বাস চালাচ্ছেন লকডাউনে কর্মহীন টিটিসির প্রশিক্ষক

রাজশাহী সংবাদদাতা : লকডাউনে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলেছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষগুলোকে। অষোঘিত লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়ে বেকার অনেক পেশাজীবী। এমনই একজন আমির হোসেন। তিনি পেশায় প্রশিক্ষক। তবে এখন সংসারের চাকা সচল রাখতে শক্ত হাতে ধরেছেন যাত্রীবাহী বাসের স্টিয়ারিং। অনেকটা বাধ্য হয়েই এই পথে নেমেছেন তিনি।

আমির হোসেন রাজশাহী সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) মোটর ড্রাইভিং উইথ বেসিক মেইনটেন্যান্স কোর্সের প্রশিক্ষক। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে রাজশাহী টিটিসিতে কর্মরত।

আমির হোসেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কৈলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা। অঘোষিত লকডাউনে রাজশাহী টিটিসি বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই অবস্থান করছেন তিনি।

২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছর ধরে ভারী মোটরযান চালিয়েছেন আমির হোসেন। ২০১৩ সালের শুরুতে প্রশিক্ষক হিসেবে সরকারের একটি প্রকল্পে কর্মজীবন শুরু করেন। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানসহ ছয় সদস্যের পরিবার চলে একমাত্র তার আয়েই। মেয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। একমাত্র ছেলে মহেশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সংসার খরচ ছাড়াও সন্তানদের পড়ালেখার খরচও জোগান দিতে হয় তাকেই।

আমির হোসেন জানান, তার আয়ের একমাত্র উৎস চাকরি। কিন্তু অষোঘিত লকডাউনে টিটিসি বন্ধ থাকায় তিনি বাধ্য হয়ে আবারও আগের পেশায় ফিরে গেছেন। গত ১৪ জুন থেকে মহেশপুর-ঢাকা রুটে আল-মুবারাকা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস চালাচ্ছেন। কখনোই ভাবেননি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন।  স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেপ) প্রকল্পে কর্মরত প্রত্যেকেরই একই দশা।

জানা গেছে, সেপ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬১টি টিটিসি, ২১টি টিএসসি এবং ২১টি বিআরটিসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এই কোর্স চালমান। দেশে দক্ষ চালক তৈরিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর আওতায় ওই ১০৩ ইনস্টিটিউটে একজন করে অতিথি প্রশিক্ষক, সহকারী এবং মেকানিক কর্মরত।অষোঘিত লকডাউনে এরা সবাই এখন কর্মহীন। অষোঘিত লকডাউনে বিপর্যন্ত হলেও এদের কেউই পাননি সরকারি সহায়তা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ মোটর ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আমির হোসেন বলেন, তারা অষোঘিত লকডাউনে সহায়তা চান না। কেবল চান চাকরির স্থায়ী বন্দোবস্ত। সেটি না হলেও অষোঘিত লকডাউনে নিয়মিত সম্মানির নিশ্চয়তা চান। যাতে তারা পরিবার নিয়ে চরম মানবিক সংকটে না পড়েন।

জানতে চাইলে রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, সেপ প্রকল্পে প্রশিক্ষণার্থীরা অষোঘিত লকডাউনেকালে বিশেষ সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু প্রশিক্ষকসহ অন্য কর্মীদের বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। তারা অর্ধেক এমনকি পুরো সম্মানি পেতে পারেন। কেবল রাজশাহী নয়, দেশজুড়ে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।