জননেতা ওয়ানি হত্যায় অগ্নিগর্ভ কাশ্মীর, গুলিতে নিহত ১১

ডেস্ক: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে স্বাধীন করার নেতৃত্বে শীর্ষস্থানীয় বিদ্রোহী নেতা বুরহান মুজাফফর ওয়ানিকে হত্যা করা হয়েছে। ২২ বছর বয়সী এ তরুণের ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’কে কেন্দ্র করে শনিবার ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা।

এ দিন বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায়, নিরাপত্তারক্ষীদের লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছুড়তে থাকে। শ্রীনগর ও দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ সময় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় অন্তত ১১ জনের। ৯৪ পুলিশসহ আহত হন অন্তত ২০০ জন। কুলগানের বিজেপি অফিসেও হামলা চালায় জনতা।

এ অবস্থায় দক্ষিণ কাশ্মীরের কিছু এলাকা ও শ্রীনগরের একটি বিশাল অংশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

কাশ্মীর নেতা বুরহান ওয়ানী
ছবি: তরুণ জননেতা বুরহান ওয়ানির মরদেহ
তরুণ জনপ্রিয় নেতা বুরহানের মৃত্যুতে শুক্রবার থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিল শ্রীনগর ও দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা। শনিবার তা আছড়ে পড়ে নিরাপত্তারক্ষীদের উপর।  কারফিউ উপেক্ষা করেই বুরহানের মরদেহ নিয়ে রাস্তায় নামেন ৫০ হাজার বাসিন্দা। তরুণদেরকে তিনি দলে দলে দখলদার ভারতের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে উদ্দীপ্ত করেছিলেন।

এলাকাবাসী বলছেন, বুরহানকে ভারতের নিরাপত্তা গ্রেপ্তারের কোনো চেষ্টা করেনি। তার গ্রাম অবরুদ্ধে করে তাকে গুলি করে হত্যা করেছে যা ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

ব্যাপক বিক্ষোভের আশঙ্কায় বুরহানের এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়। তা সত্ত্বেও শনিবারে বিক্ষোভকে ‘আমার দেখা বৃহত্তম’ বিক্ষোভ বলে মন্তব্য করেছে স্থানীয় সাংবাদিক শামস ইরফান।

পুলিশ বুরহানের গ্রামের যাওয়ার সব পথ রেজার ওয়্যার ও ইস্পাতের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয় এবং জনগণকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করে। তা সত্ত্বেও জনতার স্রোত থামানো যায়নি।

বুরহানের বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। অথচ গত ৫ বছর তিনি কাশ্মীরের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

ছবি: বুরহান ওয়ানি (ডানে)

তরুণ কাশ্মীরিদের প্রতিরোধ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি ফেসবুকের মত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতেন।

স্থানীয়রা বলছেন, তিনি কোনো আদর্শিক কারণ থেকে ভারত বিরোধী বিদ্রোহে যোগ দেননি। তাকে রাজপথে নাজেহাল করেছে ভারতীয় বাহিনী, তার ভাইকে নির্যাতন করেছে। ভারত সরকারের এমন আচরণের কারণে ক্ষোভ থেকে বিদ্রোহে সামিল হন তিনি।

তাকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বলা হলেও তিনি শান্তির পক্ষের লোক ছিলেন। তিনি হিন্দুদের অভয় দিয়েছিলেন তাদের তীর্থযাত্রায় কোনো হামলা হবে না।

হিজবুল মুজাহিদীনের নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুক্রবারেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় শ্রীনগর এবং দক্ষিণ কাশ্মীরের বেশ কিছু এলাকা। ওয়ানির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ সামিল হন। শ্রীনগর-অনন্তনাগ জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে দফায় দফায় গণ্ডগোল হয় তাদের।

পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন আঁচ পেয়েই রাজ্য প্রশাসন শ্রীনগর ও দক্ষিণ কাশ্মীরের বেশ কিছু জায়গায় কারফিউ জারি করে। রাজ্যের উত্তেজনা প্রবণ জায়গাগুলিতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থগিত করে দেওয়া হয় অমরনাথ যাত্রা।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে জম্মুর ভগবতী নগর যাত্রী নিবাস থেকে অমরনাথ যাত্রার জন্য পূণ্যার্থীদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বারামুলা থেকে বানিহাল পর্যন্ত রেল পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বুরহানের মৃত্যুর প্রতিবাদে হুরিয়ত চেয়ারম্যান সৈয়দ আলি গিলানি এবং জেকেএলএফ চেয়ারম্যান ইয়াসিন মালিক শনিবার হরতালের ডাক দিয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভূস্বর্গ যেন ফের উত্তপ্ত না হয়, সে কারণে হুরিয়তের একাধিক শীর্ষ নেতাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এ দিন সকালে টুইট করেন, ‘এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে বড় ঘটনা। উপত্যকায় কয়েক দিন উত্তেজনা থাকবে। বুরহানই বন্দুকের শিকার প্রথম নয়, আবার শেষও নয়।’

শুক্রবার সেনা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বুমডুরা গ্রামে কাশ্মীরে হিজবুলের ‘পোস্টার বয়’ বুরহান ওয়ানিসহ তিনজনকে হত্যা করে।

স্কুল শিক্ষকের ছেলে বুরহান কাশ্মীরের একজন হাই প্রোফাইল হিজবুল নেতা ছিলেন।

 

গত মাসে তার এক সহযোগী তারিক পণ্ডিত পুলওয়ামাতে আত্মসমর্পণ করার পরেই ওয়ানির নেটওয়ার্ক একটু দুর্বল হয়ে পড়ে। তারিককে কাজে লাগিয়ে বুরহানের গতিবিধির উপর নজর রাখতে শুরু করেছিল পুলিশ। ২০১৪-য় সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্দুক হাতে বুরহানসহ বেশ কয়েক জন কাশ্মীরি যুবককে দেখা গিয়েছিল। তারিকও তাদের মধ্যে একজন ছিল।

সূত্র: আলজাজিরা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি