বাড়তি মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের রেকর্ড

ঢাকা: মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, গেল অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন বেশি মাছ উৎপাদন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারি উদ্যোগ আর বেসরকারি বিনিয়োগেই এগিয়ে যাচ্ছে এই খাত। কৃষিখাতের উপখাত হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাছ চাষ। চাষীরা বাড়িয়েছেন পুকুরের পরিধি। পাশাপাশি বেড়েছে সৌখিন ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও। গত কয়েকবছরে কৃষক, ছাত্র বা বেকার তরুণদেরও হাতেখড়ি হয়েছে মাছ চাষে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।
গত তিন দশকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মাছ চাষে উৎপাদন ২৫ গুণ বেড়েছে এবং মাছচাষিরা তাদের উৎপাদিত মাছের ৭৫ শতাংশ এখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছেন। এই অভাবনীয় উন্নতিকে নীরব বিপ্লব হিসেবে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা। ই

ন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) সর্বশেষ সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) এর আগে তাদের এক প্রতিবেদন উল্লেখ করেছিল যে, মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ।

সরকার ২০১৯ সালের মধ্যে দেশকে মাছ চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ৪২ লাখ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আইএফপিআরআইয়ের ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশের ব্যক্তি চাহিদা ও পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে মাছ চাষের প্রচলিত ধারণা বদলে গেছে। ভোক্তারা এখন নিজের পুকুর থেকে মাছ খাওয়ার সঙ্গে বাজার থেকেও মাছ কিনছেন এবং এই হার অনেক বেড়েছে।

মাছের চাষ বৃদ্ধির ফলে শহর ও গ্রামের গরিব পরিবারগুলোর খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন এসেছে। চাল ছাড়াও তারা এখন মাছের মাধ্যমে পুষ্টির জোগান বাড়িয়েছে।

মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিকে নীরব বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করে সমীক্ষার প্রধান লেখক রিকার্ডো হারনান্ডেজ বলেন, আমি বিস্মিত হয়েছি যে, উৎপাদনের পাশাপাশি পল্লী ও শহরের মাছ ব্যবসায়ী, উপকরণ ও মাছের খাদ্য অনেক খাতে বেড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, খাদ্য তৈরির কারখানা, হ্যাচারি, চাষি ও ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মাছের খাবার ও রেণু কেনার হার বেড়ে চলছে। প্রতিষেধকের ব্যবহার, শ্রমিক নিয়োগ ও বিনিয়োগও বাড়ছে। সরকার এ অগ্রযাত্রায় মাছের রেণু উৎপাদনে বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও রাস্তাঘাট নির্মাণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, বাড়তি চাহিদা, প্রযুক্তির উন্নয়ন যোগাযোগ ও অবকাঠামো, লাখ লাখ পুকুর মালিক এবং ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়, আগে গ্রামের মাছচাষিরা মাছ বিক্রি করতেন প্রধানত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। কিন্তু এখন তারা তাদের উৎপাদিত মাছের দুই-তৃতীয়াংশ ছোট বড় শহরের আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করছে।