নিহত বাবুর্চীকে ‘হামলাকারী’ ভেবে গুলি করা হয়েছে : পুলিশ

ডেস্ক: গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় যৌথ বাহিনীর গুলিতে যে ছয়জন হামলাকারী সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে তাদের একজনের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর পুলিশ বলছে, তাদের একজনকে ভুলবশত হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত ওই ব্যক্তি হয়তো হামলাকারীদের হাতে জিম্মি হয়েছিলেন। কিন্তু তাকে হামলাকারী ভেবে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকায় পুলিশের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, নিহত ওই ব্যক্তির নাম সাইফুল ইসলাম চৌকিদার। হলি আর্টিজান বেকারিতে তিনি পিৎজা বানাতেন।
শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের পর আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো তারা ছ’জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে। কিন্তু আইএস’র দেয়া পাঁচজন জিহাদির ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশ্ন উঠে আরেকজন ‘জঙ্গি’ তাহলে কে?
এর মধ্যেই পুলিশ নিহত পাঁচজনের মরদেহের ছবি প্রকাশ করে।
তখন প্রশ্ন উঠে আইএসপিআরের বক্তব্য অনুযায়ী আরেকজন হামলাকারী কোথায় গেলো।
তারপরেই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ যে ৫ জনের মৃতদেহের ছবি প্রকাশ করেছে তাদের একজন জঙ্গি নন। তিনি ওই রেস্তোরাঁর একজন বাবুর্চি। হামলার সময় জিহাদিরা তাকেও জিম্মি করেছিলো।
হামলার চারদিনের মাথায় ঢাকার গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় পাঁচজন জঙ্গিসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে।
ছয়জন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়ে থাকলে পাঁচজনকে আসামী করা হলো কেনো বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নের জবাবে ওই থানার একজন পুলিশ বলেছেন, নিহতদের মধ্যে একজন ওই রেস্তোরাঁর কুক ছিলেন বলে তারা পরে জানতে পেরেছেন।
তবে ওই কুক নিরাপত্তার বাহিনীর গুলিতে নাকি হামলাকারীদের হাতে মারা গেছেন সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। -বিবিসি।

গত শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেঁস্তোরায় ঢুকে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে। জিম্মিদের উদ্ধার করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলি ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম। এ ছাড়া আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট অভিযান’ চালিয়ে রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়।সেখান থেকে ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত এবং ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়।

শনিবার দুপুরে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অভিযানের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, অভিযানে সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয়। আহত হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ সদস্য। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে হামলার পর জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী উল্লেখ করে পাঁচ তরুণের ছবি প্রকাশ করে। শনিবার রাতে ওই ছবিগুলো প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।

ছয় সন্ত্রাসী নিহতের কথা বলা হলেও পুলিশ সদর দপ্তর রেস্তোরাঁয় হামলাকারী উল্লেখ করে পাঁচজনের লাশের ছবি প্রকাশ করে। পুলিশ তাদের নামও জানায়, আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। তবে আরেক সন্ত্রাসীর ছবি ও নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি তারা।

প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের পাঠানো লাশের ওই ছবি ও নাম নিয়ে। পুলিশ তাদের নাম জানায় আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। আর টেররিজম মনিটরের টুইটার অ্যাকাউন্টে ওই তরুণদের ছবি দিয়ে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- আবু উমায়ের, আবু সালাম, আবু রাহিক, আবু মুসলিম ও আবু মুহারিব।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে জানা যায়, হামলাকারীদের চারজনের নাম নিব্রাস ইসলাম, মীর সাবিহ মুবাশ্বের, রোহান ইমতিয়াজ ও রাইয়ান মিনহাজ।

তবে সাইট ইন্টেলিজেন্সের টুইটারে ছবি প্রকাশের পর সংবাদমাধ্যমের কাছে পুলিশের পাঠানো হামলাকারীদের লাশের ছবিতে রোহান ইমতিয়াজের ছবি নেই।

রোহান ইমতিয়াজের বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল সদ্য বিলুপ্ত অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব।

ফেসবুকে প্রকাশিত আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, হলি আর্টিজান বেকারি প্রাঙ্গণে পাঁচজনের মরদেহ পড়ে আছে। সেখানে কোনো মরদেহের গায়ে সাদা পোশাক ছিল না। অথচ পুলিশের পাঠানো ছবিতে দেখা যায়, বাবুর্চির সাদা পোশাক পরা সাইফুল চোখ বন্ধ করে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন।