহর। এ সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন দুইজন। তারা হলেন, মেহেদী হাসান ও রফিকুজ্জামান রহিম (৫৩)। রফিকুজ্জামান রহিম জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বরিশালে ১ জন নিহত:
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বরিশালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও মেডিকেল সূত্র তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টুটুল চৌধুরীর ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ঘণ্টাখানেক পর তিনি মারা যান। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, তার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
হবিগঞ্জে ১ জন নিহত:
হবিগঞ্জে আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে আওয়ামী লীগ ও এর সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত ও কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। নিহত রিপন শীল (২৭) চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে মারা যান।
কক্সবাজারে ১ জন নিহত:
সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজারের ঘুনগাছতলা এলাকায় আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে গেলে সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, গুলিবিদ্ধ ১৫ জন তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন এবং অপর একজনের অবস্থা গুরুতর।
ভোলায় ১ জন নিহত:
ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে দুপুরে এক জন নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
গাজীপুরে ১ জন নিহত:
গাজীপুরের শ্রীপুরের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তোফাজ্জল হোসেন (২২) নামে এক নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তিনি বাড়ি পার্শ্ববর্তী নগর হাওলা গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে কালিয়াকৈর উপজেলায় আন্দোলনকারীরা বিকেলের দিকে সফিপুর আনসার প্রশিক্ষণ একাডেমির সামনে অবস্থান নিলে রাবার বুলেট ছোড়েন আনসার সদস্যরা। এতে শিশুসহ দুই শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর আগে দুপুরে কালিয়াকৈর থানার সামনে বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে আহত হন আরও অন্তত ৫০ জন। পরে আন্দোলনকারীরা চন্দ্রায় আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে এবং হাইওয়ে পুলিশের একটি বক্সে আগুন দেয়।
ঢাকায় ১৩ জন নিহত: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আজ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং চারজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব এই প্রকৌশলী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য।
বাকি নিহতরা হলেন, সকালে শাহবাগ এলাকায় সেলিম (৪০) নামের এক ব্যক্তি ইটের আঘাতে আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জিগাতলায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তার নাম আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। কারওয়ান বাজার এলাকায় সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নামের বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রমিজের বাড়ি রংপুরে।
সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে রেজাউল করিম নামের এক কিশোরের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন কয়েকজন। সে যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিয়াজুল নামের ৩৫ বছরের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
সন্ধ্যার পর ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত আটটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে জুয়েল (২৮) নামের এক যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন কয়েকজন পথচারী। এ ছাড়া জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া এক কিশোরের লাশ রাতে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। ওই কিশোরের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে তাহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি গত বছর সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তাহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বাড়ি কুমিল্লায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের লাশ নেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান জানিয়েছেন। তবে তিনি নিহতের বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেননি।
এ ছাড়া, ধামরাই ও কেরানীগঞ্জে নিহত হয়েছেন দুইজন। ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া গেছে। যুবকের পিঠে গুলির চিহ্ন রয়েছে। কেরানীগঞ্জে একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় অফিসের ভেতর আটকা পড়ে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. ইফতি (৩২) নামের একজন নিহত ও প্রায় ১৫ জন আহত হন।