অবশেষে মুনতাসির মামুনদের ‘সংখ্যালঘু’ বোধদয়

সোস্যাল নেটওয়ার্ক থেকে: অবশেষে হিন্দুদের সম্পর্কে মুনতাসির মামুনের বোধোদয় হয়েছে। ‘সংখ্যালঘু’, ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এই টার্মগুলোর যে জন্মদাতা, অর্থাৎ সেই মুনতাসির মামুনও তার পজিশন থেকে সরে এসেছে। সে বুঝতে পেরেছে হিন্দু জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ২০ জুন ২০১৬, তারিখে বাংলাদেশে উগ্রহিন্দুত্ববাদের উত্থানের বিরুদ্ধে কলাম লিখেছে ‘দৈনিক জনকণ্ঠে’ । আসুন তার লেখার কিছু চৌম্বক অংশ পড়ি-

১) “এ প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছে আমার ছিল না, কিন্তু বাধ্য হয়ে লিখতে হচ্ছি। বিশেষ করে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক যখন প্ররোচনামূলক মিথ্যা বক্তব্য রাখেন তখন কিছু বলতেই হয়।”

২) “হিন্দু মহাজোট, হিন্দু সমাজ সংস্কারক সমিতি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের অনেক নেতাই বিভিন্নভাবে কথাবার্তা বলছেন। রানা দাশগুপ্ত নতুনভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার কথা বলেছি, রাস্তায় থেকেছি, তাদের অনেকের কাছে এ ঘটনাগুলো শুভবুদ্ধির পরিচায়ক বলে মনে হচ্ছে না। অন্তিমে তা হিন্দু সম্প্রদায়ের তো বটেই দেশেরও ক্ষতি হবে।”

৩) “হিন্দু মহিলারা বোরকা পরে চলাফেরা করেন, শাঁখা সিঁদুর মুছে ফেলা হয়েছে, পুজো হয় না। এগুলো সর্বৈব মিথ্যা কথা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা যদি এর জোরালো প্রতিবাদ না করেন তা’হলে বুঝতে হবে এই মিথ্যাচারের সঙ্গে তারাও যুক্ত। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের অবিলম্বে এর প্রতিবাদ জানান উচিত। না হলে, বুঝতে হবে নিজেদের উচ্চাকাক্সক্ষা মেটানোর জন্য তারা পরিকল্পনা করছেন। যদি সেটি করে থাকেন তবে নিশ্চিত তা বাস্তবায়িত হবে না। মুরুব্বি ধরে কোন লাভ হবে না। তিনি কিছুই করতে পারবেন না।”

৪) “ভারতের বিজেপি ঘোষণা করেছে, নির্যাতিত হয়ে ভারতে হিন্দুরা এলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এর পরপরই বাংলদেশ থেকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা দিল্লী যান এবং নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন গণ্যমান্য আমাকে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছেন, পরিষদের দু’একজন নেতা তাকে সফরসঙ্গী হতে বলেছিলেন। তিনি যাননি। যারা গিয়েছিলেন তাদের প্রায় সবাই আমাদের পরিচিত, ব্যক্তিগত বন্ধু, যদিও সফরটি একান্ত গোপনীয়তায় হয়েছে। আমাদের ঐ বন্ধু বললেন, ‘মোদির আমন্ত্রণে তাদের উল্লাস যদি দেখতেন! ব্যাপারটা আমার কাছে ভাল ঠেকেনি। মোদির কাছে আমরা কেন নালিশ করতে যাব?’ তাকে বলা হয়েছিল, মোদির সঙ্গে সাক্ষাত না করে তিনি ভুল করেছেন। গোবিন্দ প্রামাণিকের প্রেস কনফারেন্সের পর, তিনি আমাকে জানালেন, না গিয়ে তিনি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে টার্গেট কিলিং শুরু হয়। ‘হিন্দুরা ভয়ে দেশত্যাগ করছে’ এ রকম হিড়িক তোলা হয়, রানা দাশগুপ্তের বক্তব্য প্রকাশিত হয়।

৫) “পশ্চিমবঙ্গে গত নির্বাচনে বিজেপির ভোট বেড়েছে। এটি আরও বৃদ্ধি পাবে যদি এখান থেকে বড় সংখ্যক হিন্দু পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। এখন যেহেতু ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রশ্ন আসছে, অনেকেই তাতে সাড়া দেবেন। পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ আসা হিন্দু নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিজিপি লাভবান হবে। অসমে বাংলাদেশী [মুসলমান] খেদাও আন্দোলন করে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে যেটি কেউ সম্ভব বলে মনে করেননি।”

৬) “আমরা কে হিন্দু বা মুসলমান ধর্মাবলম্বী সেটি কখনও মনে করিনি, অন্তত আমার মনে কখনও আসেনি। আজ জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে দেখছি, এখন আমরা প্রত্যেকে একে অপরকে চিহ্নিত করছি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ হিসেবে। বাঙালী পরিচয়টি এখন গৌণ। আমার মনে হয়েছে, আমাদের অধিকাংশ একটি পর্যায় পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক। একটা পর্যায়ের পর ধর্ম বিষয়টি চলেই আসে। এটি অস্বীকার করতে পারেন গায়ের জোরে, কিন্তু এটিই বাস্তব।”

যাক হিন্দুদের কূটষড়যন্ত্র সম্পর্কে মুনতাসির মামুনের মত লোকের যখন বোধোদয় হওয়া শুরু করেছে, আশা করা যায় বাকিদেরও হবে।