ভারতের সাথে ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ আড়াল করতে ‘সন্ত্রাসবাদ’ কৌশল : বিএনপি

বিএনপি লোগো

ঢাকা: ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে সন্ত্রাসী তৎপরতাকে কৌশলে সামনে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, সরকার পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসীবাদের সামগ্রিক তৎপরতা আড়াল করছে।’

‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রাক্কালে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রতিবাদে সারা দেশ যখন ফুঁসে উঠছে ঠিক তখনই আবারো দেশব্যাপী রক্তাক্ত সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কৌশল হিসেবে দেখছে জনগণ। সন্ত্রাসীবাদ নিয়ে দেশের মানুষকে গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে ফেলে রাখা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীর নামে যাদেরকে সন্দেহমূলকভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গেই হত্যা করা হচ্ছে, সেটিও রহস্যের জন্ম দিচ্ছে। বর্তমানে গুম-অপহরণের অধিকাংশ ঘটনা পুলিশ থানায় নথিভুক্ত করতে চায় না। সন্ত্রাসী দমনে সরকারের রহস্যজনক আচরণের কারণেই সন্ত্রাসীবাদ নির্মূল হচ্ছে না।’ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। রিজভী বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদী হামলার বেনিফিসিয়ারি কারা? কারা সন্ত্রাসীবাদকে জিইয়ে রেখে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে? এ বিষয়টি জনগণের কাছে এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে বানচাল করার জন্যই সন্ত্রাসীবাদ তৎপরতা সৃষ্টি করা হয়েছে।’

সরকার সন্ত্রাসীবাদ নির্মূলে আন্তরিক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুম, অপহরণের কোনো অনুমোদন আমাদের সংবিধানে নেই। তাই সন্ত্রাসী নির্মূলে সরকারের প্রশ্নবোধক দমননীতি যেমন সংবিধান অনুমোদন করে না, অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে হত্যার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীবাদের নেটওয়ার্কও অজানা থেকে যাচ্ছে।’

প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণমাধ্যমে এত খবর বের হচ্ছে, আপনাদের দলের বিভিন্ন নেতারা প্রতিরক্ষা চুক্তি বিষয়ে নানা কথা বলছেন; অথচ সে বিষয়টি আপনার মতো কেবিনেট মন্ত্রীরা জানেন না, নাকি বেমালুম চেপে যাচ্ছেন। এখানেই তো আসল রহস্য লুকিয়ে আছে।’

দেশের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিরক্ষা চুক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, যা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব নিয়ে কখনোই ছিনিমিনি খেলতে দেবে না জনগণ।’ রিজভী বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে এমনও কথা শোনা যাচ্ছে যে, দুই দেশ সম্মীলিতভাবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধ্বংসী কোনো গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে একসঙ্গে তা মোকাবিলা করবে। এর অর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেয়া। এর ফলে যা হবে সেটি হচ্ছে-ভারতের আগ্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সোচ্চার জনগোষ্ঠীকে যাতে দমন করা সহজ হয়।’

‘আমরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো বিদেশী সৈন্যকে বরদাস্ত করা হবে না। এদেশের জনগণ ভারতের সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে রণ-দুন্দুভি বাজিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে,’ বলেন বিএনপির এই নেতা।