অস্বাভাবিক তাপমাত্রা: ১৫ বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হবে ২ ট্রিলিয়ন ডলার

ডেস্ক: তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আগামী ১৫ বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হবে ২ ট্রিলিয়ন (২ লাখ কোটি) ডলার। অত্যধিক গরমে মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণে এ ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়ার দেশগুলো। জাতিসংঘের এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। খবর ব্লুমবার্গ ও ওয়ার্ল্ড ফিন্যান্স।

তীব্র তাপদাহের কারণে বিশ্বের অন্তত ৪৩ দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হবে। এর ফলে দেশগুলোর জিডিপি হ্রাস পাবে। ২০৩০ সাল নাগাদ চীনের জিডিপি ১ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ার জিডিপি ৬ শতাংশ হ্রাস পাবে।

সার্বিকভাবে এশীয় দেশগুলোকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের আর্থিক ক্ষতি বেশি পোহাতে হবে। ভারতের অর্থনীতির বার্ষিক ক্ষতি হবে ৩৪ হাজার কোটি ডলার। একইভাবে থাইল্যান্ডের ক্ষতি হবে প্রতি বছর ১১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া উভয় দেশের ক্ষতি হবে ১৮ হাজার ৮০০ ডলার করে।

অত্যধিক গরমের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর বার্ষিক কর্মঘণ্টা এরই মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে। জলবায়ু রূপান্তর ব্যাপকতর হতে থাকলে কর্মঘণ্টা হ্রাসের পরিমাণ ২০৫০ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হতে পারে।

মানবস্বাস্থ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কুয়ালালামপুরস্থ ইউনাইটেড ন্যাশনস ইউনিভার্সিটি (ইউএনইউ) ছয়টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে একটি প্রবন্ধ মঙ্গলবার এশিয়া-প্যাসিফিক জার্নাল অব পাবলিক হেলথে প্রকাশ হয়।

ইউএনইউর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের ডিরেক্টর অ্যান্থনি ক্যাপন বলেন, বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যে কষ্টার্জিত অগ্রগতি হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা হুমকির মুখে পড়েছে।

ইউএনইউর গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, তীব্র গরমে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর উত্পাদনশীলতা বেশি হ্রাস পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে দায় কম হলেও ভোগান্তি বেশি পোহাতে হবে এসব দেশকে। ধনী দেশগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট ক্ষতির বেশির ভাগই এড়িয়ে যাবে। তবে ধনী দেশ হলেও নরওয়ে, সুইডেন ও রাশিয়ায় শীত মৌসুমে তাপমাত্রা অত্যধিক হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদনশীলতাও কমবে।

১৯৮০-২০১২ সময়কালে সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২১ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এ সময় বন্যা, ভূমিধস, দাবদাহ, খরা, ঝড়, দাবানলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে ২১ হাজার। এসব দুর্যোগে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। জার্মানির বর্তমান জিডিপির চেয়ে বেশি ছিল এ ক্ষতি।

এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক ক্লাইমেট চেঞ্জ শীর্ষক আরেকটি গবেষণায় ইউএনইউ জানিয়েছে, ১৯৯৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দুই দশকে এ অঞ্চলে চরম আবহাওয়াজনিত বিভিন্ন ঘটনায় মানুষের ক্রয় সক্ষমতা (পিপিপি) হ্রাসের পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি ডলার।

নিউজিল্যান্ডভিত্তিক হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্টের পরিচালক টর্ড জেলস্ট্রম বলেন, তাপমাত্রা বেশি হলে কেউই আগের মতো কাজের গতি ও তীব্রতা ধরে রাখতে পারে না। এ কারণে শ্রমঘন শিল্প-কারখানায় কাজের গতি কমবে ও বিশ্রামের পরিমাণ বাড়বে।

টর্ড জেলস্ট্রম আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার সামর্থ্য ধনী দেশগুলোর থাকলেও এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর ক্ষতি স্বীকার করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ২০৩০ সাল নাগাদ ভারত ও চীনে জিডিপি হ্রাসের পরিমাণ হবে ৪৫ হাজার কোটি ডলার। শ্রমঘন শিল্প-কারখানায় কাজের পালা ও কর্মঘণ্টা পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ক্ষতি হ্রাস করা যেতে পারে। নতুন কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে কীভাবে কম বিদ্যুত্ ও শক্তি ব্যয়ে কর্মস্থলে তাপমাত্রা কমানো যায়।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষি ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের মতো কম মজুরি ও স্বল্প দক্ষতার কারখানায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ হ্রাস পাবে। এর ফলে প্রকারান্তরে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য বাড়বে।

জাতিসংঘের গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জের ধরে

অফিস-বাড়ি-শপিংমলে এয়ারকন্ডিশনিংয়ের চাহিদা বাড়লে দরিদ্র দেশগুলোর বিদ্যুত্ সরবরাহ ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি হবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে ব্যাংককের সমান আয়তনের একটি শহরে অতিরিক্ত ২ গিগাওয়াট বিদ্যুত্ চাহিদা সৃষ্টি হবে।

গবেষণা প্রবন্ধ ইউএনইউর অ্যান্থনি ক্যাপন বলেন, নগর উন্নয়নের ধরন সম্পর্কে আমাদের আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। জনস্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়ন নাকি অর্থনৈতিক অগ্রগতি— আগামী দিনগুলোয় কোন বিবেচনাটি প্রাধান্য পাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। – বণিক বার্তা