আরোপিত ভ্যাট জনগণের উপর চাপ সৃষ্টি করবে
ঢাকা: জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে যেভাবে ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে তা জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা। শনিবার বাংলা ট্রিবিউন আয়োজিত ‘কেমন বাজেট পেলাম’ শীর্ষক বৈঠকিতে এমন মন্তব্য করেন তারা। আলোচকরা বলেন, সরকারকে সারা বছরই ব্যস্ত থাকতে হবে ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়াকে সচল রাখার কাজে। বাকি কাজ করবে কখন? রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত বাংলা ট্রিবিউন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকি সরাসরি সম্প্রচার করে বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভি।
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন, এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী, বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা সমিতির সাবেক সভাপতি নাসরিন আওয়াল মিন্টু, বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল ও দৈনিক প্রথম আলোর বিজনেস এডিটর শওকত হোসেন মাসুম।
বৈঠকিতে মির্জ্জা আজিজ বলেন, সরকার রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ভ্যাটকে প্রাধান্য দিয়েছে, তাই ভ্যাট আদায়ে সরকারকে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে। তিনি বলেন, আয়কর দাতার সংখ্যা না বাড়িয়ে ভ্যাটের ওপর ভরসা করে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র অর্জন সরকারকে অনেকটাই চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। তিনি বলেন, যেকোনও ধরনের পরোক্ষ কর অসমতা বাড়ায়।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা প্যাকেজ ভ্যাট চেয়েছি তবে বাজেটে যে প্যাকেজ ভ্যাট দেওয়া হয়েছে তেমনটি নয়। শতভাগ প্যাকেজ ভ্যাট বাড়ানোর কোনও যুক্তি খুঁজে পাই না।
তবে এবারের বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করেননি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী। বাংলাদেশের জিডিপি’র যে আকার তাতে বাজেট আরও বড় হতে পারতো। ছোট স্বপ্ন দেখলে আমাদের দেশের জন্য ছোট স্বপ্নই নিয়ে আসবে। আমি এ বাজেটে খুশি, কারণ এ বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুই লাখ তিন হাজার কোটি টাকা আমরা রেভিনিউ আয় করবো। করের মধ্য দিয়ে সেখানে ট্যাক্সনেট বাড়ানোর কথা হয়নি। যেসব ব্যবসায়ীরা কর দিচ্ছেন তাদের ওপরই চাপ বাড়বে। সুশাসন নিশ্চিত না হলে বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, বাজেট ভীষণভাবে ট্যাক্সনির্ভর, এনবিআর ৩৫ শতাংশ ট্যাক্স আদায় করবে। সেটা সম্ভব কিনা এটা চ্যালেঞ্জ। কারণ আয়কর সীমা বাড়ানো হয়নি। আর ভ্যাট যখনই প্রয়োগ হবে সেটার চাপ সরাসরি ভোক্তার ওপর পরবে। রিকশা চালিয়ে একজন চালক যখন ফুটপাথের দোকান থেকে রুটি কিনে খাবেন তাকেও ভ্যাট দিয়েই খেতে হবে। সেটা নাগরিকদের জন্য সুখবর নয়। করপোরেট ট্যাক্সের ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি বলেও জানান তিনি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যাট আদায় করতে সরকারের দিক থেকে প্রস্তুতি জরুরি। সাতটি পয়েন্টে একমত হয়েছিলেন ব্যবসায়ী ও এনবিআর- সেটার যৌক্তিকতা আছে। বিষয়টিকে আমলে রাখতে হবে। আগামী ২০১৭ সালের জুলাই থেকে যখন নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে তখন যদি অস্বচ্ছতার সৃষ্টি হয় তাহলে এই বাজেটেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন যত হবে তত ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কম পড়বে। এক্ষেত্রে অনলাইন ভ্যাট সাবমিশনের সুযোগ বাড়াতে হবে।
দৈনিক প্রথম আলোর বিজনেস এডিটর শওকত হোসেন মাসুম মনে করেন, সংসদে উপস্থাপিত বাজেটটি বিনিয়োগ নির্ভর নয় বরং বাজেটটি কর নির্ভর হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়ন কিভাবে করবেন বা কোন কৌশলে করবেন সেটার উত্তর পাওয়া যায়নি।