মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা: ৩ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আসার আশঙ্কা

ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে বৌদ্ধদের যুলুম-নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়ের সন্ধানে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ১২ দিন আগে শুরু সহিংসতায় এরইমধ্যে পর্যন্ত ১ লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করা জাতিসংঘ কর্মীরা। এক পর্যায়ে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রধান দীপন ভট্টাচার্য। তারা ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা জানিয়েছে সে।
সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে সেনা মোতায়েন ও সেনা অবরোধ শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪ আগস্ট-২০১৭ ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে কথিত ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গা’দের হামলার নাটক সাজানো এবং রাতভর পুলিশ-সেনাসদস্য মিলে রহিঙ্গাদের উপর বর্বর হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় সেনাসূত্র। হামলার পর থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার হয়। আর অভিযান জোরদারের পর বাংলাদেশের সীমান্তে জোরালো হয় রোহিঙ্গা-স্রোত। সেনাদের নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে রেহাই পেতে গত দুই সপ্তাহে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা মনে করে যে, ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।
অনেকেই রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশে লাখের উপর রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে ছিলো। আরো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার আসায় স্বাভাবিকভাবেই ত্রাণ কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকেরেই মাথার উপর ছাদ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ত্রাণ সংস্থাগুলো খাবার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাতকারে দীপন বলেছে, ‘তারা প্রত্যেকেই অপুষ্টিতে ভুগছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা ঠিকমতো খেতে পারছে না। তাদের অনেকেই আহত কিংবা অসুস্থ।’
বর্মী যুলুম থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয়ের সন্ধানে আসতে তাদের অনেক ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। প্রথমে ফাঁকি দিতে হচ্ছে মিয়ানমারের হানাদার সীমান্ত বাহিনীকে। এরপর বিজিবি’কে। রয়টার্সের মতে, ২৫ আগস্ট-২০১৭ দমন সহিংসতা শুরু করার পর এখন পর্যন্ত দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের কেউ নদীপথে, কেউ সাগরপাড়ি দিয়ে কিংবা কেউ স্থল দিয়েই এসেছেন। অনেকেই পথেই প্রাণ হারিয়েছেন। কেউ পড়েছেন পাচারকারী চক্রের হাতে। কিন্তু সবারই লক্ষ্য ছিলো কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আসার।
দীপন ভট্টাচার্য বলেছে, শরণার্থীরা আগে শুধু নৌকায় আসতো। আর এখন অনেকগুলো পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে। ওই অঞ্চলে দায়িত্বপালন করা আরেকজন জাতিসংঘ কর্মী বলেছে, এটা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। মিয়ানমারে এখন সামরিক আগ্রাসন চলছে। ফলে অনেক রোহিঙ্গাই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসবে।
বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরতে না দিতে তৎপর মিয়ানমারের বর্মী বৌদ্ধ যালিমরা। বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তে মিয়ানমার ভূমিমাইন পুঁতে রাখছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতেই এই উদ্যোগ। রয়টার্স জানিয়েছে, সীমান্ত পরিস্থিতির সঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই সূত্রের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মাইন স্থাপনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এদিকে এ বিষয়ে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্টদূতকে তলব করে বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানা গেছে।