সুন্নী ইসলাম গ্রহণ করাই কি মুহাম্মদ আলী’র কাল হলো?
ঢাকা: কিংবদন্তী বক্সার মুহাম্মদ আলীর বর্ণিল জীবনে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ছিলো তার ধর্মবিশ্বাস। আধুনিক যুগের ইতিহাসে মুহাম্মদ আলীই সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি যিনি খ্রিষ্ট ধর্ম ত্যাগ করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
আলী ১৯৬৪ সালে তার খ্রিস্টান নাম ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে ত্যাগ করে মুহাম্মদ আলী নাম গ্রহণ করলে অনেকেই সেসময় ভ্রুকূটি করেছিলেন।
তিনি ২২ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। সে সময় তিনি বলেন ‘ইসলাম গ্রহণকারীদের তারা (অমুসলিমরা) বলে ‘ব্ল্যাক মুসলিম’। এটা মিডিয়ার তৈরি। এটি কোনো আইনসম্মত নাম নয়। কিন্তু ইসলাম একটি ধর্ম এবং সারা বিশ্বে ১৫০ কোটি মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী এবং আমিও তাদের একজন’।
সনি লিস্টনকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে তিনি তার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পান। এর দুই দিন পর বিশ্ব অবাক হয়ে আরেকটি খবর শুনল। লিস্টনকে হারানোর চেয়েও এটি ছিল চাঞ্চল্যকর।
খবরটি হলো তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং নতুন নাম নিয়েছেন মুহাম্মদ আলী। নতুন এক কিংবদন্তির জন্ম হলো। আলী তার ক্যাসিয়াস ক্লে নামকে অভিহিত করলেন, ‘দাসত্ব নাম’ হিসেবে। বিশ্বক্রীড়াঙ্গনে একটি স্থায়ী পরিবর্তনের সূচনা হলো এভাবেই।
প্রথমে তিনি এলিজা মুহাম্মদ ও ম্যালকম এক্সের নেতৃত্বাধীন কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ‘ন্যাশন অব ইসলামের’ সাথে জড়িয়ে ছিলেন। তবে পরবর্তীকালে তিনি তাদের সংশ্রব ত্যাগ করেন। তিনি পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করতে থাকেন সঠিক ইসলাম খোঁজার জন্য। অবশেষে তিনি ১৯৭৫ সালে সুন্নী ইসলামের অনুসারীতে পরিণত হন। সঠিক দ্বীন ইসলামের অনুসন্ধান করতে করতে একপর্যায়ে তিনি ২০০৫ সালে তিনি হযরত আওলিয়ায়ে কিরামগণের পথ পেয়ে যান। সম্পৃক্ত হন সুফীদের সাথে।
এই পথে আসার পরই বিভিন্ন দিক থেকে জটিলতার মুখোমুখি হন মুহম্মদ আলী।
১৯৮০ সালে রহস্যজনক ভাবে তার পারকিনসন রোগ ধরা পড়ে এবং প্রচার করা হয় বক্সিং খেলার কারণেই সে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এবং এতেই তার ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি ঘটে।
অনেকেই বলেছেন- বক্সিং খেলার কারণে নয় বরং সিআইএ পয়জন প্রবেশ করিয়ে মোহাম্মাদ আলীকে অসুস্থ করেছে। এরজন্য অবশ্য অনেকেই কারণ হিসেবে দাড় করান, যেহেতু তিনি ১৯৬৪ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ছিলেন, তাই বিশেষ ঔষধ প্রয়োগে তার ব্রেইনকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসের রোডস কলেজের ধর্ম শিক্ষা বিষয়ক প্রফেসর ইয়াসির কাদি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মার্কিন মুসলিমদের ওপর মুহাম্মদ আলীর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
কাদি লিখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার পেছনে আলীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম যুক্তরাষ্ট্র ও সারা বিশ্বের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন’।
তিনি আলীর ‘রাজনীতি সচেতনতা’ ও ‘সত্যের প্রতি অবিচল আস্থা’রও প্রশংসা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখতে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ মুহাম্মদ আলী। সম্প্রতি রিপাবলিকান দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য করলে মুহাম্মদ আলী ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন।
এর আগেও বিভিন্ন সময় ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য দানকারী ব্যক্তিদের সমালোচনা করেছিলেন এই মহান ব্যক্তি।
সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস