চার শীর্ষ ব্যাংকের দ্বিধায় বৈশ্বিক অর্থনীতির পতন স্পষ্ট

ডেস্ক: বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না নীতিনির্ধারকরা। শীর্ষস্থানীয় চারটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিনব প্রণোদনা অব্যাহত থাকায় এমন আভাস মিলছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনই সুদহার বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট আশাবাদী হতে পারছে না। খবর রয়টার্স।

ফেডারেল রিজার্ভ, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই), সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ও ব্যাংক অব জাপানের (বিওজে) সিদ্ধান্ত-প্রণেতারা আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসছেন। চার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা পরস্পরের দু-একদিন আগে-পরে বৈঠক করলেও নতুন কোনো সিদ্ধান্ত তারা জানাবেন বলে মনে হয় না। অগ্রসর অর্থনীতির চারটি দেশই মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু তার পরও তারা এ ব্যাপারে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা না-থাকার পক্ষে প্রচারণা শেষ হচ্ছে আগামী সপ্তাহে। ২৩ জুন ব্রিটিশ ভোটাররা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। ব্রিটিশ গণভোটকে দেখা হচ্ছে চলতি বছরের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ ইভেন্ট হিসেবে। ব্রিটেন ইইউ ছাড়লে লন্ডন, ব্রাসেলস এবং সারা ইউরোপে কী হবে সে কথা ভেবে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন।

বিশ্বজুড়ে অর্থবাজার-সংশ্লিষ্টরা থমকে আছেন। এ কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ক্ষুধা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সঞ্চিত নিরাপত্তা জালে কামড় পড়ছে বলে মন্তব্য করেন ক্রেডিট এগ্রিকোল করপোরেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ের (সিএ-সিআইবি) ভ্যালেন্টিন মারিনভ। সিএ-সিআইবির জি১০ এফএক্স স্ট্র্যাটেজির প্রধান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রি, আবাসন, মূল্যস্ফীতিসহ বেশকিছু উপখাতের পরিসংখ্যান আসছে এ সপ্তাহে। কমার্জব্যাংকের ক্রিস্টফ বালজ বলেন, ইতিবাচক ছবি পেলে ফেড হয়তো সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে জুলাইয়ে সুদহার বৃদ্ধি করবে।

তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই ফেডারেল রিজার্ভ জুনে সুদহার বৃদ্ধি করবে না।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের অবস্থাও ফেডের মতো। ইইউ গণভোটের আগে বিওই নীতি পরিবর্তনের ঝুঁকি নেবে না। বরং সম্ভাব্য ‘লিভ’ ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে বাজারে তারল্যপ্রবাহ ধরে রাখতে কন্টিনজেন্সি পরিকল্পনা নেবে।
ব্রিটেনের মূল্যস্ফীতি দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির আভাস দেয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ১ শতাংশে স্থির থাকবে। বেকারত্বের এমন হারকে শতভাগ কর্মসংস্থান বললে কৌশলগত ভুল হবে না। কিন্তু ব্রিটেনের অর্থনীতি বছরের শুরু থেকেই শ্লথ রয়েছে। অনেকের মতে, গণভোটের কাঁপুনিতে অর্থনীতির গতি কমেছে। এ অবস্থায় সুদহার বৃদ্ধির পরিবর্তে সুদহার হ্রাসের কথাই এখন আলোচনা হচ্ছে।

জাপানে মূল্যস্ফীতির অবস্থা দুই দশক ধরেই ভালো নয়। অচিরেই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কোনো আশা নেই। এজন্যই বিওজেকে ফেডের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন পথে চলতে হচ্ছে। ১৫ জুনের বৈঠকে ফেড সুদহার বহাল রাখবে। জুলাইয়ে সুদহার কিছুটা বাড়ানো হবে।

ফেডের একদিন পর ১৬ জুন বৈঠক করবে বিওজে। তারাও এবার একই রকম সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু জুলাইয়ে ফেড যেখানে সুদ হার বাড়াবে, বিওজে তখন আরো প্রণোদনা ঘোষণা করবে।

ইয়েনের বিনিময় হার বিওজের পরবর্তী সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু ইয়েন পুরোপুরি বিওজের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হয় না। একই অবস্থা সুইস ফ্রাঁর। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রাটিও এসএনবির পুরো নিয়ন্ত্রণে নেই। জুরিখের বৈঠকেও নীতিনির্ধারকরা ফেড, বিওই ও বিওজের মতো সিদ্ধান্ত নেবেন। নেতিবাচক সুদহার বহাল রাখবে এসএনবি।