সাম্প্রদায়িকতার গোড়ায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়!

মুসলমানদের নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ কটুক্তির সংস্কৃতির শুরুটা হয়েছিলো কোত্থেকে? এসব সাম্প্রদায়িকতার চর্চা মূলত ১৯ শতকের সাহিত্যের মাধ্যমে শুরু হয়। বাংলা সাহিত্যের তথাকথিত ‘রেনেসাঁর’ সাহিত্যিক, উজ্জ্বল নক্ষত্র বঙ্গিক চট্টোপাধ্যায় সেই চর্চার অন্যতম পুরোধা।

রাজসিংহ উপন্যাসে বঙ্কিম কোনো কারণ ছাড়াই জৈনক হিন্দু মহিলাদের দিয়ে মোগল বাদশাহদের দাড়ি নিয়ে মশকরা করেছেন। হাস্যকর চিত্রের মাধ্যমে বিখ্যাত প্রজা দয়ালু বাদশার মুখে ও নাকে লাথি মেরে নাক মুখ ভাঙ্গা ব্যবস্থা করেছিলেন । এরচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক মুসলিম বিদ্বেষী লেখা আর কি হতে পারে?

সে জন্যই হয়ত আহমদ ছফা মন্তব্য করেন; “বাংলাদেশ বিভাগ করার জন্য কোনো একজন ব্যক্তিকে যদি দায়ী করতে হয়,তিনি অবশ্যই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যয়”। “শতবর্ষের ফেরারি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়” প্রবন্ধে সমাজ বিজ্ঞানী আহমদ ছফা বলেন, ঔপন্যাসিক হিসেবে বঙ্কিম ছিলেন চরম সাম্প্রদায়িক। একটা হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন। আর সেটা মুসলমানদের পুরো অস্বীকার করে। “বঙ্কিমের কল্পিত হিন্দু রাষ্ট্র হিন্দু সমাজের একটা বিরাট অংশের মন-মানস অধিকার করে নিয়েছিলো এবং সেখান থেকেই মুসলমান সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার সূচনা”।

আহমদ ছফা এত নিখুতভাবে বঙ্গিকের সাহিত্যিক চরিত্র অংকন করেছেন,যেটা এর আগে কোন বাংলাদেশী সাহিত্যিক করেছেন কিনা আমাদের জানা নাই। তিনি আরো বলেন- “… ভারতে বৃটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকেই ভারতের আত্মবিস্মৃত হিন্দুরা হিন্দুসত্তা তথা ভারতীয় সত্তা ফিরে পেতে আরম্ভ করেন, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠে তার সূচনা এবং বাবরী মসজিদ ধবংসের মাধ্যমে হিন্দুসত্তা চূড়ান্ত সার্থকথার সাথে বিরাট একটা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পেরেছে। একটি হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন নির্মাণ করে ভারতীয় হিন্দুদের যথার্থ পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্কিম। দেখা যাচ্ছে, আজকের ভারতবর্ষেও বঙ্কিমের রাষ্ট্রচিন্তা অসম্ভব রকম জীবন্ত। ঘোষিতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত রাষ্ট্রের কর্ণধারদের পক্ষেও বঙ্কিমের চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না”