মুসলমানদের ধ্বংস করার ডাক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মতাদর্শিক পৃষ্ঠপোষক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংস্থা (আরএসএস) এক আলোচনা সভায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত লড়াইয়ের’ মধ্য দিয়ে তাদের ধ্বংস করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

সংঘ পরিবারের পক্ষ থেকে মুসলমানদের ‘রাক্ষস’ ও ‘রাবনের উত্তরসূরি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ‘মুসলমানদের কোনঠাসা করতে ও রাক্ষসদের ধ্বংস করতে’ হিন্দুদের প্রতি আহ্বানও জানায় বক্তারা।

মুসলমানদের ধ্বংস করার ডাক সংঘ পরিবারের-India express
ছবি: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত খবর

ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস খবরটি সোমবার প্রধান শিরোনাম করেছে।

রোববার উত্তরপ্রদেশের আগ্রাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক কর্মীর শোকসভায় বক্তব্যে উপস্থিতি আলোচকরা এ হুঁশিয়ারি দেন।

কয়েকজন মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে অরুণ মাহাউর নামের ওই শ্রমিককে হত্যার অভিযোগ তোলা হয়। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির এমপি রাম শংকর কাথেরিয়া। ছিলেন বিজেপির ফতেহপুর সিকরির এমপি বাবু লালসহ স্থানীয় নেতারা।

উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক বলেন, ‘আপনাদের গুলি ছুঁড়তে হবে, হাতে রাইফেল তুলে নিতে হবে, ছুরি চালাতে হবে। নির্বাচন ২০১৭ সালে, কিন্তু এখন থেকেই আপনাদের শক্তি দেখাতে হবে।’

এ সময় উপস্থিত ৫ হাজার মানুষ স্লোগান দেন ‘যে হিন্দুর রক্ত গরম হয় না, সে সত্যিকার হিন্দু না’। কঠোর নিরাপত্তায় আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জয় ও বজরঙ্গ দলের নেতারা। বক্তব্যে সুরেন্দ্র প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন মুজাফফর নগরে কী ঘটেছে। আগ্রাকে মুজাফফর নগরে রূপান্তরিত করবেন না।’

রাম শংকর কাথেরিয়া বলেন, ‘আমাদের নিজেদের শক্তিশালী করে তুলতে হবে। আমাদের লড়াই শুরু করতে হবে। আমরা যদি লড়াই শুরু না করি তাহলে, আজ আমরা অরুনকে হারিয়েছি, কাল আরেকজনকে হারাব। আরেকজনকে হারানোর আগে আমাদের অবশ্যই নিজেদের শক্তি দেখাতে হবে যাতে খুনিরা পালিয়ে যায়।’

অরুনের হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করে কাথেরিয়া বলেন, ‘প্রশাসন মনে করতে পারে আমি মন্ত্রী হয়ে গেছি। তাই আমি কিছু বলতে পারব না। কিন্তু আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। বুধবার ও শুক্রবার আমাদের কলোনিতে শোকসভা করব। এরপর নেতারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা হবে। যদি তারা বলেন রাজপথ দখল করতে, তাহলে রাস্তায় নামবে লাখো মানুষ। দেখি কেউ আমাদের আটকানোর চেষ্টা করে কিনা।’

এমপি বাবু লাল মুসলমানদের উন্মুক্ত লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা করতে আসবেন না… আমাদের ধর্মের কারও প্রতি অবমাননা সহ্য করা হবে না। আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না, কিন্তু আপনারা যদি হিন্দুদের পরীক্ষা করতে চান তাহলে তারিখ ঠিক করে মুসলমানদের শিক্ষা দেওয়া হবে।’

স্থানীয় বিজেপি নেতা কুন্ডানিকা শর্মা বিশ্বাসঘাতকদের ভোট চাওয়ায় তাদের ধূর্ত শেয়াল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ওই বিশ্বাসঘাতক ও অরুনের হত্যাকারীদের মাথা চাই। এটা চুপ করে বসে থাকার সময় নয়। বাড়িতে অভিযান চালাও, বোরকা পর কিন্তু তাদের কোনঠাসা করো। একজনকে হত্যার বদলে দশজনকে হত্যা করো।’

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জেলা সেক্রেটারি অশোক লাভানিয়া বলেন, ‘আমার ভাইয়ের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। আমাদের যুবকরা প্রতিশোধ নেবে… আমরা হিন্দুরা যদি মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়ে থাকি, আমরা রক্তেই এর প্রতিশোধ নেব। এক ভাইকে হত্যার প্রতিশোধে দশ রাক্ষসকে হত্যা করা হবে।’

সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে জানিয়ে লাভানিয়া বলেন, কালিপূজার সময় রাক্ষসকে হত্যা পর মানুষের মাথা উৎসর্গ করা হয়। অরুনের তেহরাবিনের (শেষকৃত্যের পরের এক অনুষ্ঠান) আগেই হিন্দুরা একই ধরনের কাজ করবে। আমি আত্মবিশ্বাসী।’

বজরঙ্গ দলের জেলা সমন্বয়ক জগমোহন কাহার বলেন, ‘কেউ যদি আমাদের কোনও বস্তিবাসীকে বিরক্ত করে, আমরা তাদের পুরো বস্তিকে উচ্ছেদ করব। আপনারা (মুসলমান) যদি ভারতে থাকতে চান তাহলে রহিম ও রেহমানের মতো থাকেন। কিন্তু যদি আকবর ও বাবর হতে চান তাহলে আপনাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। আমরা রামের উত্তরসূরি। আমরা রাবনের উত্তরসূরিদের ধ্বংস করব।’

উল্লেখ্য, বিজেপি, আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতাদের দাবি অরুণ মাহাউর গরু রক্ষা করতে গিয়ে মুসলমানদের হামলায় নিহত হয়েছে।

তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত ৫ মুসলমান যুবক গরু হত্যা বা পাচারে জড়িত না। মাহাউরের সঙ্গে ৫ যুবকের ঝগড়ার পর হত্যার ঘটনা ঘটে।

মুসলমানদের ওপর হামলার দায়ে জেল খেটে মুক্তি পাওয়া বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জেলা সেক্রেটারি অশোক লাভানিয়া বলেন, ‘মাহাউরের আত্মত্যাগে মানুষের মাথা নত করা উচিত।’

উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক বলেন, ‘আপনাদের গুলি ছুঁড়তে হবে, হাতে রাইফেল তুলে নিতে হবে, ছুরি চালাতে হবে। নির্বাচন ২০১৭ সালে, কিন্তু এখন থেকেই আপনাদের শক্তি দেখাতে হবে।’

এ সময় উপস্থিত ৫ হাজার মানুষ স্লোগান দেন ‘যে হিন্দুর রক্ত গরম হয় না, সে সত্যিকার হিন্দু না’। কঠোর নিরাপত্তায় আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জয় ও বজরঙ্গ দলের নেতারা। বক্তব্যে সুরেন্দ্র প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন মুজাফফর নগরে কী ঘটেছে। আগ্রাকে মুজাফফর নগরে রূপান্তরিত করবেন না।’

রাম শংকর কাথেরিয়া বলেন, ‘আমাদের নিজেদের শক্তিশালী করে তুলতে হবে। আমাদের লড়াই শুরু করতে হবে। আমরা যদি লড়াই শুরু না করি তাহলে, আজ আমরা অরুনকে হারিয়েছি, কাল আরেকজনকে হারাব। আরেকজনকে হারানোর আগে আমাদের অবশ্যই নিজেদের শক্তি দেখাতে হবে যাতে খুনিরা পালিয়ে যায়।’

ছবি: the london post
ছবি: ভারতে মোদির প্রশাসনে গড়ে উঠা হিন্দুত্ববাদী আরএসএস নামক সংগঠনের সহিংস চিত্র – The London Post